Netaji Subhash Chandra Bose:কেন প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি নয় নেতাজিকে ?

“আমি সুভাষচন্দ্র,ভগবানের নামে পবিত্র শপথ গ্রহণ করছি যে, ভারতবর্ষ এবং আমার আটত্রিশ কোটি ভারতবাসীর জন্য…”

ঠিক এই ক’টি শব্দ। আবেগে বোধহয় গলা কেঁপে গিয়েছিল। নাকি মাইক সামান্য বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। শরীর জুড়ে আত্মবিশ্বাস যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। অদম্য,সাহসী,নির্ভীক,ঋজু, পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির মানুষটার দিকে কয়েক হাজার চোখ। সভায় পিন পতনের শব্দ। গোটা পূর্ব এশিয়ার লিগের প্রতিনিধি আর আজাদ হিন্দ ফৌজি অফিসারেরা সেখানে। কারও গায়ে কাঁটা দিল, কারও চোখে জল, কেউবা চোয়াল শক্ত করে আবেগ রুখে দিলেন ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায়।

আরও পড়ুন:ইন্ডিয়া গেটের সামনে নেতাজির মূর্তি গড়ছেন কোন শিল্পী?

১৯৪৩।২১ অক্টোবর।সকাল সাড়ে দশটা। পূর্ব এশিয়ার ডাই তোয়া গোঁকিজো। শপথ নিলেন প্রধানমন্ত্রী সুভাষচন্দ্র বোস। পরাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে শপথ নিলেন আরও ১৫ মন্ত্রী।

চার বছর পর….১৯৪৭। ১৫ অগাস্ট। দেশ স্বাধীন। সময় আর রাজনীতি এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতাজিকে বিস্মৃতির অতলে পাঠিয়ে দেওয়ার ‘চক্রান্ত’ অব্যাহত।

কেন? কোন কারণে? কোন যুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী সুভাষ চন্দ্র বোসকে ইতিহাসের পাতা থেকী সরিয়ে দেওয়া হল? ছিল আস্ত মন্ত্রিসভা। ছিল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কব্জায় ছিল স্বাধীন দুটি দ্বীপ। কাঁপিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশকে। কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল লন্ডনের বাকিংহামে বসে থাকা প্রশাসকদের।। গোটা দেশ তখন সুভাষের রেডিও ভাষণ শোনার জন্য রাত জেগে বসে থাকত। ওদের বিশ্বাসে-বাস্তবে তিনিই দেশের মুক্তিদাতা। এবং প্রধানমন্ত্রী। নেতাজিও তো সেই কথাই বললেন শপথ নিয়ে…”অস্থায়ী গভর্নমেন্ট প্রত্যেক ভারতীয়র আনুগত্য দাবি করে। এবং এই গভর্নমেন্ট আনুগত্য লাভের যোগ্য। এই গভর্নমেন্ট প্রত্যেক ভারতবাসীকে ধর্মের স্বাধীনতা এবং সমস্ত অধিবাসীর জন্য সমান অধিকার ও সমান সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।”

বৈচিত্রময় ভারতের সংবিধান রচয়িতা বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূল ভাবনাও তো সেটাই! যেটা সংবিধান তৈরি করার কয়েক বছর আগেই নেতাজি বলে গিয়েছিলেন।

কারা ছিলেন নেতাজির মন্ত্রিসভায়? নামগুলো শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে। প্রধানমন্ত্রী নেতাজির হাতে ছিল সমর ও বিদেশ।

১. ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন,(মহিলা বিভাগ)

২.এস এ নায়ার(প্রোপাগান্ডা)

৩. লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ সি চ্যাটার্জি(অর্থ)

৪.লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজ আহমেদ(ফৌজ প্রতিনিধি)

৫.এ এন সরকার(আইন উপদেষ্টা)

৬।করিম গণি, দেবনাথ দাস, ডি এম খান, এ ইলেপা, জে থিভি, সর্দার ঈশ্বর সিং(উপদেষ্টা)

৭.এ এম সরকার( সেক্রেটারি)

৮.রাসবিহারী বসু(প্রধান উপদেষ্টা)

৯.শাহনওয়াজ। আর বাকি প্রতিনিধিরা হলেন, এন এস ভগত, জে কে ভোঁসলে, গুলজারা সিং, এম জেড কিয়ানি, এ ডি লোগানন্দন, ঈশান কাদের।

এখানেই শেষ নয়। এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কারা? প্রথমে জাপান।তারপর চিনা, মানচুকু,ইতালি,জার্মানি, ফিলিপাইন, শ্যাম ও বর্মা।

নেতাজির হাতে আন্দামান ও নিকোবর দুই স্বাধীন ভূখণ্ড বা দ্বীপ এল। প্রধানমন্ত্রী নেতাজি যার নামকরণ নিজেই করেছিল, স্বাধীন ও স্বরাজ।

কেন প্রধানমন্ত্রী স্বীকৃতি পাবেন না নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস? হতে পারে তাঁর মন্ত্রিসভা ছিল অন্তর্বর্তী। হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার তৈরি হয়নি। কিন্তু যে সামরিক সরকার তৈরি হয়েছিল, সেটাও তো ছিল আর এক ধরনের   নির্বাচন। সেই সরকারের হাতে এসেছিল স্বাধীন দুটি দ্বীপ। স্বাধীন বলা হচ্ছে এই কারণেই যে, পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ফের লড়াই করে জিতে নিতে হয়েছিল। তাহলে যুদ্ধ করে জিততে হল কেন? নেতাজির প্রতিষ্ঠিত সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল আটটি দেশ। এটা তো ছোট ঘটনা হতে পারে না। কারা ছিল না? ছিল চিন, জাপান, জার্মানি, ইতালির মতো বৃহৎ শক্তি। আন্তর্জাতিক দুনিয়া স্বীকৃতি দিচ্ছে আর আমরা ভারতবাসী যারা নেতাজির গর্বে গর্বিত, মূর্তি বসানোর জন্য সকালবেলা টুইট করছি, নেতাজিপ্রেমে কব্জি ডুবিয়ে ফেলছি,তাঁরা এই ইতিহাসটুকু জানব না। মর্যাদা দেব না। সংবিধান মেনে অনেক কিছুই হয়নি। কিন্তু নেতাজির তৈরি সরকারমনে রাখুক, নেতাজি শুধু কিছু ঘটনা নয়, নেতাজি একটা আবেগের নাম।তাহলে?

২০২২-এর ২৩ জানুয়ারিতে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষের তিনটি দাবি…

১.দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হোক সুভাষচন্দ্র বোস বা নেতাজিকে।

২.কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজি মৃত্যুরহস্য তদন্তের ক্লাসিফায়েড ফাইলগুলো প্রকাশ করুক।

৩.দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হোক দেশনায়ক।

আসলে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার বদলে ট্যাবলো রাজনীতি আর ইন্ডিয়া গেটে হলোগ্রাম মূর্তি বসানোর ফাঁপা আওয়াজ। ভুলিয়ে দেওয়ার রাজনীতি। প্রতিবাদ হোক সর্বত্র। শপথ নিন দেশজুড়ে আসল দেশপ্রেমিকরা।

Previous articleBreakfast Sports: ব্রেকফাস্ট স্পোর্টস
Next articleKl Rahul: ‘হারই ভারতের কাছে একটা বড় শিক্ষা’, যা ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে,’ বললেন রাহুল