Wednesday, December 24, 2025

উনি দাদা আমি বোন, সম্পর্কের সেই সুতোটা আজ স্মৃতি হয়ে গেল: সুব্রতর প্রয়াণে শোকাহত মমতা

Date:

Share post:

দীপাবলির আলোর রোশনাইয়ের মাঝেই নিভে গেছে বঙ্গ রাজনীতির এক বর্ণনায় রাজনৈতিক চরিত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়(Subrata Mukherjee)। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত শাসক-বিরোধী সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনেকটা ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee)। অতীতের সেই সব কথা স্মরণ করে খানিক বিমর্ষ মমতা। সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাদা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মধুর সম্পর্কের কথা স্মরণ করে কলম ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি লেখেন:

কেন জানি না, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনটা বড় অস্থির লাগছিল। ঠিক কী তা বুঝিনি, তবে ছোটখাটো বিভিন্ন ঘটনায় মনে হচ্ছিল, কোথাও বোধহয় কিছু গোলমাল হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সুব্রতদার মৃত্যুসংবাদ।

বাড়িতে তখন কালীপুজো চলছে। আর আমি ক্রমাগত খবর পাচ্ছি, সুব্রতদার অবস্থা খারাপ। আরও খারাপ। পুজোতেও মন বসাতে পারছিলাম না। শেষ খবর যখন এল, তখন হোম চলছে। আহুতি হয়ে যাওয়ামাত্র এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে হাসপাতালে ছুটলাম। তবে সুব্রতদার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারিনি। তাঁকে ওই ভাবে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ছন্দবাণীবৌদিকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠালাম। জানি, এ শোকের সান্ত্বনা নেই। তবু এখন তো আর কিছু করার নেই।

সুব্রতদার অসুস্থতার খবর পেয়েছিলাম গোয়াতে। ফিরেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম দেখতে। সুব্রতদা বললেন, ‘‘আমি একদম ঠিক আছি। প্রোগ্রাম দে। আমিও গোয়ায় যাব। আর যেখানে যেখানে যেতে হবে বলিস। শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে না।’’ এমনই ছিল ওঁর জীবনীশক্তি। কথা বলতে ভাল লাগছে না। কিন্তু মনের মধ্যে কয়েক হাজার স্মৃতি ভিড় করে আসছে।

সুব্রত মুখোপাধ্যায় আমার কাছে রাজনীতির থেকেও বড় এক জন ‘দাদা’। যিনি সর্বদা আমাকে স্নেহের ছায়া দিয়েছেন। যখন যোগমায়া কলেজে ছাত্র ইউনিয়ন করি, সুব্রতদা তখন রাজ্যে অবিসংবাদী ছাত্র নেতা। ছাত্র পরিষদের সভাপতি। এক দিন ডেকে পাঠালেন। আমরা কয়েক জন গেলাম। উনি বললেন, ‘‘তোরা খুব ভাল কাজ করছিস। আমি জানি। চলে আয়। একসঙ্গে কাজ করব।’’ সেই শুরু।

১৯৮৪ সালে আমি যখন প্রথম লোকসভায় দাঁড়াই, তখনও প্রণবদার কাছে আমার নাম প্রথম করেছিলেন সুব্রতদাই। কারণ, প্রণবদা বলেছিলেন, যাদবপুরে একজন লড়াকু মেয়েকে প্রার্থী করতে চাইছেন রাজীব গান্ধী। আমি জানিও না, আমার নাম বলে দিয়েছিলেন সুব্রতদা। প্রণবদা জানতে চেয়েছিলেন, ও কি পারবে? শুনেছি, সুব্রতদা বলেছিলেন, পারলে, ও-ই পারবে
এতগুলো বছর ভালমন্দ, ঐক্য-বিরোধ সব কিছুর মধ্যে দিয়ে সুব্রতদার সঙ্গে আমার সম্পর্কের ভিত শক্ত হয়েছে। কখনও মনে হয়নি, আমি মুখ্যমন্ত্রী আর তিনি মন্ত্রী। সব সময় ভেবেছি, উনি দাদা। আমি বোন। ভুল হলে শিখিয়ে দেবেন। সেই সুতোটা আজ স্মৃতি হয়ে গেল। তাঁকে শত বার প্রণাম জানাই।

 

spot_img

Related articles

তাম্রলিপ্ত পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন অবৈধ, পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ হাইকোর্টের

তাম্রলিপ্ত পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে বড়সড় পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের। চেয়ারম্যান চঞ্চল কুমার খাঁড়ার নির্বাচন পদ্ধতিকে অবৈধ ঘোষণা করল কলকাতা...

ফের রক্তাক্ত কোচবিহার: দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতা

ফের দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কোচবিহারে। দিনহাটার (Dinhata) বাড়ি থেকে বেরোতেই গুলি চালানো হয় তৃণমূল নেতা মিঠুন রাজভরকে লক্ষ্য করে।...

টিউশন থেকে ফেরার পথে নাবালিকাকে গলার নলি কেটে খুনের চেষ্টা! চাঞ্চল্য মালদহে 

সাতসকালে নয়, একেবারে জনবহুল সন্ধ্যার অন্ধকারে ফেরার পথে নৃশংস হামলার শিকার হল এক স্কুলছাত্রী। সোমবার সন্ধ্যায় টিউশন পড়ে...

ক্ষত্রিয় সমাজ কার্যালয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিনিময় করলেন উৎসবের শুভেচ্ছা

উৎসবের মরসুমে শহর যখন আলোর সাজে সেজে উঠেছে, ঠিক তখনই জনসংযোগের চেনা মেজাজে ধরা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।...