অতিমারির বিধিনিষেধ শেষে চেনা ছন্দে ঢাকা

খায়রুল আলম , ঢাকা

আবারও সেই চেনা ছন্দে ফিরেছে ঢাকা। সকাল থেকেই লকডাউন শেষে অফিস-দোকানপাট খুলে গেছে, রাস্তায় নেমেছে গণপরিবহন। মানুষের ব্যস্ততা আর গাড়ির চাপে রাজধানীতে ফিরেছে চেনা যানজট আর কোলাহল। শুরু হয়েছে ট্রেন এবং লঞ্চ চলাচলও।
যদিও দেশে এখনও কমেনি অতিমারিতে মৃত্যু ও শনাক্তের হার।

আরও পড়ুন- অভূতপূর্ব: রোমে আন্তর্জাতিক শান্তি বৈঠকে আমন্ত্রিত মমতা

রাস্তায় যাত্রীর চাপ বাড়লেও লকডাউনে শুরু হওয়া ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকরা এখনও ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছেন । এতদিন ‘ভিআইপি’ সড়কগুলোতে রিকশা চললেও বুধবার সকাল থেকে সেসব সড়কে রিকশা আটকে জরিমানা করেছে পুলিশ।

খুলেছে সরকারি, বেসরকারি অফিস, দোকানসহ, বিপণি বিতানগুলোও। তবে বুধবারের সকালটা দোকান আর বিপণি বিতানের কর্মীদের ধোয়া মোছায় বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।

মোহাম্মদপুর আর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোড এলাকায় রাস্তাঘাট অলিগলিতে সকাল থেকেই ছিল মানুষের স্রোত। দোকানপাটেও ছিল ব্যস্ততা।

খুশবু বিরিয়ানি অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার সাইফুল বলেন, “সবকিছু খোলা। হোটেলে লোক বসিয়ে খাওয়াতেও বাধা নেই। এখানে স্টুডেন্ট আসে বেশি, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ইনকামও বাড়বে।”

মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার আল আমিন রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, “এতদিন পার্সেল বিক্রি করেছি। আজ থেকে কাস্টমার বসে খাচ্ছে। মাস্ক না থাকলে ঢুকতে মানা করছি। তবে অনেকেই মাস্ক পরছেন না।”

আদাবরের জিনিয়া স্টোরের মালিক আমান উল্লাহ বলেন, “এতদিন হাফ শাটারে দোকান চালিয়েছি ,এখন পুরো খোলা। তবে মানুষ মানে না। অনেকই মাস্ক ছাড়া ঢুকছে। নিজের ভালো না বুঝলে কীভাবে হবে?”

১৯ দিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে সদরঘাট থেকে। বুধবার ভোর ৬টায় সদরঘাট থেকে এমভি ইমাম-হাসান লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর এমভি সোনারতরী, গ্রিন লাইন সদরঘাট ছেড়ে যায় ।

চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা সোনারতরী-২ ও রফরফ-৭ লঞ্চে যাত্রীর চাপ ছিল বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক মোহাম্মদ নেওয়াজ।

তিনি বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ১৯টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এই সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের মতোই । স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীরা যাতায়াত করছে কিনা সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

সদরঘাট থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, বরিশাল ও মুলাদী রুটের লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যায় বরিশালসহ আন্যান্য দূরের পথের লঞ্চগুলো ছেড়েছে।

বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে ফের ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বলাকা এক্সপ্রেস, তুরাগ এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, পারাবত এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী সকাল থেকে ছেড়ে গেছে।

রেলের ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার সকাল থেকে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং ২০ জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে।
তবে ঢাকা থেকে একতা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস এবং টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোবরা থেকে বুধবার ছাড়েনি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হলে অন্যসব যাত্রীবাহী গণপরিবহনের মত ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়।

ঈদ ঘিরে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই লকডাউন শিথিল করা হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ও ট্রেন চালু করে। এরপর ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় ট্রেনও থেমে যায়।

সেই বিধিনিষেধের সময়সীমা ১০ অগাস্ট শেষ হয়। বুধবার থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার।

লকডাউন উঠে যাওয়ার পর প্রথমদিন দেশের ভেতরে আকাশপথে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই বলে জানিয়েছে দেশের দুই বেসরকারি এয়ারলাইন্স।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট চালুর পর থেকে যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তবে যাত্রীদের বাড়তি কোনো চাপ নেই। আগের মতই তারা চলাচল করছে।”

নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল আলম অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের বাড়তি চাপ না থাকার কথা জানিয়ে বলেন, “আমরা আশা করছি সামনে যে টানা তিন দিন ছুটি রয়েছে তারপর হয়ত চাপ বাড়বে।”

advt 19

 

Previous articleঅভূতপূর্ব: রোমে আন্তর্জাতিক শান্তি বৈঠকে আমন্ত্রিত মমতা
Next articleশূন্য পেয়েও এই সিপিএমের শিক্ষা নেই! বিস্ফোরক সমীর পুততুন্ড