বিমান সেবিকা থেকে মানব সেবক, রেকর্ড গড়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী অনন্যা

অনন্যা ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি কলোনির মানুষের জীবনধারা যেমন বদলে দিয়েছেন তেমনি বদলে দিয়েছেন আর্থসামাজিক পরিস্থিতি

বিমান সেবিকার মোটা মাইনের চাকরি। “মিস ক্যালকাটা” খেতাব। ইংরেজিতে স্নাতক। সম্পূর্ণ অন্য জগৎ থেকে এসে রাজনীতির আঙিনায় পা অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এরপর রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেই সফলতা। ২০১৫ সালে কলকাতা পুরসভার অন্যতম বড় ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হয়েছিলেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় (Annaya Banerjee)। যাদবপুরের এই ওয়ার্ড একটা সময় বাম দুর্গ ছিল। প্রথমবার ভোটে দাড়িয়েই সেই মিথ ভেঙে দেন অনন্যা। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, পিছিয়ে পড়া অনুন্নত একটি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কি দক্ষ কাউন্সিলর হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন? অচিরেই সেই দ্বিধা ভেঙে দেন অনন্যা। দীর্ঘ বাম জমানায় যে পরিষেবা থেকে মানুষ বঞ্চিত ছিল সেটা মাত্র পাঁচ বছরেই করে দেখিয়ে দেন তিনি। প্রমাণ করে দিয়েছেন, দলীয় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদৃষ্টি সীমাহীন।

এবারও আসন্ন কলকাতা পুরসভা (KMC) নির্বাচনে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর অনন্যাকে টিকিট দেয় তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। একদিকে পুরপ্রতিনিধি হয়ে যেমন মানুষের কাজ করেছেন অন্যদিকে রাজ্য সরকারের প্রকল্প গুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। জয় প্রত্যাশিত ছিলই। নজরে ছিল ব্যবধান। অবশেষে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বকালীন রেকর্ড গড়লেন অনন্যা। ৩৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে কলকাতা পুর নির্বাচনে জয়ী হলেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে জয়ের ব্যবধানে দ্বিতীয়।

অনন্যা ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি কলোনির মানুষের জীবনধারা যেমন বদলে দিয়েছেন তেমনি বদলে দিয়েছেন আর্থসামাজিক পরিস্থিতি। একটা সময় এই এলাকার মানুষ নিজেকে মুকুন্দপুরবাসী বলতে লজ্জা পেতেন, আর এখন তাঁরাই গর্বের সঙ্গে মুকুন্দপুরের নামটি উচ্চারণ করেন। গত পাঁচ বছরে শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে এই ওয়ার্ডের মানুষ তপশিলি শংসাপত্র পেয়েছেন ২৬৪৭ জন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছেন ৭৮৯৬টি পরিবার। বিধবাভাতা, বার্ধক্য ভাতা, লক্ষীর ভান্ডারের মাধ্যমে প্রতিমাসে ৮৮১২ জন মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এর পাশাপাশি পরিস্রুত পানীয় জল উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রিজার্ভার নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন করে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার জলের লাইন পাতা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার উন্নয়ন, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা হয়েছে অনন্যার হাত ধরে। কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম সেজে উঠেছে নতুনভাবে।

এবার ফের পুরপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে অনন্যা প্রথম অগ্রাধিকার দেবেন কলোনি অঞ্চলে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারের হাতে জমির পাট্টা দলিল তুলে দিয়ে। ইতিমধ্যেই সেই সমীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে কলোনির মহিলাদের জন্য নিখরচায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসানো অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প।

রেকির্ড মার্জিনে জয়ের পর অনন্যা জানালেন, “মানবসেবার যে মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার সুযোগ ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ আমাকে দিয়েছে সেই ঋণ আরও ভালো করে শোধ করতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বাংলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”

আরও পড়ুন- জায়ান্ট কিলার অরূপকে জিতিয়ে কেঁদে ফেললেন মন্ত্রী অরূপ

Previous articleতৃণমূলের পথে পুরভোটে জয়ী তিন নির্দল কন্যা
Next articleOnicron Crisis : বেনাপোল দিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় ভারতে প্রবেশ বন্ধ