মৃত্যুর অর্থ কী? যাঁরা ভয় পান তাঁরা জেনে নিন

. মৃত্যুর অর্থ কী

অধিকাংশ মানুষের কাছেই মৃত্যু এক ভয়ঙ্কর বিষয়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন, মৃত্যুকে আমাদের নিত্যসঙ্গী বলেই মনে হয়। আমাদের জীবনে আমরা প্রতিনিয়তই মারা যাচ্ছি। কারণ, মৃত্যু বলতে শরীর পরিবর্তনকে বোঝায় এবং শরীর পরিবর্তন আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে।

 

ছয় মাস বয়সে যাকে দেখেছেন তাকে যদি পাঁচ বছর বয়সে দেখেন, তাহলে খুব সম্ভব তাকে আপনি চিনতে পারবেন না। ছয় মাস বয়সে আপনি যে শরীর দেখেছেন, তা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়েছে, এমনকি দেহকোষগুলোও পরিবর্তিত হয়েছে। এভাবে শিশুকাল থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত প্রতিটি শরীরই নিরন্তর পরিবর্তিত হচ্ছে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, শরীরের এ পরিবর্তনকে মৃত্যু বলে জানবে। ঠিক যেমন কেউ শৈশব থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য এবং একইভাবে মৃত্যুর সময় এক দেহ ত্যাগ করে অন্য দেহ গ্রহণ করে।

 

যুদ্ধে পরিবারের অনেক সদস্য নিহত হবেন ভেবে অর্জুন এতই বিমর্ষ হয়ে পড়েন যে, তিনি যুদ্ধ করার ইচ্ছেই হারিয়ে ফেলেন। তাই তিনি বলেন, “এমনকি আমি যদি ত্রিভুবনও লাভ করি, তবু তাদের হত্যা করে আমি সুখী হব না।” অর্জুনের মতো প্রত্যেক জীবই মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত। পরিবারের সদস্যদের আসন্ন মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত অর্জুনকে মুক্ত করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে মৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন।

 

#_মৃত্যু_বলতে_আসলে_কী_বোঝায়?

কিছু মানুষ মনে করে, মৃত্যু মানে সবকিছু শেষ হওয়া। জড় দৃষ্টিকোণ থেকে এ জীবন এবং দেহ শেষ হওয়াকেই মৃত্যু বলে; কিন্তু নিত্য আত্মত্মার মৃত্যু হয় না।

কেউ মারা যাওয়ার পর তার দেহ ছাইয়ে পরিণত হয়, তখন আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। একেই সবকিছু শেষ হওয়া বোঝায়। মৃত্যুর পর আর কোনো জন্ম হয় না। এ দেহে যতদিন থাকো, শুধু ভোগ করে যাও। কোনো কিছুর পরোয়া করো না। যত পারো ভোগ করতে থাকো, যেহেতু এর কোনো ফল নেই। এ দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেকেই মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করতে পারে।

 

সাধারণত দুই ধরনের লোক দেখা যায়। এক দল মৃত্যু নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন এবং বিষয়টি সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞানের অভাব বা অজ্ঞানতার কারণে তারা এর দ্বারা ভীতসন্ত্রস্ত। অন্য দল ইন্দ্রিয় উপভোগে এতই নিমগ্ন যে, তারা মৃত্যু নিয়ে চিন্তাই করতে পারে না। উভয় ক্ষেত্রেই মৃত্যু সম্বন্ধে অজ্ঞানতা সুস্পষ্ট। সে জন্য মৃত্যু আসলে কী, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন:—

 

দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা।

তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিধীরস্তত্র ন মুহাতি ॥

“দেহীর দেহ যেভাবে কৌমার, যৌবন ও জরার মাধ্যমে তার রূপ পরিবর্তন করে চলে, মৃত্যুকালে তেমনই ঐ দেহী (আত্মা) এক দেহ থেকে অন্য দেহে দেহান্তরিত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা কখনো এ পরিবর্তনে মুহ্যমান হন না।” (গীতা ২/১৩)

 

মৃত্যু বলতে দেহের পরিবর্তনকে বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেহ প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তন হয়, ফলে প্রত্যেকে মৃত্যুর দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। নতুন জন্মের মাধ্যমে যেমন আমাদের দেহ পরিবর্তিত হয়, তেমনি মৃত্যুর মাধ্যমেও আমাদের দেহ পরিবর্তন হয়। যখন আমাদের দেহ বৃদ্ধ হয় এবং আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না, তখন আত্মা দেহ পরিত্যাগ করে পূর্ব কর্মানুসারে নতুন দেহ প্রাপ্ত হয়।

