ত্রিপুরা: দল বদলের গুঞ্জনের মাঝেই আচমকা দিল্লি সফর মুকুল ঘনিষ্ঠ সুদীপের

বাংলায় তৃতীয়বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মা-মাটি-মানুষ সরকার প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরই পাশের আরেক বাঙালি রাজ্য ত্রিপুরাতে (Tripura) রাজনৈতিক খেলা শুরুর আভাস। বিজেপি (BJP) শাসিত ত্রিপুরায় খুব একটা স্বস্তিতে নেই গেরুয়া শিবির। ২০১৮ রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর মুখ্যমন্ত্রী করা হয় আনকোরা বিপ্লব দেবকে (Biplab Dev)। আর তখন থেকেই দলের মধ্যে কোণঠাসা রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা সুদীপ রায় বর্মন (Sudip Roy Barman)। তিনি ত্রিপুরার শাসক দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলেই পরিচিতি। সিনিয়ার পলিটিশিয়ান হয়েও বিপ্লব দেবের মন্ত্রিসভায় নেই সুদীপবাবু। এমনকি, দলের কোনও সাংগঠনিক পদের দায়িত্বে নেই তিনি।

এদিকে, বাংলায় তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসার পর মুকুল রায় (Mukul Roy) গেরুয়া শিবির ছেড়ে ঘরে ফিরেছেন। আর মুকুলের তৃণমূলের (TMC) ফিরে আসার পর থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ ত্রিপুরার বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা সুদীপ রায় বর্মনকে নিয়ে দুই রাজ্যে জোর চর্চা শুরু হয়। ত্রিপুরা বিজেপিতে “বেসুরো” সুদীপ আগরতলায় দলীয় বিধায়ক হলেও করোনা মহামারি আবহে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জনগণের পরিষেবা দিচ্ছেন। অসহায় মানুষের হাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তুলে দিচ্ছেন একেবারে নিজের উদ্যোগে।

এমত অবস্থায় মুকুলের “ঘর ওপায়সির” পর রাজনৈতিক মহলে মনে করছে ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার বিজেপির ঘর ভেঙে তৃণমূলে ফিরতে পারেন সুদীপ রায় বর্মন ও তাঁর অনুগামীরা। এবং বেশকিছু বিধায়কও ভাঙিয়ে আনতে পারেন তিনি।

কিন্তু এই জল্পনায় মাঝেই হঠাৎ দিল্লিতে ত্রিপুরা বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতা সুদীপ রায়বর্মন। যা রাজনৈতিক ভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও তিনি দিল্লি গিয়েও বিজেপির সর্বভারতীয় নেতাদের দেখা পাননি বলেই শোনা যাচ্ছে। আবার একটি মহল বলছে, তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বয়ং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। সেই সময়ে ত্রিপুরার ইনচার্জ বিনোদ সোনকারও উপস্থিত ছিলেন। এ দিকে কালতালীয় হলেও আইপিএফটি প্রতিনিধিও ত্রিপুরা পৌঁছন। জে পি নাড্ডার সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা হয় তাঁদেরও।

সুদীপের এই দিল্লি সফর ঘিরে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের মাত্র দেড় বছর আগে ত্রিপুরায় বিজেপি নড়বড়ে বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি তাঁকে দিল্লিতে ডাক করিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলে ভাঙন রুখতে বিক্ষুব্ধ সুদীপ রায় বর্মনকে বিপ্লব দেবের মন্ত্রিসভায় পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনাও হয়। সূত্রের খবর, জুলাই মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে এই সম্প্রসারণের কাজ হয়ে যাবে। সুদীপের মতো দক্ষ রাজনীতিবিদকে দলে ধরেও রাখা যাবে। তবে সুদীপের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব তাঁর ক্যাবিনেটে সুদীপবাবুকে মেনে নেবেন কিনা, অথবা দলীয় স্বার্থে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরায় ইউনাইটেড বিজেপিকে দেখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক মহল।

উল্লেখ্য ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটে বিজেপি ৩৬ টি আসন পেয়েছিল। আইপিএফটি ৮ টি আসন পেয়েছিল। বিরোধীরা সব মিলে ১৬ টি আসন পায়। এরপর ত্রিপুরার বিজেপি পরিচালিত নতুন বিধানসভা গঠন হওয়ার সময় বিজেপি আইপিএফটি জোটের ৯ জন মন্ত্রী ক্যাবিনেটে গিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে কাউন্সিলে রয়েছেন ৮ জন মন্ত্রী। ২০১৯-এর মাঝে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায়বর্মনকে বিপ্লব দেবের ক্যাবিনেট থেকে সরানো হয়েছিল। তাহলে কি ফের সুদীপ রায়বর্মনকেই মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে, বিক্ষুব্ধ শিবিরকে খুশি করতেই কি বিজেপির এই সম্প্রসারণ নীতি? জল্পনা থাকছে রাজনৈতিক মহলে।

তবে অসম ঘুরে সুদীপ রায়বর্মন আচমকা দিল্লিতে সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যতই জল্পনা চলুক, সুদীপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁর রাজধানী যাত্রা একান্তই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক।

আরও পড়ুন- ‘খেলা হবে’ এবার উত্তরপ্রদেশেও, যোগীরাজ শেষ করতে দিদির মন্ত্র নিলেন অখিলেশ

Previous articleঘুরিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবিকে কি ইন্ধন? দার্জিলিঙে বিজেপি যুবর স্মারকলিপি নিয়ে বিতর্কে রাজ্যপাল
Next articleতিহার জেলে নিয়ে আসা হল সুশীলকে