চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

জগদীপ ধনকড়ের আস্তিনে সম্ভবত বড় একটি ‘স্বপ্নের তাস’ লুকানো আছে৷ ওই তাস’ই স্টেরয়েডের মতো কাজ করছে৷ আর সেই গরমেই তিনি ক্লান্তিহীনভাবে এই ডাল-সেই ডাল করে বেড়াচ্ছেন৷

দিল্লি থেকে ফিরেই ‘বিশেষ কোনও মহলের’ নির্দেশে সোমবার ফের উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন৷ এই মুহুর্তে শিরোনামে আসা কাশ্মীরের রাজ্যপালও ধনকড়ের মতো এত ব্যস্ত নন৷ কিসের এত ব্যস্ততা? ‘চোলি কি পিছে কেয়া হ্যায়?’

বঙ্গ-বিজেপির ‘ডি-ফ্যাক্টো’ সভাপতি জগদীপ ধনকড় ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য ছিলেন। বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং প্রতিষ্ঠিত জনতা দলের টিকিটে তিনি রাজস্থানের ঝুনঝুনু কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন৷ চন্দ্রশেখর দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৯০ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ২১ জুন পর্যন্ত। তখনই ৭ মাস ১১দিনের জন্য কেন্দ্রের উপমন্ত্রী হন ধনকড়৷ ২০১৯ সালের ২০ জুলাই এই ধনকড়কেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হয়৷ এই পদে তিনি শপথ নেন ওই বছরেরই ৩০ জুলাই৷

রাজ্যপালের মতো সাংবিধানিক পদে থাকলেও দিল্লি ও বাংলার শীর্ষ গেরুয়া নেতাদের মতো ধনকড়ও ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলেন, একুশের ভোটে বাংলার ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি৷ প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্যও তিনি করেছিলেন৷ তবে গেরুয়া নেতাদের গর্জনের সঙ্গে ‘আসন-বর্ষণ’-এর তালমিল হয়নি৷ ফলে ভেঙে পড়েন ধনকড়৷ ‘স্বপ্ন’ প্রায় বিলীন হওয়ার মুখে৷ স্বপ্ন টিঁকিয়ে রাখতে অন্য স্কিম নিয়ে নেমে পড়লেন৷

সাধারণভাবে কোনও রাজ্যপালই নিজের সিদ্ধান্তে চলতে পারেন না৷ তাঁকে সংবিধান মানতে হয়, রাষ্ট্রপতির নির্দেশ মানতে হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চলতে হয়৷ কোনও রাজ্যপালকে যদি দেখা যায়, স্বাভাবিক ছন্দে কাজ করার পরিবর্তে অতি সক্রিয়তা প্রদর্শন করছেন, তাহলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই তিন পক্ষের কোনও এক পক্ষ অথবা তিনপক্ষই ওই রাজ্যপালকে অতি-সক্রিয় হতে নির্দেশ বা সবুজ সংকেত দিয়েছে৷ ধনকড়ের অতি সক্রিয়তার ক্ষেত্রে এমন ধারনা তৈরি হওয়া অবাস্তব কিছু নয়৷