 

এ বিষয়ে শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন :— যেহেতু প্রত্যেকটি জীব স্বতন্ত্র আত্মা, প্রতি মুহূর্তেই প্রত্যেকেই দেহ পরিবর্তন করে চলছে। সে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে, ফলে কখনও শিশু, কখনও কিশোর, কখনও যুবক এবং কখনও বা বৃদ্ধ হয়। কিন্তু জীবের প্রকৃত সত্তা আত্মার কোনো পরিবর্তন হয় না। দেহটি যখন অকেজো হয়ে যায়, তখন আত্মা সেই দেহটি ত্যাগ করে অন্য দেহ ধারণ করে। মৃত্যুর পর জড় অথবা চিন্ময় আরেকটি দেহ প্রাপ্ত হওয়া যখন অবশ্যম্ভাবী, তখন ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য আদি আত্মীয়-পরিজনের জন্য শোক করা অর্জুনের পক্ষে নিতান্তই নিরর্থক। বরং তাদের মৃত্যুর কথা ভেবে শোক করার পরিবর্তে আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল; কারণ মৃত্যু হলে তারা তাদের জরাগ্রস্ত বৃদ্ধ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ প্রাপ্ত হবেন এবং নবশক্তি লাভ করবেন। পূর্বকৃত কর্মের ফল অনুসারে জীব নতুন দেহ প্রাপ্ত হয় এবং নানা রকম সুখ ও দুঃখ ভোগ করে।

 

তাই ভীষ্ম ও দ্রোণের মতো মহাত্মাগণ, দেহত্যাগের পর জড়জগতের বন্ধনমুক্ত হয়ে ভগবদ্ধাম বৈকুণ্ঠে ফিরে যাবেন অথবা স্বর্গলোকে দিব্য দেহ প্রাপ্ত হয়ে নানা সুখ ভোগ করবেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং তাদের মৃত্যুতে শোক করার কোনো কারণই ছিল না।

 

যে মানুষ জীবাত্মা ও পরমাত্মার স্বরূপ এবং পরা-অপরা উভয় প্রকৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত, তাকে বলা হয় ধীর। এ প্রকার মানুষ জড় দেহের পরিবর্তনের জন্য কখনও শোক করেন না।

 

#_আত্মা_কেন_দেহ_ত্যাগ_করে?

জড়জগৎ কাল বা সময় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরিচালিত হয়, যা জড়-জাগতিক সবকিছুরই অবনতি ঘটায়। যেহেতু দেহ জড়বস্তু, তাই তা বিভিন্ন পরিবর্তন ও স্তর অতিক্রম করে। দেহ অনিত্য জড়বস্তুর দ্বারা তৈরি, কিন্তু আত্মা নিত্য। দেহ ধ্বংস হলেও আত্মা বিদ্যমান থাকে। এর দ্বারা আমরা দেখতে পাই, সনাতন আত্মা একটি অনিত্য দেহ ত্যাগ করে আরেকটি অনিত্য দেহে স্থানান্তর হতে বাধ্য হয়। মানুষ যেমন পুরাতন পোশাক পরিবর্তন করে নতুন পোশাক ধারণ করে, আত্মাও তেমনি একটি অকেজো জীর্ণ দেহ পরিত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে। এ বিষয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন:—

“মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন।”(গীতা-২/২২)

 

শ্রীল প্রভুপাদ আরও ব্যাখ্যা করেছেন- পারমাণবিক জীবাত্মা যে এক দেহ ছেড়ে আর এক দেহ ধারণ করে, তা সর্বজনস্বীকৃত তথ্য। তবুও আধুনিক যুগের কিছু বৈজ্ঞানিক আত্মার অস্তিত্ব বিশ্বাস করেন না। অথচ হৃদয় থেকে কীভাবে শক্তি সঞ্চালিত হয় তা বোঝাতে পারে না। কিন্তু তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, প্রতিমুহূর্তেই দেহের পরিবর্তন হচ্ছে এবং এজন্যই দেহে শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য দেখা যায়।

 

#_আত্মা_কীভাবে_দেহ_পরিবর্তন_করে?

