ত্রিপুরায় এবার মা দুর্গার রূপে নামবেন মহিলারা, বিজেপিকে হারাবেই তৃণমূল

মণীশ কীর্তনীয়ার মুখোমুখি ত্রিপুরা তৃণমূল স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক

আগরতলা : তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বাংলার মতো ত্রিপুরাতেও সরকারি প্রকল্পের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন ত্রিপুরাবাসী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন ত্রিপুরা গড়ে উঠবে। বিজেপি ভয় পেয়েছে তাই লাগামছাড়া সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ভয় দেখিয়ে, হামলা, মামলা করে, কিডন্যাপ করেও তৃণমূল কংগ্রেসকে টলানো যাবে না। এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ব না বিজেপিকে।   বললেন সুবল ভৌমিক।

 

আরও পড়ুন: ত্রিপুরা পুরভোটের আগে আগরতলায় প্রচারে ঝড় তৃণমূলের, হাড়ে কাঁপুনি বিজেপির

পুরভোটের প্রস্তুতি কেমন?

উঃ প্রস্তুতি তুঙ্গে।  আগরতলা পুরনিগমের ৫১টা ওয়ার্ডের প্রার্থীদের সঙ্গে শনিবার ও রবিবার দু’দিন প্রার্থীদের নিয়ে টানা বৈঠক করলাম আমরা। প্রার্থীরা প্রত্যেকেই আত্মবিশ্বাসী। এক ইঞ্চি জমিও বিজেপিকে আমরা ছাড়ব না। বিজেপির গুন্ডারা গত কয়েকমাস ধরে টানা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস আগরতলা পুরনিগম-সহ নগর পঞ্চায়েত ও পুর পরিষদে প্রার্থী দেওয়ার পর থেকে বিজেপির সন্ত্রাস ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে। প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। এর আগে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর করেছে,  এবারে তৃণমূল কংগ্রেসের যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, শহরে হোক কিংবা গ্রামে বিজেপির গুন্ডারা তাঁদের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে।

ত্রিপুরবাসী কেন তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবে? কী আবেদন আপনারা ত্রিপুরার মানুষের কাছে রাখছেন?

উঃ বাংলা ও ত্রিপুরার সম্পর্ক বহু বছরের।  ১৯৭৭ সালে বাংলায় ক্ষমতায় আসে বামেরা। তার ছয় মাসের মধ্যেই ত্রিপুরাতেও ক্ষমতায় আসে তারা। বাংলার মতো এখানেও প্রায় ৩৪ বছর বামেরা শাসন ক্ষমতায় ছিল। অপশাসন বলাই ভাল। ২০১১ সালে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামেদের সরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার তৈরি  করেন। তারপর থেকেই ত্রিপুরার মানুষ চাইছেন তৃণমূল কংগ্রেস এখানেও ক্ষমতায় আসুক। সিপিএম ত্রিপুরাকে শেষ করে দিয়েছে। যেটুকু বাকি ছিল, বিজেপি  ত্রিপুরাকে আরও ৫০ বছর পিছিয়ে  দিল। ত্রিপুরার মানুষ এই দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাইছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার তৈরি হলে ত্রিপুরাবাসী কী পাবেন?

উঃ  কী পাবেন না তাই বলুন। বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে ত্রিপুরাবাসী সবদিক থেকে বঞ্চিত। ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে উচ্চশিক্ষার  সুযোগ নেই। শিক্ষকদের চাকরি নেই।  ১০৩২৩ জন শিক্ষক আজও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তাঁদের চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য। বেকারত্ব বাড়ছে হু হু করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে কোনও দিশা নেই।  গোটা ত্রিপুরা রাজ্যে চোরাচালান ও মাদকের রমরমা কারবার।  বেকার যুবকরা এতে জড়িয়ে পড়ছে। ত্রিপুরায় উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা, হাসপাতাল কিছুই নেই। আমরা নেই রাজ্যের বাসিন্দা।

বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রায় ১০০টার কাছাকাছি জনমুখী প্রকল্প চালু করেছে। স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী। বার্ধক্যভাতা,  বিধবাভাতা এরকম আরও কত কী। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ত্রিপুরার মানুষও এই সুযোগ- সুবিধাগুলি পাবেন। তাই ত্রিপুরাবসীর কাছে আমাদের আবেদন,  আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরাও সবটা দিয়ে আপনাদের পাশে থাকব। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন ত্রিপুরা গড়ব।

আগরতলা পুরনিগমে তৃণমূল কংগ্রেস ৫১টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি কেমন?

