Friday, August 22, 2025

সন্ধ্যেয় চাউমিন খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, তারপর সব শেষ: হাসপাতালে সুব্রতর শেষ সময়

Date:

Share post:

তখনো ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি ভয়াবহ সেই সময়টা আর বেশি দূরে নেই। শুক্রবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের(Subrata Mukherjee)। সুব্রতের সামনেই তখন বসেছিলেন স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়(Chandabani Mukherjee) ও তাঁর আইনজীবী মণিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়(Mani Shankar Chatterjee)। তখন সন্ধ্যা সম্ভবত সাড়ে ৬টা। বেশ সুস্থই দেখাচ্ছিলো মন্ত্রীকে। বাড়ি ফিরে কী কী করতে চান, তারই তালিকা শোনাচ্ছিলেন সুব্রত। বলছিলেন তাঁর চপ-মুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে। এমনকি, হাসতে হাসতে চাউমিন খাওয়ার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছিলেন একবার। তবে আকস্মিক গোটা ঘটনার পট পরিবর্তন হতে শুরু করে।

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী মণিশঙ্কর জানান, “সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ আড্ডা ছেড়ে শৌচালয়ে যান সুব্রত। ফিরে আসেন মিনিট দশেক পর। তার পর থেকেই একটু একটু করে সুব্রতের কিছুক্ষণ আগের হালকা মেজাজের ছবিটা বদলে যেতে থাকে। প্রথমে দাদা জানান, তাঁর শরীরে একটা অস্বস্তি হচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন। মুহূর্তের মধ্যে হাসপাতালের বেডে বসে ঢলে পড়েন। ততক্ষণে বৌদি (ছন্দবাণী) বিপদ বুঝে চিৎকার করতে শুরু করেছেন— ডাক্তার ডেকে আন! ডাক্তার ডেকে আন! আমি দৌড়ে রিসেপশনে যাই। দাদার বুকে ব্যথার কথা জানাতেই জুনিয়র ডাক্তার আর নার্সরা ছুটে চলে আসেন। ঘরে এসে বুকে পাম্প করতেও শুরু করেন তাঁরা।”

কিন্তু তারপর আর তাঁর শরীরে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মণিশঙ্করের কথায়, “একবার মনিটরে সামান্য সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। বুকে পাম্প করার সময় দাদা একবার হাতও তুলেছিলেন। সেটাও দেখলাম। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে আর দাদার কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। মনিটরও স্তব্ধ! যে সবুজ রেখাটা ওঠানামা করে, সেটা একেবারে স্থির হয়ে গেল! দীর্ঘ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে বুকে ‘পাম্প’ করা হয় সুব্রতের। কিন্তু চিকিৎসকদের কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি।”

আরও পড়ুন:যখন পড়বে না তাঁর পায়ের চিহ্ন ওই বাটে… শেষ যাত্রায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়

মণিশঙ্কর বলেন, এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার কিছু আগে হাসপাতালের অধিকর্তা দৌড়ে আসেন সুব্রতের কেবিনে। কিন্তু রোগীর অবস্থা দেখে তিনি কেবিনের বাইরে গিয়ে বসে পড়েন। সুব্রতকে দ্রত নিয়ে যাওয়া হয় উডবার্নের কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউ-য়ে। তার মধ্যেই যোগাযোগ করা হয় মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে। আইসিইউ-তে মেডিক্যাল বোর্ডের পাঁচ সদস্যের তত্ত্বাবধানে সুব্রতকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করা হয়। তার মধ্যে ওষুধ, ইঞ্জেকশন তো ছিলই, শরীরের বাইরে থেকে সাময়িক ‘সাপোর্ট’ পেসমেকার বসানোরও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনও কিছুতেই কিছু হয়নি। ততক্ষনে হাসপাতালে চলে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষপর্যন্ত তিনিই দীর্ঘদিনের সহকর্মী সুব্রতের মৃত্যুসংবাদ জানান সকলকে।

spot_img

Related articles

রাজ্যে শুরু SIR প্রস্তুতি: একাধিক পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের

গোটা দেশেই এসআইআর লাগু হবে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার (Gyanesh Kumar)। বিহারে ৬৫ হাজার...

আস্থা কোথায়? প্রধানমন্ত্রীর সভার দিন বুঝিয়ে দিলেন দিলীপ, কটাক্ষ তৃণমূলের

দৃশ্য এক, বিজেপির নক্ষত্রখচিত মঞ্চ। মালা, উত্তরীয়তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) বরণ করছেন একের পর এক বঙ্গবিজেপির...

বাংলা বিদ্বেষীকে পাশে বসিয়ে বাঙালি প্রেম! মোদির দ্বিচারিতাকে ধুইয়ে দিল তৃণমূল

বাংলায় এলেই বাংলা ভাষায় বক্তৃতা। এ তো নরেন্দ্র মোদির রেওয়াজ হয়েছেই। সম্প্রতি তিনি উত্তর ভারতের গোবলয়ের দেব-দেবী ছেড়ে...

রায় বেরোনোর পরেই জয়েন্টের তালিকা প্রকাশ: বোর্ডের কৃতিত্বে আনন্দ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা হাই কোর্ট ওবিসি সংক্রান্ত যে জট দীর্ঘদিন ধরে পাকিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছিল, শুক্রবার তা প্রতিহত হয়...