আত্মার দুটি আবরণ রয়েছে। একটি স্থূল, যা গঠিত হয় মাটি, জল, আগুন, বাতাস ও আকাশ দিয়ে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির দৃশ্যমান অবয়বটি গঠিত হয় এদের সমন্বয়েই। অন্যটি সূক্ষ্ম, যা তিনটি সূক্ষ্ম উপাদান মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার দিয়ে গঠিত এবং তা চোখ দিয়ে দেখা যায় না। মৃত্যুর সময় আত্মা স্থূল দেহ ত্যাগ করে, কিন্তু সূক্ষ্ম দেহ আত্মার সাথে সাথে ভ্রমণ করে। পরমাত্মারূপে ভগবানও আত্মার সাথে ভ্রমণ করেন।

 

সূক্ষ্ম দেহের একটি উপাদান হলো মন, যা আত্মার সমস্ত ইচ্ছা বহন করে। ইচ্ছা অনুসারে মনের ভেতর যা জমা হয়, ভবিষ্যৎ গন্তব্যে আত্মা তার সবই লাভ করে। আত্মার নিত্যসঙ্গী পরমাত্মার পরিচালনায় আত্মা তা প্রাপ্ত হয়। মন যখন জড়বাসনা বহন করে, তখন আত্মা জড়জগতে বিভিন্ন প্রকার জড় দেহ ধারণ করতে বাধ্য হয়। মন জড়-বাসনা থেকে মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে আত্মা চিন্ময় জগতে ফিরে গিয়ে চিন্ময় দেহ লাভ করে।

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ২/২২ শ্লোকে শ্রীল প্রভুপাদ আরও গভীরভাবে তা বর্ণনা করেছেন : পরমাত্মার কৃপার ফলেই ভিন্ন ভিন্ন আত্মা ভিন্ন ভিন্ন দেহ প্রাপ্ত হয়। বন্ধু যেমন বন্ধুর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে, পরমাত্মাও তেমন অণু আত্মার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। মুণ্ডক উপনিষদ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে আত্মা ও পরমাত্মাকে একই গাছে বসে থাকা দুটি পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি পাখি (জীবাত্মা) সেই গাছের ফল খাচ্ছে এবং অন্য পাখিটি (শ্রীকৃষ্ণ) তাঁর বন্ধুকে পর্যবেক্ষণ করে চলছেন। এ দুটি পাখি গুণগতভাবে যদিও এক; তবুও তাদের একজন সেই গাছের ফলের আকর্ষণে আবদ্ধ, আর একজন একান্ত সুহৃদের মতো তার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সাক্ষীস্বরূপ পাখি, আর অর্জুন হচ্ছেন ফল আহাররত পাখি। যদিও তারা একে অপরের বন্ধু, তবুও তাদের একজন হচ্ছেন প্রভু এবং অন্য জড় ভৃত্য।

 

জীবাত্মা পরমাত্মার সঙ্গে এ সম্পর্কের কথা ভুলে যাওয়ার ফলেই গাছ থেকে অন্য গাছে, অর্থাৎ এক দেহ থেকে অন্য এক দেহে ঘুরে বেড়ায়। এ দেহরূপ বৃক্ষে জীবাত্মা কঠোর সংগ্রাম করছে; কিন্তু যে মুহূর্তে সে অন্য পাখিকে পরম গুরুরূপে গ্রহণ করতে সম্মত হয়, যেরূপ অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ লাভের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হয়েছিলেন, তৎক্ষণাৎ অধীন পাখিটি সমস্ত শোক থেকে মুক্ত হয়।

 

মুণ্ডক উপনিষদে (৩/১/২) ও শ্বেতাশ্বর উপনিষদে (৪/৭) প্রতিপন্ন করে বলা হয়েছে

 

সমানে বৃদ্ধ পুরুষো নিমগ্লোহনীশয়া শোচতি মুহ্যমানঃ।। জুষ্টং যদা পশ্যত্যন্যমীশমস্য মহিমানমিতি বীতশোকঃ ॥

 

“যদিও দুটি পাখি একই গাছে বসে আছে, কিন্তু যে পাখিটি ফল আহারে রত সে ফলের ভোক্তারূপে সর্বদাই শোক, আশঙ্কা ও উদ্বেগের দ্বারা মুহ্যমান। কিন্তু যদি সে একবার তার নিত্যকালের বন্ধু অপর পাখিটির দিকে ফিরে তাকায়, তবে তৎক্ষণাৎ তার শোকের অবসান হয়, কারণ তার বন্ধু হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান এবং তিনি সমগ্র ঐশ্বর্যের দ্বারা মহিমান্বিত।”

 

অর্জুন তার নিত্যকালের বন্ধু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিকে ফিরে তাকিয়েছেন এবং তার কাছ থেকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তত্ত্ব জানতে পেরেছেন। এভাবেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শ্রবণ করার ফলে তিনি ভগবানের পরম মহিমা উপলব্ধি করতে পারেন এবং সমস্ত শোক থেকে মুক্ত হন।

