বিশ্বব্যাপী মুসলিম বিদ্বেষের মঞ্চ ‘ট্র্যাডস’  এর হদিশ এবার ভারতেও

২০২১ সালের জুলাই মাসে, ‘সুল্লি ডিলস’ নামের একটি অ্যাপে বেশ কিছু মুসলিম মহিলার ছবি আপলোড করা হয়েছিল, যার সাথে লেখা ছিল: “ডিল অফ দ্য ডে”। একইরকমভাবে ১ জানুয়ারি ২০২২-এ মুসলিম মহিলাদের শত শত ফটো ব্যবহার করে আর একটি অ্যাপ আপলোড করা হয় ‘বুল্লি বাই” নামে, এখানেও লেখা ছিল ‘ইওর ডিল অফ দ্য ডে ‘।

দ্বিতীয় অ্যাপ প্রকাশ্যে আসার পরেই ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তে শুরু করে মুম্বাই পুলিশ এবং দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ইন্টেলিজেন্স ফিউশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অপারেশনস (আইএফএসও) ইউনিট। মুম্বাই এবং দিল্লি পুলিশ এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে, যাদের সকলের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে।

ওই যুবক, যুবতীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, প্রায় ৬ মাসের ব্যবধানে তৈরী হওয়া অ্যাপ দুটির মধ্যে যোগসূত্র আছে।ওমকারেশ্বর ঠাকুরকে ‘সুল্লি ডিলস’ অ্যাপ তৈরি করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয় মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে। আসামের জোরহাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নীরজ বিষ্ণোইকে  বুল্লি বাই অ্যাপের জন্য।

ওমকারেশ্বর ঠাকুর  জেরায় জানায় যে সে ‘ট্র্যাডস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সদস্য। ভারতে এই শব্দটি পরিচিত নয়। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (আইএফএসও) কেপিএস মালহোত্রা বলেছেন, “ওমকারেশ্বর ঠাকুর টুইটার হ্যান্ডেল @gangescion ব্যবহার করে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে  ‘ট্র্যাডসমহাসভা” নামে টুইটারে একটি গ্রুপে যোগ দিয়েছিলেন।ওই গ্রুপে আলোচনার সময়, সদস্যরা মুসলিম মহিলাদের ট্রোলিং এবং মানহানি সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন।”

ঠাকুর পুলিশকে জানিয়েছে যে তিনি  ‘ট্র্যাডস’ এর একজন সদস্য ছিলেন, যেখান থেকে মুসলিম মহিলাদের ছবি ব্যবহার করে নিলাম করার ধারণা এসেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি  ‘ট্র্যাডস’ গ্রুপ সক্রিয় ছিল। ‘ট্র্যাডস’ এর কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। কিন্তু  ‘ট্র্যাডস’ দের প্রায়ই অতি-ডানপন্থী কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তারা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। ভারতে ‘ট্র্যাডস’ বিবেচনা করা হয় যারা উচ্চ বর্ণের আধিপত্যের আহ্বান জানায়।  জন্মগত কারণেই  ব্রাহ্মণরা সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের শীর্ষে বসে থাকবে বলে প্রচার করে । তারা বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মের নারী-পুরুষের মধ্যে বর্ণ সমতা এবং বিবাহের ধারণার বিরোধিতা করে।

আরও জানা গিয়েছে, তারা যে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলি এবং প্ল্যাটফর্ম গুলো ব্যবহার করে তা নারীর ক্ষমতায়ন এবং দলিতদের উত্থানের বিরোধিতাকারী নিপীড়ক মতামতের পক্ষে রেফারেন্সে পূর্ণ। ভারতীয় সংবিধানকে মনুস্মৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার দাবির প্রতিধ্বনিত উল্লেখ রয়েছে। মনুস্মৃতি একটি প্রাচীন আইন-পুস্তক যা কঠোর ভাবে শূদ্রদের শিক্ষার অধিকার (বেদ অধ্যয়ন) অস্বীকার করেছিল। ‘ট্র্যাডস’  রা বর্ণ-বর্ণের শ্রেণীবিন্যাসকে সমর্থন করে যেখানে ব্রাহ্মণরা (পুরোহিত, শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণী) শীর্ষে বসে এবং তারপরে ক্ষত্রিয় (যোদ্ধা শ্রেণী), বৈশ্য (ব্যবসায়ী এবং পেশাদার) এবং শূদ্র (শ্রমিক এবং নিম্ন শ্রেণীর কৃষক)। তারা জাতির বাতিল ধারনা অনুসরণ করার পক্ষে মত দেয়।

জন্মের ভিত্তিতে বর্ণ শ্রেণিবিন্যাস ব্যবস্থা।মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারণা ‘ট্র্যাডস’  দের মধ্যে আর একটি আলোচিত বিষয়। যদিও ওমকারেশ্বর ঠাকুরকে গ্রেপ্তারের পর ভারতে পুলিশ এই প্রথম ভারতে ‘ট্র্যাডস’ এর  উপস্থিতি স্বীকার করেছে, তবে তারা দেশে সোশ্যাল মিডিয়া বিতর্কে নতুন নয়। টুইটার ২০১৯ সালে   ‘ট্র্যাডস’ এর  চারপাশে উত্তপ্ত বিতর্কের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে, বিশেষত পুরী শঙ্করাচার্যের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে শুরু করার পরে। তখনই ডানপন্থীদের মধ্যে তীক্ষ্ণ বিভাজন হয়েছিল।

Previous articleকোভিড পরীক্ষা নিয়ে নয়া নির্দেশিকা দিল আইসিএমআর
Next articleSc EastBengal: শাস্তি কমল না পেরোসিভিচের, আপিল কমিটির বৈঠকে গড় হাজির লাল-হলুদ ম‍্যানেজমেন্ট