শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণে শোকের ছায়া অভিনয় জগতে, কী বলছেন বিশিষ্টরা

এ যেন এক যুগের অবসান।রবিবার চলে গিয়েছেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র (Shaoli Mitra)। মৃত্যু কালে বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। ২০১৯ সাল থেকে নানান শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। শাঁওলির প্রয়াণে গভীর শোক জানিয়েছেন পর্দা, মঞ্চ দুনিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘অনেক আদর পেয়েছি, অনেক ভালবাসা। আদর করে কত কী খাইয়েছিলেন। আমি যে তাঁর বন্ধু বিপ্লবকেতন চক্রবর্তীর মেয়ে! অনেক কিছু শিখেছি, মঞ্চাভিনয়ের খুঁটিনাটি। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছি তাঁর অভিনয়, সেই ছোট্টবেলা থেকে। আমার নাটক দেখে ফোন করে খুব প্রশংসা করেছিলেন। আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলাম।’সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লিখেছেন, শাঁওলি মিত্র’র মৃত্যুসংবাদ আমাকে বড় হতবাক করলো। চেনা মানুষগুলো, যাঁদের ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, তাঁদের যেন হই রই করে বেঁচে থাকার কথা। কার যে গোপনে বয়স বাড়ে,কার যে অসুখ করে, জানা হয় না। ২০০৭ সালে আমাকে যখন কলকাতা থেকে বের করে দিয়ে দিল্লিতে গৃহবন্দি করা হয়েছিল, ক’জন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, শাঁওলি মিত্র ছিলেন তাঁদের একজন। তিনি আমাকে ফোন করতেন, মনে সাহস দিতেন। আমি চিরকালই তাঁর গুণমুগ্ধ।’

‘স্বাতীলেখার পর শাঁওলিও চলে গেল…আমার ৮৬ বছর বয়স হয়ে গেল। তাও আমি রয়ে গেলাম’,শাঁওলি মিত্রের (Shaoli Mitra) মৃত্যুতে শোকার্ত রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। নাট্যকার অভিনেতা দেবশংকর হালদার জানিয়েছেন, খুব কাছ থেকে শাঁওলি মিত্রকে দেখলেও এখটা সম্মানের দূরত্ব বারবার বজায় ছিল। শাঁওলি মিত্রর অভিনয় থেকে রঙ্গমঞ্চে অভিনয় শিখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘উনি যখন অভিনয় করতেন আমরা হাঁ হয়ে দেখতাম আর শিখতাম অভিনয় কাকে বলে বা কোন পথে অভিনয় যেতে পারে। অভিনয় কোথায় কোথায় আমাদের স্পর্ধিত করে, শিখিয়ে দেয় কী কী করার আছে সেটা শাঁওলি মিত্রের অভিনয় দেখেই শেখা। শাঁওলি মিত্র আমাদের কখনও হাতে ধরে অভিনয়ের ক্লাস করাননি কিন্তু অভিনয় দিয়ে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন একের পর এক পাঠ।’
বাংলা নাট্যজগতের আর এক কিংবদন্তি রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত প্রিয় সহকর্মীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘শাঁওলিরা তো আর পুরোপুরি চলে যায় না। না থেকেও তাঁরা থেকে যায় নিজেদের কাজের মধ্যে, আলোচনায়, মননে। শাঁওলির সঙ্গে শুধু সহ অভিনেত্রী হিসেবে সম্পর্ক ছিল না। বরং ব্যক্তিগত স্তরেও সম্পর্ক ছিল। সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করেছি। গ্যালিলিওতে অভিনয় করেছি। খুব হইহই হত।’
সোহিনী সেনগুপ্ত জানান, খুব কাছ থেকে তিনি দেখেছেন শাঁওলি মিত্রকে (Shaoli Mitra)। দিন কয়েক আগেও তাঁর কথা হয়েছে ‘শাঁওলি মাসি’র সঙ্গে। তিনি হতবাক এমন একটা দুঃসংবাদ পেয়ে। পুরোনো স্মৃতি ভাগ করে নিয়ে এক সাক্ষাত্কারে অভিনেত্রী জানান, ‘আমার ছোটবেলাটা জুড়ে একটা ইম্পরট্যান্ট পার্ট ছিলেন তিনি। কত কোলে করে ঘুরে বেরিয়েছি। মাঝখানে যখন অসুস্থ হল তখনও দেখা হয়েছিল। আমায় বলল, বাবুয়া (সোহিনীর ডাকনাম) শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।’

নাট্যাকার অবিনেতা দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উনি শেষ মুহূর্তে যাঁদের চেয়েছিলেন কাছে থাকুক, তাঁর মধ্যে আমি একজন। ওঁর এই স্নেহ-ই আমার কাছে অনেক বড় পাওনা। মাথার ওপর একজন অভিভাবক ছিলেন এতদিন। যখনই কিছু লিখেছি, নতুন কাজে হাত দিয়েছি, একবার ওঁর কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতাম যে, কেমন লাগল শাঁওলিদি? সেই কথা বলার মানুষটাকে হারিয়ে ফেললাম চিরতরে। একটা যুগের অবসান ঘটল।” কথাগুলো বলতে বলতেই গলা বুজে এল দেবেশের।

মাত্র এক বছর আগেই জন্মদাত্রী মাকে হারিয়েছেন নাট্যকার অর্পিতা ঘোষ। শাঁওলি মিত্রের প্রয়াণের শোকও তার চাইতে কম কিছু নয় অর্পিতা ঘোষের কাছে। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, “আমার আরেক মাকে হারালাম। কীভাবে শিড়দাঁড়া সোজা রেখে চলতে হয়, ওঁর কাছ থেকেই পাঠ পেয়েছি। উনি শিখিয়েছিলেন জীবনকে দেখতে। আমার কাছে একটা অধ্যায়ের অবসান হল। আমাকে সবসময়ে বলতেন শাঁওলিদি, কারও কথায় কান দিবি না। তুই যেটা ঠিক মনে করবি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটাই করার চেষ্টা করবি।”

Previous articleভর সন্ধেবেলা আলমারি ভেঙে নগদ ও লক্ষাধিক টাকার গয়না চুরি!
Next articleশিরোমণি গড়ে লক্ষ্মীবাঈ-এর ছবি, সরানোর আবেদন ‘ভালোবাসি কর্ণগড়’ সংগঠনের