যখন পড়বে না তাঁর পায়ের চিহ্ন ওই বাটে… শেষ যাত্রায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়

হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর আজ বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। তিনি আসলেনও। তবে তাঁর প্রাণহীন দেহ আসল তাঁর বাড়িতে। শেষ বারের জন্য। না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বাড়ির সামনে অনুরাগীদের ভিড়। চোখে জল। শোকের আবহ বালিগঞ্জের পাড়ায়। কারো প্রিয় দাদা, কারো প্রিয় নেতা ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: “সুব্রত মুখার্জি অমর রহে”, বিধানসভায় শ্রদ্ধা রাজ্যপাল-স্পিকারের

বিধানসভা থেকে বালিগঞ্জের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দেহ। শেষবারের জন্য মন্ত্রীর মরদেহ দেখতে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন পরিজন এবং অনুগামীরা। বাড়ি থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবে। একডালিয়ায় ভিড় জমিয়েছেন সুব্রতর অনুগামীরা। তাঁকে চোখের জলে বিদায় জানালেন পরিবারের সদস্য ও অনুগামীরা।

নাড়ু খেতে চেয়েছিলেন সুব্রত। তাঁর বোন বুলবুল চট্টোপাধ্যায় কথাও দিয়েছিলেন যে ভাইফোঁটার দিন নাড়ু খাওয়াবেন। তা নাড়ু বানিয়েও রেখেছিলেন। কিন্তু খাওয়া আর হলো না‌। ফোঁটা নেওয়ার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন দাদা সুব্রত।

আর কিছুক্ষণের মধ্যে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে গান স্যালুটে বিদায় জানানো হবে কেওড়াতলা শ্মশানে। শুক্রবার রাতে হাসপাতাল থেকে ফেরার কথা ছিল সুব্রতর। ভাইফোঁটার ঠিক আগের দিন। তিন বোন ঠিক করেছিলেন, দাদা বাড়ি ফিরলে দেখা করতে যাবেন। সুব্রতর বাড়ির কাছাকাছি থাকতেন তাঁরা। এর মধ্যে একজন তনিমা চট্টোপাধ্যায়। তিনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তনিমা জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতেই দাদার জন্মদিন থেকে ভাইফোঁটা পালন করা হত। ঢালাও খাওয়া দাওয়াও হত। সাবেকি খাবার পছন্দ করতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পছন্দ করতেন পোস্তর বড়া, মাছের টক, পাঠার মাংস। কিন্তু এ বার সুব্রত অসুস্থ থাকায় খাবারের সেই বিপুল আয়োজন ছিল না। তবে যেহেতু সুব্রত মুখোপাধ্যায় খেতে ভালবাসতেন তা-ই নারকেল নাড়ুর মতো ইচ্ছেপূরণের ব্যবস্থা রেখেছিলেন বোনেরা। তবে সেই ইচ্ছে অপূর্ণই রয়ে গেল।

আরও পড়ুন: উনি দাদা আমি বোন, সম্পর্কের সেই সুতোটা আজ স্মৃতি হয়ে গেল: সুব্রতর প্রয়াণে শোকাহত মমতা

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের সারেঙ্গাবাদের ছেলে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছয়ের দশকে পড়তে  কলকাতায় আসেন তিনি। অ্যানথ্রোপলজিতে বিএসসি নিয়ে ভর্তি হন বঙ্গবাসী কলেজে পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিওলজি-তে মাস্টার্স। তারপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা মিউসিওলজি বা মিউজিয়াম স্টাডিজে। ছয়েরদশকে কংগ্রেসী ঘরানার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। শুরু করেছিলেন ছাত্ররাজনীতি দিয়েই। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গেই উত্থান তার। ১৯৭২-১৯৭৭ তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর এর মন্ত্রী ছিলেন। ঘনিষ্টভাবে কাজ করেছেন সিদ্ধার্থশংকর রায়ের সঙ্গে। কলকাতার ৩৬তম মেয়র তিনি।২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মেয়র পদে বহাল ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও সুব্রত মুখোপাধ্যায় যোগাযোগ ছিল নিবিড়।

 

 

Previous articleবিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদকেই সন্তুষ্ট থাকতে হল আকাশ কুমারকে
Next articleসন্ধ্যেয় চাউমিন খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, তারপর সব শেষ: হাসপাতালে সুব্রতর শেষ সময়