Monday, August 25, 2025

জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর ‌যজ্ঞপ্রভাবে প্রভু জগন্নাথ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসাবে পালন করার নির্দেশ দেন স্বয়ং মনুই। সেই জন্মদিন উপলক্ষেই এই বিশেষ স্নান উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার একশো আটটি কলস ভর্তি সুশীতল জলে মহাস্নান হয়ে থাকে। কথিত আছে সমস্ত দেবদেবীরা যাতে জগন্নাথ দেবের এই স্নানযাত্রা ভালভাবে দেখতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্না‌নযাত্রাকালে স্নানবেদির চারদিকে রত্মশোভিত চাঁদোয়া ও আবরণবস্ত্র দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিতেন। পরবর্তীকালে স্নানবেদি জীর্ণ হয়ে পড়লে তা নতুন করে নির্মাণ করেন শ্রীঅনঙ্গভীম দেব।

স্নান‌যাত্রার দিন চন্দন, আতর সহ বিভিন্ন সুগন্ধি দিয়ে পবিত্র জল এনে রাখা হয় স্নানবেদিতে। সুগন্ধি ধূপ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয় স্নানমঞ্চ। তারপর মন্দিরের দক্ষিণ কূপ থেকে স্নানের জল আনেন প্রভু জগন্নাথের সেবকরা। সেই জল সুগন্ধ দ্রব্যে সুবাসিত করে ‘পাবমানী’ মন্ত্রে সোনার কলস পরিপূর্ণ ও অধিবাস করেন গর্ভমন্দিরে। এবার শুরু হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে স্নানমঞ্চে নিয়ে আসার প্রস্তুতি। সুন্দর পট্টবস্ত্র দিয়ে ঢেকে জগন্নাথদেব সহ বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে আসা হয় স্নানমঞ্চে। স্নানমঞ্চে নিয়ে আসার সময় চামর ও তালপাতা দিয়ে তিন দেবতাকে বাতাস করা হয়।

সকলে যাতে স্নানের অনুষ্ঠান ‌দর্শন ‌করতে পারেন সেজন্য পুরী মন্দিরে একটি উঁচু বেদী করা হয়েছে। যাতে পুরীর প্রশস্ত রাজপথ ‘বড়দাণ্ড’ থেকেও সকলে প্রভুর স্নানযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে পারেন।

অবশেষে মহা সমারোহে ভোরবেলা ব্রহ্মার সঙ্গে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নান সম্পূর্ণ করা হয়। স্নানের পর জগন্নাথ ও বলরামের হাতিবেশ বা গণেশবেশ হয়ে থাকে। স্বয়ং জগন্নাথদেব মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহাস্নানের পর তাঁর অঙ্গরাগবিহীন রূপ যেন কেউ না দেখেন। তাই স্নানযাত্রার পর থেকে ১৫ দিন পুরীর মন্দিরের দরজা সাধারণের জন্য বন্ধ থাকে। কথিত আছে এসময়ে স্নানের পর জগন্নাথদেবের জ্বর হয়। জ্বর সারাতে দয়িতা-পতিরা ওষুধ পথ্য অর্থাৎ মিষ্টি রসের পানা বিশেষ পাচন ও নানা ধরণের মিষ্টান্ন ভোগ দেন। এসময়ে মন্দিরে জগমোহনের পাশে ‘নিরোধনগৃহে’ অবস্থান করেন জগন্নাথদেব। এরপর যখন নবমূর্তিতে জগন্নাথদেব নানা বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে দর্শন দেন তখন সেই উৎসবকে বলা হয় নেত্রোৎসব বা নবযৌবন উৎসব। জগন্নাথদেবের এই মহিমা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।

 

Related articles

চাঞ্চল্যকর ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরে! প্রতিশোধ নিতে শিক্ষকের হাতের কব্জি কেটে নিল যুবক

রোমহর্ষক ঘটনা! প্রতিশোধ নিতে শিক্ষকের হাতের কব্জি কেটে নিল যুবক। ঘটনার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর...

একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস! মঙ্গলে জেলা সফরে বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী

আগামিকাল, মঙ্গলবার বর্ধমানে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা সফর ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে...

বিদ্যাপতি সেতুর সংস্কার শুরু, ধাপে ধাপে সরানো হবে দোকান

শিয়ালদহ ফ্লাইওভার বা বিদ্যাপতি সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করতে চলেছে কেএমডিএ। তার আগে সেতুর নীচে গড়ে ওঠা দোকানগুলিকে...

দার্জিলিংয়ে প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, তাকদায় সূচনা নতুন দিগন্তের

চলতি সপ্তাহেই নতুন দিগন্ত খুলতে চলেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। প্রথমবারের জন্য পাহাড় পাচ্ছে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে...
Exit mobile version