“রাজ্যের উপর অযথা দোষারোপ করা হয়েছে৷ রাজ্য সরকার তাঁকে নিরাপত্তা দেয়৷ আদালত মনে করছে না তাঁকে ‘ডবল’ নিরাপত্তা দেওয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে।”
শুক্রবার এই মামলার রায় ঘোষণা করে বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ একথা জানিয়েছেন৷ এর ফলে হাইকোর্টে টিঁকলো না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর রাজ্যের নিরাপত্তার আর্জি৷
বিচারপতি প্রসাদ জানিয়েছেন, রাজ্যের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য নিরাপত্তা দিয়েই থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারও তাঁকে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেয়৷ তিনি CRPF নিরাপত্তা পান। তাই আদালত মনে করছে না এক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীকে ‘ডবল’ নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তিনি তো রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা ভোগ করেই থাকেন। অযথা তিনি রাজ্য সরকারের ওপর দোষারোপ করেছেন। তবে তিনি যেখানে যাবেন, সেই লাইন-রুটের নিরাপত্তা রাজ্যকে দিতে হবে৷
কেন তাঁর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করলো রাজ্য সরকার, এর ব্যাখ্যা চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ কেন্দ্রের তরফে জেড শ্রেণির নিরাপত্তা পান শুভেন্দু । বিরোধী দলনেতা আদালতে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের নিরাপত্তা পেলেও তিনটি ক্ষেত্রে তাঁর রাজ্যের সুরক্ষা চাই। তাঁর আর্জি, পাইলট কার, রুট লাইনিং এবং জনসভায় নজরদারির জন্য রাজ্যের পুলিসের নিরাপত্তা দরকার।
বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ এই বিষয়ে রাজ্যের রিপোর্ট তলব করেছিলেন৷ রাজ্যের তরফে রিপোর্ট পেশ করে জানানো হয়, বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। খতিয়ে দেখা হয়েছে সব কিছু৷ এই মুহুর্তে শুভেন্দু অধিকারীর
অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই৷ হাইকোর্টে এই রিপোর্ট দিয়ে জানান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল৷ হাইকোর্টে পেশ করা শুভেন্দুর নিরাপত্তা রিপোর্টে রাজ্য জানিয়েছে,
◾ গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকায় এতদিন রাজ্যের নিরাপত্তা পেয়ে আসছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
◾ শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তা নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যৌথ পর্যালোচনা হয়৷
◾ রাজ্যের ১৯ ক্যাবিনেট মন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয় শুভেন্দু অধিকারীর থেকে কম।
◾ বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকার যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই৷
◾ গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকায় এতদিন রাজ্যের নিরাপত্তা পেয়ে আসছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। গত ২০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তা নিয়ে যৌথ পর্যালোচনা হয় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে।
◾ ২১ ডিসেম্বর, ২০২০-তে ঠিক হয়, কেন্দ্র জেড-ক্যাটিগরি নিরাপত্তা দেবে শুভেন্দুকে। এরপরই শুভেন্দুকে দেওয়া নিরাপত্তা তুলে নেয় রাজ্য।
◾ ২৮ কেন্দ্রীয় জওয়ানের নিরাপত্তা বলয়ে থাকেন শুভেন্দু অধিকারী। বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়েন তিনি। কেন্দ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করবে জানানোয় রাজ্য তার সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছে।
◾ রাজ্যের ৫ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী Z ক্যাটাগরি নিরাপত্তা পান। রাজ্যের ২ জন মন্ত্রী Y প্লাস নিরাপত্তা পান। রাজ্যের ১৭ জন মন্ত্রী Y ক্যাটাগরি নিরাপত্তা পান। রাজ্যের ১৯ জন মন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিরোধী দলনেতার থেকে কম।
◾ বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা রিপোর্টে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়৷
◾ রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতন কোনও কিছুই নেই, রাজ্য সে বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।
রাজ্যের এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন, শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য নিরাপত্তা দিয়েই থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারও তাঁকে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেয়৷ তাই আদালত মনে করছে না এক্ষেত্রে শুভেন্দুকে ‘ডবল’ নিরাপত্তা দেওয়ার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে। শুভেন্দু অধিকারী অযথা রাজ্য সরকারের ওপর দোষারোপ করেছেন।