উঃ  ৫১টি আসনে প্রার্থী দিলেও আগরতলা শহরের প্রার্থীদের ওপরেও সন্ত্রাস চালাচ্ছে বিজেপি। এখানেও চারজন প্রার্থী বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বিজেপি লাগামছাড়া সন্ত্রাস চালাচ্ছে গোটা ত্রিপুরায়। আমরা চাই শান্তিতে পুরভোট হোক। মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারলে বিজেপি গোহারা হারবে। ওরা সেটা ভাল করেই জানে। তাই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে চাইছে। কিন্ত বিজেপি সফল হবে না। ভয় দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে রোখা যাবে না। আমরা ডোর টু ডোর প্রচার শুরু করেছি।

সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন। বিজেপির এই লাগামহীন সন্ত্রাসের মোকাবিলা কীভাবে করবেন?

উঃ  ত্রিপুরার মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। বিজেপি যত সন্ত্রাস করবে আমাদের জেদ তত বাড়বে।  বিজেপির ভয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন প্রার্থীও মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না। আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা আটকানোর জন্য কতরকম ফন্দিফিকির করেছে বিজেপি সরকার ও তার দলদাস পুলিশ-প্রশাসন।  তাও আটকাতে পারেনি। সভা হয়েছে। এবারও ওরা যতই সন্ত্রাস করুক কিছুই করতে পারবে না।  ৮ তারিখ বিকেল থেকে সর্বশক্তি দিয়ে আগরতলা-সহ নগর পঞ্চায়েত ও পুর পরিষদ এলাকায় প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস।

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের প্রচারেও তো হামলা হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে কী করবেন?

উঃ তৃণমূল কংগ্রেস কোনও গন্ডগোল, অশান্তি চায় না। কিন্তু ভোটের প্রচারে বেরিয়ে প্রার্থীদের ওপর হামলা হলে আমরাও চুপ করে বসে থাকব না। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, পুরভোটের আগে প্রচারপর্বে অন্তত দু’বার ত্রিপুরায় আসবেন। তিনবারও আসতে পারেন। আমরাও তৈরি। এতদিন বিজেপি এখানে একচেটিয়া ভোট করেছে। এবার তা হবে না। মানুষ বিজেপিকে বুঝে নিয়েছে। দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসও ত্রিপুরার মাটিতে বিজেপিকে বুঝে নেবে। লড়াই হবে চোখে চোখ রেখে।

প্রার্থী তালিকায় প্রায় অর্ধেক মহিলা। সংখ্যার হিসেবে ২৮ জন। মহিলা প্রার্থীদের নিয়ে কতটা আশাবাদী?

উঃ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় এত সংখ্যায় মহিলা প্রার্থী দেখে বিজেপির ঘুম উড়ে গেছে। ওরা ভাবতেও পারেনি ওদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার জন্য  ত্রিপুরার মাটিতে মহিলারাও মা দুর্গার রূপ নিয়ে নেমে পড়বেন। এসব দেখেই বিজেপি সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।  আর ত্রিপুরার কিছু রাজনৈতিক দল আছে, যাদের কোথাও কোনও প্রভাব জনভিত্তি কিছুই নেই, তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে পিছন থেকে বিজেপি তাদের মদত দিচ্ছে। এভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে রোখা যাবে না। পুরভোটে তৃণমূল কংগ্রেস জিতছে।
[10:49 am, 08/11/2021] 9674258945:

[10:50 am, 08/11/2021] 9674258945:

Previous articleঅর্থ-নারীচক্র যোগের প্রমাণ আছে! দিলীপকে নিশানা করে ফের বিস্ফোরক টুইট তথাগতর
Next articleদূরত্ব মুছে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে লালকৃষ্ণ আডবানির বাড়িতে মোদি