পুজোর মরসুমে দল ও সংগঠনের শারদ সংখ্যায় নেতাদের নানাবিধ লেখা থাকে মুখপত্রে। এবছর দলের বাইরে গিয়ে পিডিএসের(PDS) মুখপত্রের শারদ সংখ্যায় কলম ধরেছেন সিপিএমের(CPM) জনপ্রিয় দুই নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়(Kanti Ganguly) ও তন্ময় ভট্টাচার্য(Tanmay Bhattacharya)। তবে সে লেখায় বিতর্কের কোন উপাদান না থাকলেও রাজনৈতিক লাইনের বাইরে গিয়ে দুই নেতৃত্বে এই লেখাকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বলাবাহুল্য, রাজনীতির অঙ্গনে পিডিএসের সঙ্গে সিপিএমের এখন বিস্তর দূরত্ব। সেখানেই দলের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিধায়কের লেখা প্রকাশিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উষ্মা সিপিএমের অন্দরে।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলাতে কলম ধরেছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাস। নারী শক্তির উত্থান মূলক ৪ কিস্তির সেই প্রতিবেদনে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশস্তিও। এই ঘটনায় রীতিমতো সাড়া পড়ে যায় সিপিএম-এর অন্দরে। সাসপেন্ড করা হয়েছিল অজন্তা বিশ্বাসকে। এবার তেমনই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ দল। যদিও এখনও পর্যন্ত এই লেখার প্রেক্ষিতে ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে কোনো রকম শাস্তি মূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে সিপিএম যে বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না তা সরাসরি না বললেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সচরাচর আমাদের দল এবং বামফ্রন্টের নানা সংগঠনের একাধিক কাগজে পার্টির অনেকেই লেখেন। তার বাইরে কিছু করার অভ্যাস দলে নেই।” তবে পিডিএসের মুখপত্রে ঠিকই লিখেছেন কান্তি-তন্ময়? তন্ময়বাবুর বক্তব্য, তিনি কবিতা লিখে ওই বইয়ের প্রকাশকদের পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা ছেপেছেন। কবিতার নাম ‘মানবতা’। অন্যদিকে, সুন্দরবন ও তার পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে দীর্ঘদিন ধরে জুড়ে থাকা কান্তিবাবু সেই বিষয়ের উপরেই লিখেছেন।
আপাতদৃষ্টিতে এই লেখায় কাউকে আঘাত দেওয়ার বিষয় না থাকলেও সমস্যা রাজনৈতিক লাইন। বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের বেনজির বিপর্যয়ের পরে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতে জডিয়েছিলেন ওই দুই নেতাই। প্রকাশ্যে দলের নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দাগায় তিন মাস মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছিল তন্ময়বাবুকে। আর রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য কান্তিবাবু রাজ্য কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেই দলের রাজ্য সম্পাদকের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। এহেন পরিস্থিতির মাঝেই সদ্য ভবানীপুরের উপনির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর লক্ষ্যে সরাসরি মমতাকে সমর্থন করার ডাক দিয়েছিল পিডিএস। বিজেপি-বিরোধিতায় তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর জোট গড়ার পক্ষে তারা। এমন পরিস্থিতির মাঝে দুই সিপিএম নেতার পিডিএস মুখপত্রে লেখার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ দল।