Saturday, August 23, 2025

নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ডেঙ্গি, আলাদা হাসপাতালে হবে চিকিৎসা

Date:

একদিকে অতিমারি করোনা আর অন্যদিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে ডেঙ্গি। করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা। পরপর দুই দিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই শতাধিক ডেঙ্গি রোগী। এজন্য সরকার আলাদা হাসপাতাল চালুর ঘোষণা দিয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বমোট এক হাজার ৬৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ২১৬ জন রোগী।

চলতি বছর জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয় জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং ২৫ জুলাই পর্যন্ত এক হাজার ৩০৭ জন রোগী ভর্তি হন। এই সময়ে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি।

দেশে কোভিড-১৯ মহামারির সময় ডেঙ্গির এই প্রাদুর্ভাবকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা বলছেন, মধ্য আগস্টে এটি পিকে উঠবে। থেমে থেমে বৃষ্টি এবং ঈদুল-আজহার কারণে জমে থাকা জলে ও রক্তে ডেঙ্গি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তদের চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, আমাদের দেশে দুই দশক ধরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। কখনোই এটি নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়নি। মশা নিধনের আধুনিক পদ্ধতিও নেওয়া হয়নি। নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুবই দুর্বল। এমনকি মশা নিধনের কীটনাশক আমদানিতে প্রায় ৯০ শতাংশ ডিউটি দিতে হয়। তাছাড়া মশা মারা এবং উৎপত্তিস্থান ধ্বংসের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। কীটনাশক আমদানির অনুমোদন দিয়ে থাকে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং চিকিৎসার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে কেউই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, রোগী বাড়তে শুরু করেছে। আগস্টের মাঝামাঝি এটা সর্বোচ্চ উঠতে পারে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে এখনই ক্লাস্টার পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কোন এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে, সেই এলাকাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পরবর্তী ১৪ দিন সেসব এলাকা থেকে যদি নতুন রোগী আসে, তাহলে ওই এলাকাগুলো অ্যাক্টিভ ক্লাস্টার হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অ্যাক্টিভ ক্লাস্টারে পরিণত মশা, লার্ভিসাইট ও এডিসের সোর্স ধ্বংস করতে হবে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন এবং পরবর্তী সময়ে সপ্তাহে একদিন করে মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। এর পাশাপাশি এবার ডেঙ্গির কোন সেরোটাইপ দ্বারা সংক্রমণ ঘটছে, সেটি নির্ণয় করতে হবে। ২০১৯-এর সেরোটাইপ হলে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু যদি অন্য কোনো সেরোটাইপের সংক্রমণ হয়, তাহলে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার পর যাদের হেমোরেজিক বা শক সিনড্রোম দেখা যাচ্ছে না বা যারা খুব দুর্বল হয়ে পড়ছেন না, তারা পরীক্ষাও করাতে যাচ্ছেন না। ফলে অনেক রোগী থেকে যাচ্ছেন শনাক্তের বাইরে। এছাড়া এখানে শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দেখানো হয়। কিন্তু কতজন পরীক্ষা করে পজিটিভ হয়েছেন, অর্থাৎ ডেঙ্গি রোগীর প্রকৃত সংখ্যা জানানো হচ্ছে না। এছাড়া ডেঙ্গির চিকিৎসা দিয়ে থাকেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে, কোভিড চিকিৎসা দিয়ে থাকেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। দেশের ভয়াবহ কোভিড পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালগুলোর মেডিসিন ওয়ার্ড কোভিড ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। এমনকি অনেক হাসপাতাল পুরোপুরি কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। সব চিকিৎসক কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত। এই মুহূর্তে ডেঙ্গি ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতে নতুন সংকট তৈরি করেছে ডেঙ্গি। প্রতিদিনই হাসপাতালের বারান্দায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনেকেই হাসপাতালে এসে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় ডেঙ্গি রোগীদের জন্য সুনির্দিষ্ট হাসপাতাল ব্যবস্থা করছে সরকার।

আরও পড়ুন- উত্তরবঙ্গে ফের ভূমিকম্প, কম্পনের তীব্রতা ৪.০

Related articles

ডেঙ্গি সংক্রমণ রুখতে তৎপর রাজ্য! জেলাগুলিকে একগুচ্ছ কড়া নির্দেশ মুখ্যসচিবের 

রাজ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় শনিবার নবান্নে জেলাশাসক ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব...

দায় বেসরকারিকরণ নীতির! মোদিরাজে পাঁচ বছরে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষাধিক কর্মী

মোদি সরকারের আমলে বিগত পাঁচ বছরে চাকরি হারিয়েছেন লক্ষাধিক সরকারি কর্মী। সম্প্রতি লোকসভায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল কেন্দ্র।...

পুজোর আগে প্রায় দ্বিগুণ দুধ উৎপাদনে বাংলার ডেয়ারি 

কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্যাকেটজাত দুধের জোগান বাড়াতে রাজ্য সরকারি ব্র্যান্ড বাংলার ডেয়ারি বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। পুজোর...

পিছনে দৌড়! স্নাতক স্তরে বৈদিক গণিত আনার চেষ্টা UGC-র

গোটা বিশ্ব গণিতের ক্ষেত্রে যেখানে নতুন উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে আসছে, সেখানে ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছন দিকে হাঁটা শুরু...
Exit mobile version