পাহারের রানি উটি

১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। সেই উপলক্ষে নীলগিরি পর্বতের কোলে অবস্থিত জনপ্রিয় শৈল শহর উটি-র উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় শৈল শহর উটি। অবস্থান দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বতের কোলে। তামিলনাড়ুর এই পাহাড়ি অঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য সারা পৃথিবীর পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। তাই উটিকে পাহাড়ের রানিও বলা হয়। একটা সময় টোডা উপজাতিদের বসবাস ছিল। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলকে উন্নত করে তোলেন। জানা যায়, উটি নামটি উটাকামন্ড থেকে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। শহরের অর্থনীতি গড়ে উঠেছে মূলত পর্যটনের উপর নির্ভর করেই।

কী দেখবেন?
উটি শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দোদাবেত্তা। এটা উটির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা ২৬২৩ মিটার। এই কেন্দ্রবিন্দু থেকে নীলগিরি পর্বত ও উটি শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। খালি চোখের পাশাপাশি দেখা যায় দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও। তামিলনাড়ু পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন স্থাপন করেছে একটি টেলিস্কোপ ঘর। সেখান থেকে আরও ভালভাবে আস্বাদন করা যায় উটি শহর ও পাহাড়ের অপরূপ রূপ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ যেন পাহাড়ের বুকে সবুজ গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। পর্যটকদের সবথেকে বেশি আকৃষ্ট করে এই জায়গাটি। যাঁরা পাহাড়-পর্বত ভালবাসেন, তাঁদের জন্য আদর্শ বেড়ানোর জায়গা। অকারণ কোলাহল নয়, নীরবতা বজায় রেখে উপভোগ করতে হয় পাহাড়ি প্রকৃতিকে। উঁচু পাহাড়ের সামনে স্থির দাঁড়ালে চোখে পড়বে হাজার হাজার প্রজাতির গাছপালা। কিছু চেনা, কিছু অচেনা। গাছে গাছে নানারকমের পাখি। তারা মাতিয়ে রাখে পাহাড়ি পরিবেশ।
উটির ঈক পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত গভর্নমেন্ট রোজ পার্ক। পরিচর্যা করে তামিলনাড়ু হর্টিকালচ্যার ডিপার্টমেন্ট বা তামিলনাড়ু উদ্যান দফতর। এখানে ৩৬০০-টিরও বেশি প্রজাতির এবং বিভিন্ন রঙের গোলাপ দেখতে পাওয়া যায়। মনে করা হয় এটা দেশের মধ্যে গোলাপের সর্বাধিক ভাণ্ডার। এই বাগানটি সারা বিশ্বের ১৫টি গোলাপ বাগানের মধ্যে একটি। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ রোজ সোসাইটিস থেকে গার্ডেন অফ এক্সেলেন্স পুরস্কার পেয়েছে।
উটি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পায়কারা জলপ্রপাত। পিকনিক স্পট হিসেবে অসাধারণ। পাইন গাছ সাজিয়ে রেখেছে সৌন্দর্য। এখানকার লেকে স্পিড বোট রাইডে আনন্দ উপভোগ করা যায়। এর পাশাপাশি আছে কালাহাটি জলপ্রপাত। উটি থেকে মাত্র ১৩ কিমি দূরে। এই জলপ্রপাত প্রায় ৩৬ মিটার নিচে একটি স্পটে পড়ে। কালাহাটি জলপ্রপাত কলহটি ঘাটের একটি অংশ। এই পাহাড়ি অঞ্চলটি মূলত বন্যজীবনের জন্য বিখ্যাত। রয়েছে প্যান্থার, মহিষ, বাইসন এবং শম্বর ইত্যাদি।
এছাড়াও উটিতে আছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। পাহাড়ের কোলে প্রায় ২২ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বাগান। ফুলের গাছ, সুন্দর সুন্দর গুল্ম সহ বিরল রঙের লিলি ও বিভিন্ন ফার্ন ও অর্কিড-এর আবাসস্থল। বহু পর্যটক ঘুরে দেখেন এই গার্ডেনটি।