বাংলা থেকে উত্তরবঙ্গকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা৷ এই দাবি ওই সাংসদ নিজস্ব সিদ্ধান্তে করেছেন, এমন হতেই পারেনা৷ তাই যদি হতো, তাহলে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এতদিনে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করতো৷ রাজ্য বিজেপির নেতারা দায় এড়িয়ে শুধু বলছেন, ‘এটা বিজেপির কথা নয়, ওই সাংসদ নিজের কথা বলেছেন৷’ রাজ্য ভাগ করার মতো দাবি তুলেছেন দলের এক সাংসদ, আর গোটা দল তা ‘এনজয়’ করছে, এমন ছবি কেন স্পষ্ট হচ্ছে ? বিজেপি-শাসিত কোনও রাজ্যে বিরোধী পক্ষের কোনও সাংসদ সেই রাজ্য ভাগের দাবি তুললে তো তাঁর গায়ে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা সাঁটিয়ে এতক্ষণে ফাটকে পুরতো সরকার৷ আর এখানে কী হচ্ছে ? যখন উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার ধুয়ো তোলা হচ্ছে, এই আওয়াজ ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, পক্ষে-বিপক্ষে বাকযুদ্ধ চলছে, যে কোনও মুহুর্তে সাংসদের এই আওয়াজ উত্তরবঙ্গকে অগ্নিগর্ভ করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তখনই রাজ্যপাল জানালেন, তিনি উত্তরবঙ্গ যাবেন৷ দুই আর দুই-এ চার-এর অঙ্ক এটা নয়৷ ‘বিশেষ’ নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েই এই সফর, রাজনৈতিক মহলে এমনই কিছু গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠছেই, এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ ধনকড়ের এই ‘মিশন-উত্তরবঙ্গ’ কেন?

কেন এত দৌড়ঝাঁপ করছেন ধনকড়? এমন প্রশ্ন এখন বড় ভাবেই দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷ অনেকের মতে, বাংলায় রাষ্ট্রপতি-শাসন জারি করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে চান ধনকড়৷ এটাই তাঁর স্বপ্ন৷ প্রশাসনিক ক্ষমতা বলতে জীবনে একবারই ৭ মাস ১১ দিনের জন্য মন্ত্রী হয়েছিলেন৷ একটা খিদে রয়ে গিয়েছে৷ আমন্ত্রিত হয়ে গট গট করে সামনে দরজা দিয়ে ঢুকে নেমন্তন্ন খাওয়ার সুযোগ এ জীবনে আর পাবেন কি’না সন্দেহ৷ তাই খিদে মেটাতে বাড়ির পিছনের পাঁচিল টপকে জানালা দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে ভালোমন্দ খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে ওনার৷ তাই এতো উচাটন চিত্তে ডিউটি করছেন তিনি৷

এই ব্যাখ্যা উড়িয়ে দেওয়া যায়না ঠিকই, তবে ‘এইটুকু’-র জন্য এই বয়সে এত খাটা-খাটনি তিনি করছেন বলে মনে হয়না৷ ধনকড়ের স্বপ্ন আরও চওড়া বলেই মনে হয়৷

রামনাথ কোবিন্দ দেশের ১৪-তম রাষ্ট্রপতি’র দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই৷ তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২২-এর জুলাই-এ৷ মাত্র বছরখানেক পর৷ রাজনীতিতে ‘অখ্যাত’ রামনাথ কোবিন্দকে যদি বিজেপি’র শীর্ষমহল রাষ্ট্রপতি পদে আনতে পারে, তাহলে ধনকড় সাহেবও এই চান্স নিতে পারেন৷

আর যদি উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুকে রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি নিজেদের ক্যাণ্ডিডেট করে, তাহলে উপ- রাষ্ট্রপতি পদেও আপত্তি নেই ধনকড়ের৷ বেঙ্কাইয়ার মেয়াদ শেষ হবে ২০২২- এর ১০ আগস্ট৷ তাহলেও বেশি সময় নেই ওনার হাতে৷

এখনও যদি শাসক দলের কথায় ধনকড়সাহেব ওঠাবসা না করেন, তাহলে রাইসিনা পাহাড়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হবে কীভাবে ?

কে জানে, চোলির পিছনে এমন তাস -ই পুঁটুলিতে রেখেছেন কি’না !!

আরও পড়ুন- সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে না গণটিকাকরণ, জানিয়ে দিল রাজ্য

 

Previous articleফাদার্স ডে: বাবার সঙ্গে কাটানো পুরনো স্মৃতিতে ভাসলেন মিমি
Next articleজনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ২ সন্তান নীতি, উত্তরপ্রদেশে কড়া আইনের পথে যোগী সরকার