 

ভগবান এখানে অর্জুনকে উপদেশ দিয়েছেন, তার বৃদ্ধ পিতামহ, গুরু, আদি আত্মীয়-পরিজনদের জন্য শোক না করতে। পক্ষান্তরে সেই ধর্মযুদ্ধে প্রাণত্যাগ করার ফলে তাদের দেহগত কর্মফলজনিত সমস্ত পাপ থেকে তারা যুক্ত হবেন বলে, আনন্দিত হওয়া উচিত। যজ্ঞ বেদিতে অথবা ধর্মযুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করলে তৎক্ষণাৎ সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং তার ফলে উচ্চতর জীবন লাভ হয়। সুতরাং অর্জুনের শোক করার কারণ ছিল না। শ্রীমদ্ভাগবতে মৃত্যুকে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করেছেন:—

জীবো হাস্যানুগো দেহো ভুতেন্দ্রিয়মনোময়ঃ । তান্নিরোধোহস্য মরণমাবির্ভাবস্তু সম্ভবঃ ॥

 

“এভাবে জীব তার কর্ম অনুসারে জড় মন এবং ইন্দ্রিয়-সমন্বিত একটি উপযুক্ত শরীর প্রাপ্ত হয়। যখন বিশেষ কর্মের ফল সমাপ্ত হয়, সেই সমাপ্তিকে বলা হয় মৃত্যু এবং যখন কোনো কর্মের ফল শুরু হয়, সেই শুরুকে বলা হয় জন্ম। (ভা: ৩.৩১.৪৪)

 

“দর্শন স্নায়ু রোগগ্রস্ত হওয়ার ফলে, চক্ষু যখন রং অথবা রূপ দর্শনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন দর্শনেন্দ্রিয় মৃতপ্রায় হয়ে যায়। তখন চক্ষু এবং দৃশ্য উভয়ের দ্রষ্টা জীব তার দর্শনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তেমনই বস্তুর অনুভূতির স্থল জড় শরীর যখন অনুভব করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন তাকে মৃত্যু বলা হয়। জীব যখন তার জড় দেহকে তার স্বরূপ বলে দর্শন করতে শুরু করে, তাকে বলা হয় জন্ম।” (ভা: ৩,৩১.৪৫-৪৬)

 

শ্রীল প্রভুপাদ তাৎপর্যে ব্যাখ্যা করেছেন কেউ যখন বলে ‘আমি দেখছি’ তার অর্থ হচ্ছে যে, সে তার চক্ষুর দ্বারা অথবা চশমার দ্বারা দর্শন করেছে; সে তার দর্শন যন্ত্রের দ্বারা দর্শন করে। সেই দর্শনের যন্ত্রটি যদি ভেঙে যায় অথবা রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে অথবা কার্য সম্পাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন দ্রষ্টারূপে সে দর্শন করতে পারে না। তেমনই এ জড় দেহে এখন জীব কার্য করছে এবং জড় দেহটি যখন কার্য করতে অক্ষম হয়ে কাজ বন্ধ করে দেবে, তখন সেও তার কর্মফল ভোগের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেবে। কারও কার্য করার যন্ত্রটি যখন ভেঙে যায়, আর কাজ করতে পারে না, তখন তাকে বলা হয় মৃত্যু। পুনরায়, কেউ যখন কাজ করার জন্য একটি নতুন যন্ত্রপ্রাপ্ত হন, তখন তাকে বলা হয় জন্ম। নিরন্তর দেহের পরিবর্তনের মাধ্যমে, এ জন্ম-মৃত্যুর প্রতিক্ষণ চলছে। অন্তিম পরিবর্তনকে বলা হয় মৃত্যু, নতুন দেহকে বলা হয় জন্ম। এটিই হচ্ছে জন্ম-মৃত্যুর প্রশ্নের সমাধান। প্রকৃতপক্ষে, জীবের জন্ম-মৃত্যু হয় না, সে নিত্য। সে সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে, ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে- এ জড় দেহের মৃত্যু বা বিনাশ হলেও জীবের কখনও মৃত্যু হয় না। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে, শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/২০) জীবসত্তার কোনো মৃত্যু হয় না, এমনকি মৃত্যুর পরও অথবা জড় দেহ ধ্বংস হয়ে গেলেও।★

 

সংগৃহীত।

 

 

Previous articleসাংসদদের একশো ভাগ সক্রিয় অংশগ্রহণের বার্তা মমতার
Next articleক্যালিফোর্নিয়ায় বন্দুকবাজের হামলা, নিহত ৪