মহালয়ায় নজরুল মঞ্চ যেন চাঁদের হাট। উপলক্ষ, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগোবাংলা’-র উৎসব ১৪২৮ সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠান। উৎসব সংখ্যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিনের মঞ্চে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি ছিলেন সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বহু বিশিষ্ট মানুষ। ছিলেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন, সাহিত্যিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শতাব্দী রায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যব্যক্তিত্ব তথা প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, নাট্যব্যক্তিত্ব তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, রাজ্যের মন্ত্রী তথা সংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন, সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী, সৌমিত্র রায়, বাবুল সুপ্রিয়, আবৃত্তিশিল্পী প্রণতি ঠাকুর প্রমুখ।

গৌতম ঘোষের ‘আমার পূজার ফুল’ গানের মাধ্যমেই শুরু হয় জাগোবাংলা উৎসব সংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ও সুরে ‘আবার যখন দেখা হবে এই পৃথিবীর মাঝে’ গানটি দর্শকদের শোনান গায়িকা তৃষা পাড়ুই। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে তৃষাকে দু’বার এই গানটি গাইতে হয়। সৌমিত্র রায় গেয়ে শোনান নাজম নাজম গানটি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ও সুর করা ‘আমার আমি হারিয়ে যাব তোমাদেরই মাঝে’ গানটি গেয়ে শোনান শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী এবং ইন্দ্রনীল সেনও গান গেয়েছেন। ঠিক এরপরই মঞ্চে উপস্থিত হন বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে দেন। এদিন বাবুল সুপ্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি ‘পিয়ানিকা’ উপহার দেন। এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চেই বিশিষ্ট গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর লেখা, ‘রামায়ণী’ গ্রন্থের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নৃসিংহবাবু বলেন, চমৎকার একটি আয়োজন। প্রসঙ্গত, বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেই।

আরও পড়ুন: ও লাভলি! মহালয়ায় অন্য রূপে মদন, করলেন চন্ডীপাঠ


এদিন সঞ্চালক কুণাল ঘোষ বলেন, অনেক মানুষই সংকটের মধ্যে রয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং প্রতিহিংসার রাজনীতিতে। এই লড়াই চলছে। চলবে। সরকার এবং তৃণমূলের কর্মীরা বিপন্ন মানুষের পাশে আছে। যেহেতু শরৎকাল এসে গিয়েছে তাই উৎসব সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে।

‘জাগোবাংলা’র উৎসব সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাঁর ছোট্ট প্রতিক্রিয়ায় চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ জানালেন, ‘‘বহুদিন পর বাড়ির বাইরে বেরোলাম। খুব ভাল লাগল অনুষ্ঠানটি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়-সুরে অসাধারণ গাইলেন শিল্পীরা। কয়েকটা গান শুনে ছয়ের দশকের কথা মনে পড়ে গেল।” সৌমিত্র রায় তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আজ এমন একটা পরিবেশে গান গাইতে পেরে খুব ভাল লাগল। আমাদের দিদির কোনও তুলনা হয় না। তিনি শিল্পীদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। মঞ্চে ওঠার আগে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসেছিলেন শুভাপ্রসন্ন, নচিকেতা। প্রতিটি গানের শেষে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন তাঁরা। মঞ্চে উঠেই মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ডেকে নেন সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিত্বদের।

এদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গানের অ্যালবাম ‘জননী’-র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়। গীতিকার ও সুরকার খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অ্যালবামে গান গেয়েছেন ইন্দ্রনীল সেন এবং গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী, মনোময় ভট্টাচার্য, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি, রূপঙ্কর বাগচী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। গান গাওয়ার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইন্দ্রনীল সেনের বাড়িতে গায়ক নচিকেতাকে নিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ওইদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে একপ্রকার জোর করেই গানটি রেকর্ড করান নচিকেতা। এক টেকেই রেকর্ডিং ওকে করে দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দীপাবলির পরে আমি, নচি (নচিকেতা চক্রবর্তী), ইন্দ্রনীল (ইন্দ্রনীল সেন) বসে দেখব বাংলা গান আরও ভাল করা যায় কীভাবে।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ‘জাগো দুর্গা’ গানে কণ্ঠ মেলান শিল্পীরা। করোনা বিধি মেনেই আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠান শেষে পরিতৃপ্তি নিয়েই ফেরেন সমাগত অতিথি ও দর্শকরা।
