একদিকে গুরু নানকের আবির্ভাব দিবস, অন্যদিকে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন। পবিত্র এই দিনটিতে কলকাতার বুকে উদ্বোধন হল রাজ্যের শাসক দল তৃণলমূল কংগ্রেসের মুখপত্র “জাগো বাংলা”-এর নতুন আরও একটি স্টান্ডের। উত্তর কলকাতার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে কো-অর্ডিনেটর সোমা চৌধুরী ও তৃণমূল নেতা পিয়াল চৌধুরীর উদ্যোগে আজ, শুক্রবার জাগো বাংলার নতুন একটি স্ট্যান্ডের উদ্বোধন হল আমহার্ট স্ট্রিটে। উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন উত্তর কলকাতা তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তাপস রায়, বর্ষীয়ান বিধায়ক অশোক দেব, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, বিধায়ক বিবেক গুপ্তা, রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সহ তৃণমূল নেতৃত্ব।

জাগো বাংলার এই স্ট্যান্ড উদ্বোধন থেকেই “জাগো ভারত”-এর ডাক দিল তৃণমূল। এদিনের কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রবল চাপের কাছে নতিস্বীকার করে কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। যা সারা দেশের কৃষকদের লড়াই-সংগ্রামের জয়। বাম আমলে এক সময় এই বাংলার বুক থেকেই কৃষি আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই আপসহীন লড়াইয়ের ইতিহাস আজও সকলের স্মৃতিতে টাটকা। তাই এদিন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের জয় আরও বেশি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনকে মনে করিয়ে দিল। এবং আগামীদিনে গোটা ভারত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জেগে উঠবে। দিল্লির মসনদ থেকে উৎখাত করবে বিজেপিকে। এদিন জাগো বাংলা স্ট্যান্ড উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে সেই বার্তার দেওয়া হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে এবার ভারতকে জাগানোর ডাক দেওয়া হল।

এদিনের অনুষ্ঠানে যা বললেন তৃণমূল নেতারা

ফিরহাদ হাকিম: উত্তর কলকাতায় এলেই অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেন্ট্রাল কলকাতায় তৃণমূলের ইউনিট খোলার গল্প শোনন ফিরহাদ হাকিম। তাপস রায় চিনু হাজরার সঙ্গে লুকিয়ে মিটিং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এসে শিয়ালদহের কাছে সেই পার্টি অফিস উদ্বোধন করেন। স্মৃতি আওড়াতে আওড়াতেন স্টালজিক ফিরহাদ। তিনি বলেন, “জাগো বাংলা শুধু দলের কাগজ নয়। বাংলার জাগরণকে দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাগজের নাম জাগো বাংলা। বাংলার মানুষ বিভেদকামী শক্তিকে কখনও ঠাঁই দেয় না। তাই তো এখানে বড় দিদির নাম মমতা আর ছোট ভাইয়ের নাম ফিরহাদ হয়। জাগো বাংলাকে এবার জাগো ভারতের রূপ দিতে হবে। বাংলা দিয়ে কৃষি আন্দোলনের সূচনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষি আন্দোলনের রূপকার।



তিনি আরও বলেন, “গোয়া হোক ত্রিপুরা হোক যুব সমাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেখানে জাগো বাংলার বড় ভূমিকা রয়েছে। তাইআজ শুধু একটি স্ট্যান্ড নয়, তৃণমূলের আদর্শের উনমোচন। সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নেই, সেই কথা বলে জাগো বাংলা। সত্যিকারের কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেস। কখনও সিপিএমের সঙ্গে কখনও বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা সমঝোতা করে না তৃণমূল, যেটা কংগ্রেস করে থাকে। আমরা মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধীর মতো মহান মানুষ ও প্রকৃত কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।”


তাপস রায়: আমাদের নেত্রীর বার্তা। দল কী চাইছে? তা জানতে জাগো বাংলার গুরুত্ব অপরিসীম। এখন বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যমের মালিক বিজেপির নেতারা। বিজেপি সংবাদ মাধ্যমকে কিনে নিচ্ছে বা ভয় দেখিয়ে ম্যানেজ করছে। কিন্তু জাগো বাংলা মানুষের কথা বলে। এখন ডেইলি হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমও হয়েছে।

আজ ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন। একটি সময় তাঁকে দেখে সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছি। আর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূল করছি। বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদি এই পবিত্র দিনে কৃষি আইন বাতিলের কথা বলে পিছু হটেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম কৃষকদের জন্য সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে লড়াই করেছে। সুপ্রিম কোর্ট তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কৃষকের স্বার্থে, কৃষি জমির স্বার্থে বিধানসভায় প্রস্তাব এনেছিলাম আমরা। আমাদের দলের সাংসদরা পার্লামেন্টে লড়াই করেছে। সর্বোপরি কৃষকরা লড়াই করেছে।

কুণাল ঘোষ: আপনারা সব কাগজ পড়ুন। সব চ্যানেল দেখুন। তবে সঙ্গে জাগো বাংলাও পড়ুন। আজ এক ঐতিহাসিক দিন। যেখানে কৃষকদের আন্দোলনে পিছু হটে কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আসলে সামনে বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন, তারপর লোকসভা ভোট। সব জায়গাতেই গো-হারা হারবে বুঝতে পেরেও মোদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর উত্তর কলকাতা বিধানসভা ভোটে ৭-এ ৭ করেছে। এবার পুরভোটে ৬০-এ ৬০ করবে।

শান্তনু সেন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকে বাংলা আগেই জেগেছে। বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এবার মমতা জাগো ভারত হবে। সবাই জাগো বাংলার গ্রাহক হোন। অন্যদের গ্রাহক হওয়ার জন্য বলুন।
অশোক দেব: জাগো বাংলা পড়ুন, লোককে পড়তে বলুন। আমিও প্রতিদিন পড়ি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নাম এই জাগো বাংলা।

৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের জাগো বাংলা স্ট্যান্ড উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে পিয়াল চৌধুরী, সোমা চৌধুরী ছাড়াও স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অরুণ হাজরা, রাজেশ সিনহা, তপন ঘোষ, উত্তর কলকাতার যুবনেতা তথা কলকাতা পুরসভার কো-অর্ডিনেটর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু, তুষার শীল সহ আরও অনেকে।

আরও পড়ুন- গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আয়ুর্বেদ ডাক্তার থেকে হয়েছেন খাদান মালিক, CBI তদন্তের দাবি তৃণমূলের