উটি শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে আছে একটি লেক। কৃত্রিমভাবে নির্মিত। আছে নৌবিহারের সুব্যবস্থা। কান পাতলে শোনা যায় পাখির কনসার্ট। এই অঞ্চলের কাছেই আছে একটি শিশু উদ্যান। এই শিশু উদ্যানে টয় ট্রেন চড়ে শিশুরা আনন্দ পেতে পারে। উটি লেকের কিনারা বরাবর আছে একটি হরিণ উদ্যান। যেটা ভারতের কয়েকটি উচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত চিড়িয়াখানার মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি আছে ওয়াক্স ওয়ার্ল্ড এবং ট্রাইবাল মিউজিয়াম। দুটিই উটির গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। আছে আরও অনেক কিছুই। তবে উটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে মূলত পাহাড়ের জন্য। নীলগিরি পর্বতের পদে পদে ছড়িয়ে রয়েছে রোমাঞ্চ। গাড়ি নিয়ে উঠলে একরকম, পায়ে হেঁটে বেড়ালে আর এক রকমের অনুভূতি। সময় বিশেষে বদলে যায় পাহাড়ের চেহারা।

কীভাবে যাবেন?
বিমানবন্দর নেই উটিতে। কাছের বিমানবন্দরটি উটি থেকে প্রায় ৯৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নাম কোয়েম্বাটোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে ক্যাবে চড়ে পৌঁছতে। বিমানবন্দর না থাকলেও, উটিতে তিনটি হেলিপ্যাড রয়েছে। যার মধ্যে একটি থিত্তুকালে এবং বাকি দুটি কোদানাড়ে অবস্থিত। আছে রেল যোগাযোগ। উদাগামণ্ডলম রেলওয়ে স্টেশন নেমে উটি যাওয়া যায়। তবে কাছাকাছি বড় রেলওয়ে স্টেশনটি হল কোয়েম্বাটোর জংশন। যা উটি থেকে প্রায় ৮৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হাওড়া এবং কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়ে কোয়েম্বাটোর-এর ট্রেন। আছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও। সড়কপথে কুন্নুর ও কোয়েম্বাটোর থেকে যথাক্রমে ১৯ কিলোমিটার ও ৮৪ কিলোমিটার দূরে উটি অবস্থিত। তামিলনাড়ু রাজ্য সড়ক পরিবহণ নিগমের অনেক বাস উটিতে যাতায়াত করে।

কোথায় থাকবেন?
বেশি, মাঝারি এবং কম বাজেটের হোটেল রয়েছে উটিতে। আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলেই ভাল। বেশিরভাগ হোটেলেই আছে খাওয়ার ব্যবস্থা। পাশাপাশি আছে রেস্তোরাঁ।

বিবিধ উটি অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকারের কথ্য ভাষা প্রচলিত রয়েছে। যেমন তামিল, কন্নড়, মালয়ালম, বাডাগা, ইংরেজি। বাঙালি পর্যটক প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। হোটেলে আছেন অনেক বাঙালি কর্মচারী। শীতকালে উটি বেড়াতে গেলে ভারী উলের পোশাক অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। সারাবছর ধরেই উটির আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে। তবে শীতকালে দেখা যায় অন্য রূপ। চাইলে এবার শীতেই উটি ঘুরে আসতে পারেন। কোভিড বিধি মেনে গেলে কোনও সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন:Issue BSF: বিএসএফ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট ধনকড়ের, পাল্টা ধুয়ে দিলেন কুণাল

Previous articleIssue BSF: বিএসএফ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট ধনকড়ের, পাল্টা ধুয়ে দিলেন কুণাল
Next articleMithun Chakraborty: মিঠুনের বিরুদ্ধে ‘উস্কানিমূলক মন্তব্যের’ অভিযোগ খারিজ হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন অভিযোগকারীরা; মন্তব্য কুণালের