Saturday, August 23, 2025

আদি বিজেপির বিদ্রোহে রাজীব-সব্যসাচীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে গেরুয়া শিবির

Date:

Share post:

ফের একবার দলবদলু “তৎকাল” বিজেপি (BJP) নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো রাজ্য বিজেপির অন্দরে। “জয় শ্রীরাম” স্লোগান দিলেও , বঙ্গ বিজেপি যে রাম রাজত্ব নয়, অর্থাৎ এখানে যে যা খুশি করতে বা বলতে পারবে তা হতে দেবে না আদি বিজেপি। একুশের ভোটের আগে তৃণমূল (TMC) থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন একদল নেতা। কিন্তু ভোটের ফলাফলের পর তাঁদের অধিকাংশের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ সোশ্যাল মিডিয়া, কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে আলটপকা মন্তব্য করে অস্বস্তিতে ফেলছেন বঙ্গ বিজেপিকে। এবার এই নেতাদের “অন্য গাছের ছাল” বলে মন্তব্য করলেন খোদ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।

তৃণমূলে ফিরছেন নাকি বিজেপিতেই থাকছেন, “বেসুরো” রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) গতিবিধি নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। তাঁর একের পর এক দল বিরোধী ও বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট এবং মন্তব্য নিয়ে মাথাচাড়া দিয়েছে জল্পনা। বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পর বাজেটের সমালোচনায় যখন মুখর হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Subhendu Adhikary), তখন রাজীবের ফেসবুকে বিস্ফোরক পোস্ট, “যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়ে বাংলার মানুষ ২১৩টি আসনে তাঁর প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন সেই মুখ্যমন্ত্রীকে অযথা আক্রমণ না করে সাধারণ মানুষের দুদর্শা হ্রাস করা জন্য পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।” এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “কিছু কিছু লোক আছেন তাঁরা ঠিক করতে পারছেন না, কী করবেন, কোথায় যাবেন। তিনি দলের কোনও পদাধিকারী নন। তাঁর অবস্থান স্পষ্ট হওয়া উচিত।”

অন্যদিকে, ২০২০ সালে মুকুল রায়ের (Mukul Roy) হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত (Sabyasachi Dutta)। একুশের ভোটে বিজেপির টিকিট ভোটে লড়ে হেরে যাওয়া সব্যসাচীর মুখে শোনা গিয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর সুনাম। বিধানসভা ভোটের বিজেপির ভরাডুবির কারণ হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাঠগোড়ায় তুলে সব্যসাচী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও মুখ ছিল না তাঁদের। এই কারণেই বাংলায় বিজেপি হেরেছে। আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভাষা বুঝতে পারেনি গ্রাম-বাংলার মানুষ।

এরপরই প্রায় প্রতিদিন সোশাল মিডিয়াতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তের মত তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন আদি বিজেপি কার্যকর্তারা। রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদিকা অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Amrita Banerjee) থেকে শুরু করে যুবমোর্চার রাজ্য কোষাধক্ষ্য কৌশিক ঘোষ (Kaushik Ghosh) কিংবা অনুপম ঘোষ (Anupam Ghosh) দল বিরোধী মন্তব্যের জন্য ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজীব ও সব্যসাচীর উপর।

ফেসবুক লাইভে অমৃতা একুশের ভোটে হারের জন্য সরাসরি রাজীব-সব্যসাচীর মতো নেতাদের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁদের অজাত-অপদার্থ-দালাল বলে কটাক্ষ করেছেন অমৃতা। এদের মতো নেতার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে গণ ইস্তফার পথে হাঁটবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মহিলা মোর্চার এই নেত্রী।

অপরদিকে, বিজেপি যুবমোর্চার রাজ্য কোষাধক্ষ্য কৌশিক ঘোষও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ফেসবুকে সুর চড়িয়েছেন। রাজীবের একাধিক পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে কৌশিক লিখেছেন, ”এইসব TMC দালালদের আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। চোর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও বিজেপিতে আছে কী করে, বোঝা যাচ্ছে না। ভারত মায়ের শপথ নিয়ে বলছি, যেদিন পার্টি অফিসে দেখব, গালগাল দিয়ে পার্টি অফিস থেকে তাড়াব। তাতে যা পরিণতি হয়, মেনে নেব। ভারত মায়ের জয়।”

সব মিলিয়ে রাজীব-সব্যসাচীকে দলের অন্দরে আদি বিজেপির প্রবল বিদ্রোহ। এই পরিস্থিতিতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে বিজেপি, সূত্রের খবর এমনটাই। ইতিমধ্যেই এই দুই নেতাকে দল বিরোধী মন্তব্যের জন্য জবাবদিহি করা হয়েছে। জবাব না মিললে বা জবাবে শীর্ষ নেতৃত্ব সন্তুষ্ট না হলে রাজীব-সব্যসাচীকে বহিষ্কার করার পথে হাঁটতে পারে দল।

 

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...