অতিউত্তম: ৯৫তম জন্মবার্ষিকীতেও তিনিই মহানায়ক

“তুমি আমায় বলো, উত্তম কুমার”

ছবিটিতে ছিলেন না উত্তম কুমার। বরং ছিলেন তাঁর সঙ্গে যাঁর বারবার তুল্যমূল্য বিচার করা হয় সেই, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তবু চিন্ময় রায়ের মুখে এই ডায়লগ সেই সময় বাঙালির যুব সমাজের ফ্যান্টাসিটাকে স্পষ্ট সামনে নিয়ে আসে। মজার কথা হল, সেই ফ্যান্টাসি আজও বাঙালির অন্তরে রয়ে গিয়েছে। সিক্স প্যাক, হাইলাইট করা চুল, বাংলা বলায় যতই আড়ষ্টতা থাক- এখনও বাঙালির যুবাদের রাইভাল উত্তম কুমার। মনে মনে তাঁরাও নিজেদের সুচিত্রা-সুপ্রিয়ার ‘উত্তম’ হতে চায়। আজ সেই মহানায়কে 96তম আবির্ভাব দিবস। তাঁর মতো কিংবদন্তির আবির্ভাবই হয়। জন্মদিন হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের।

জীবন শুরু হয়েছিল সাধারণ চাকুরিজীবী হিসাবে। তার সঙ্গে ছিল নিজেদের পাড়ার থিয়েটার গ্রুপে অভিনয়। তবে, টলিউড কিন্তু অরুণ কুমারকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ তকমা দিয়ে। কারণ, কেরিয়ারের প্রথম ৭টি ছবি পর পর ফ্লপ। নিউমারোলজি মানতেন কি? সেইসময় সেসবের অত ছিল কি না তার উল্লেখ মেলে না। তবে, মামার বাড়ির দেওয়া উত্তম নামে ছবি করাই ‘উত্তম’ সিদ্ধান্ত হল তাঁর জীবনে। ‘উত্তম’ থেকে ‘নায়ক’ তারপর ‘মহানায়ক’।

প্রথম জীবনের উত্তম কুমারের ক্যারিশ্মা পর্দায় সেভাবে চোখে পড়ত না। কাজল পরা চোখ, ঠোঁটে চড়া লিপস্টিক, দেহের তুলনায় অতিরিক্ত সাদা পমেটম দেওয়া মুখ, সাধারণ দেহসৌষ্ঠবের উত্তম তখন লড়াই করছেন। প্রেক্ষাপট বদলাতে শুরু করল ছয়ের দশক থেকে। তখন থেকেই উত্তম কুমার তৈরি করলেন নিজের ঘরানা। ব্যায়াম করা চেহারা, নিজের নামের আদ্যক্ষর ‘ইউ কাট’ চুল, চোখে বাঁকা চাহনি, ভুবন ভুলানো হাসি। আর তার সঙ্গে মিলল অপূর্ব কণ্ঠস্বর। প্রথম চেয়েছিলেন গায়ক হতে। সেই জন্য রীতিমতো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে গান শিখেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু অচিরেই বুঝেছিলেন সেটা হবে না। তবে সঙ্গীত চর্চা ছিল। আর উত্তমের লিপে হেমন্তর আর মান্নার গান তাঁর প্রত্যেকটা চরিত্রকে রোমান্টিকতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। শুধু মহিলাকুল নন, আপামর বাঙালি মজে রইল উত্তম ম্যাজিকে।

মধ্য গগন থেকে সূর্য পশ্চিমে ঢলতে শুরু করতেই জীবন খাতা থেকে নাম তুলে নিয়েছিলেন উত্তম। যদি দীর্ঘজীবী হতেন! বুড়ো বয়সে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করতেন! তাহলেও কি এই ম্যাটিনি আইডলের তাকমাটা থাকত? তবে, বাঙালির মনে আজও তিনি ‘মহানায়ক’; ‘অতিউত্তম’। তাঁর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী মূর্তিতে মাল্যদান, চ্যানেলে তাঁর অভিনীত ছবির প্রদর্শনীই নয়, বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ এবং তাঁর অসংখ্য অনুরাগী তাঁকে প্রতিদিনই একইভাবে স্মরণ করে চলেছে।

আরও পড়ুন:জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ, ৬ রাজ্যে তল্লাশি সিবিআইয়ের

 

Previous articleজয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ, ৬ রাজ্যে তল্লাশি সিবিআইয়ের
Next articleবিদ্যুতের অভাবে যোগদান প্রক্রিয়া ব্যাহত ত্রিপুরায়, বিজেপির ষড়যন্ত্র দেখছে তৃণমূল