আসল পুলিশ কর্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই , দর্শকের হৃদয়ে ‘অভিমন্যু’

ছোটপর্দায় ‘দেশের মাটি’ ধারাবাহিকের পুলিশ অফিসার ‘অভিমুন্য’ চরিত্রটি রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে দর্শক-মনে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, যিনি এই চরিত্রে অভিনয় করছেন সেই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় আদতে উত্তর ২৪ পরগনা বারাসাতের ডিআইজি। আসলে এই ধারাবাহিকে বাস্তব আর পর্দার চরিত্র মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে অভিনেতার অভিনয় দক্ষতায়।
তবে অভিনয় এই প্রথম করছেন না তিনি। মঞ্চে, থিয়েটারে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন বহু বছর। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তাঁকে দেখা গিয়েছে। তবে সিরিয়ালে এই প্রথম তার আবির্ভাব। তাঁর অভিনীত শর্ট ফিল্ম ‘নোটিফিকেশন’ আন্তর্জাতিক উৎসবেও মনোনীত হয়েছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করলেও সিরিয়ালের অভিনয়টা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং বলেই মনেকরছেন প্রসূনবাবু।

তিনি বলছেন, যারা ছোটপর্দায় অভিনয়টা খুব সহজ মনে করেন তাদের ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ , খুব কম জায়গার মধ্যে একটা চরিত্রকে মুভ করতে হয়। ফলে প্রত্যেকটি ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন ক্লোজ আপে টাইট ফ্রেমে ধরা হয়। তাই অন্য মাধ্যমের চেয়েও অনেক বেশি কঠিন ছোট পর্দায় অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো। আমিও অভিনয়ের এই চ্যালেঞ্জটা বেশ এনজয় করছি।

স্টার জলসায় এই ধারাবাহিকের ‘রেটিং’ বেশ উপরের দিকে। বাস্তবে অভিনেতা পুলিশের আশপাশের মানুষের প্রশংসা বেশ উপভোগ করছেন প্রসূনবাবু । তার কথায়, কিছুদিন আগে কোভিড পরিস্থিতিতে কাজের সূত্রে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম । সর্বক্ষণ মাস্ক পড়ে থাকলেও, ক্যান্টিনে খাবার সময় শুধু মাস্ক খুলেছি। তারই মধ্যে এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি দেশের মাটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন না ? আমি হ্যাঁ বলতেই উনি বললেন, আপনার অভিনয় খুব ভালো লাগে। আদতে আমার আসল পেশা কী সেটা উনি জানতেন না। তখন মনে হচ্ছিল অভিনেতা হিসেবে আমি বাস্তবের চরিত্রটি সঠিকভাবে নিশ্চয়ই ছোট পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।
রেস্তোরাঁয় গিয়েও লক্ষ্য করেছি পাশের টেবিলে আমাকে নিয়েই আলোচনা চলছে। ‘দেশের মাটি’র ‘অভিমন্যু’ চরিত্রটি তখন সেই টেবিলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে ।এমনকি সুদূর টেক্সাস থেকে যখন এক বৃদ্ধ ‘অভিমন্যু’ চরিত্রটির জন্য প্রশংসায় ভরিয়ে দিন এবং দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখন অভিনেতা হিসেবে ভালো লাগে বৈকি।

তাঁর প্রিয় অভিনেতা ওম পুরীর মতো তিনি অভিনয় না করে একটি চরিত্র হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান । রিল এবং রিয়েল লাইফের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটা বেশ ভালোই উপভোগ করেন ডিআইজি সাহেব। না হলে একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার হয়েও অভিমন্যু চরিত্রটির চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছেন এবং একবারও সেই চরিত্রটির মধ্যে তার ব্যক্তিগত পেশার ছায়া পড়তে দেননি ।এখানেই তার সাফল্যের চাবিকাঠি।

আইপিএস অফিসারের ব্যস্ততা এবং অভিনয় এই দু’টোকেই ব্যালেন্স করতে জানেন প্রসূন। কিন্তু পেশার এই ব্যস্ততার মধ্যেও কীভাবে সময় ম্যানেজ করেন ? তার উত্তর কিন্তু তিনি দিয়েছেন সরাসরি। তাঁর কথায়, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় । এর আগেও শত ব্যস্ততার মধ্যেও রাত জেগে থিয়েটারের রিহার্সাল করেছি আমি। আমার ক্রিয়েটিভ সত্তাটাকে কখনও হারিয়ে যেতে দিতে পারি না । তবে একথাও ঠিক যে প্রযোজক, পরিচালকরা আমার ব্যস্ততার কথা মাথায় রেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাতের দিকে শুটিং রাখেন। এজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ । তাঁর প্রিয় পরিচালকের তালিকায় আছে ঋত্বিক ঘটক, গোবিন্দ নিহালনি, ফেলিনি, পোলানস্কি । অফবিট প্যারালাল সিনেমা তাঁর খুব পছন্দের । তিনি যেমন ভালোবাসেন তার খাকি উর্দিকে। সবসময় মর্যাদা দেন তাঁর পেশাকে। তেমনি অভিনয়ের মাধ্যমেই নিখুঁত দক্ষতায় তার ক্রিয়েটিভ সত্তার বহিঃপ্রকাশ করে ‘অভিমন্যু’ আজ মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে পেরেছেন। এখানেই ডিআইজি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য একাকার হয়ে গিয়েছে বাস্তব ও পর্দার মধ্যে দিয়ে।

 

Previous articleগোয়েন্দাদের স্ক্যানারে এবার ভুয়ো IAS দেবাঞ্জনের সঙ্গিনী
Next articleবাড়ির অমতে বিয়ে, দিল্লিতে দম্পতিকে গুলি করল দুষ্কৃতীরা