বাংলা সিনেমায় মুক্ত বাতাস নিয়ে হাজির ‘৮/১২’

ব্রিটিশ শাসনাকালে ভারতের রাজধানী কলকাতার প্রশাসনিক কেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিং অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও গমগম করছিল কর্মতৎপরতায়

চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলা সিনেমায় মুক্ত বাতাস নিয়ে হাজির ‘৮/১২’। নিশ্চয়ই ভাবছেন কেন? যেদিনের ঘটনার কথা বলব, সেদিন ছিল ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০। ব্রিটিশ শাসনাকালে ভারতের রাজধানী কলকাতার প্রশাসনিক কেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিং অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও গমগম করছিল কর্মতৎপরতায়। ব্রিটিশ কর্মকর্তা, ভিজিটরস, বাঙালিবাবু, কেরানি সকলেই ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের কাজে। কিন্তু এসব সরকারি আমলাদের ভিড়ে হঠাৎ করেই আবির্ভাব ঘটেছিল তিন বিশেষ ব্যক্তির।
যাদের বুকে ছিল মাতৃভূমিকে মুক্ত করার বুকভরা আত্মবিশ্বাস, অদম্য জেদ আর মরণপণ লড়াই এর মানসিকতা। তারা এক গগনবিদারী গর্জনের মাধ্যমে ছারখার করে দেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দৈনন্দিন চিত্র।।

সেদিন এই অকুতোভয় ত্রয়ী যা করে দেখান, প্রায় ৯০ বছর বাদেও তা বারবার ঘুরেফিরে আসে বাঙালির মুখে মুখে। তারা হলেন বিনয়-বাদল-দীনেশ।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর লালদীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এলাকাটির নতুন নাম হয় বিবাদী বাগ। না, কোনও ঐতিহাসিক বিবাদ নয়, এর নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধের তিন বীর সেনানী— বিনয়, বাদল ও দীনেশের নামের আদ্যক্ষর অনুসারে এলাকাটি পেয়েছে তার বর্তমান নাম।
কী করেছিলেন তারা? কেনই বা তারা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন? পরিচালক চিত্রনাট্যকার অরুণ রায়, গবেষক রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টারয় সেই বিস্মৃতপ্রায় বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের কাহিনিকে তুলে আনলেন তাঁর নতুন ম্যাগনাম অপাস ‘৮/১২’ ছবিতে (8/12 movie)।

বিদেশি অত্যাচারী শাসকদের সঙ্গে রক্তাক্ত সংঘর্ষে জীবন পণ করে দেশকে স্বাধীন করার মন্ত্র নিয়ে যাঁরা ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগানকে মাতৃমন্ত্র করেছিলেন, তাঁদের জীবনের সেই বীরগাথাই ইতিহাসের বিস্মৃত পাতাকে জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই ছবিতে ।

মেজর গুপ্তর ট্রেনিং নিয়ে তিন মূর্তির রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান। চল্লিশ মিনিটের সশস্ত্র লড়াইকে পরিচালক অরুণ রায় অত্যন্ত সংযত ভঙ্গিতে, সুন্দর কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে মাত্র যেভাবে উপস্থিত করেছেন, এর আগে বাংলা ছবিতে আমরা দেখতে পাইনি।সুস্নাতার ক্যামেরার মুভমেন্ট, পুরনো কলকাতাকে দেখানোর জন্য কালেক্টিভ শটগুলি মনে দাগ কেটে যায়।

ছবি – ৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ
অভিনয়ে – শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, কিঞ্জল নন্দ, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, সুমন বসু, খরাজ মুখোপাধ্যায়
পরিচালনা – অরুণ রায়

বিনয়ের চরিত্রে কিঞ্জল নন্দ তাঁর নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন পুরো ছবি জুড়ে। অর্ণ মুখোপাধ্যায় হয়েছেন বাদল। অ্যাকশন দৃশ্যে তিনি বেশ জমাটি। আবার দীনেশের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডায় স্বাভাবিক। দীনেশের ভূমিকায় নতুন মুখ সুমন বসু সাবলীল। আর রয়েছেন শারীরিক মানসিক নির্যাতিতা কমলার চরিত্রে নাটকের পরিচিত মুখ গুলশান আরা। তাঁর যন্ত্রণাকাতর উন্মাদিনীর অভিনয় মনে রাখার মতো। সরজুদেবীর চরিত্রে অনুষ্কা চক্রবর্তীর অভিনয় মনে দাগ কেটে যায়। সব মিলিয়ে এই ছবি দর্শকের মনে যে জায়গা করে নেবে তা হলফ করে বলা যায়।

 

Previous articleবিজেপিতে ফের কেলেঙ্কারি, দল না করা ব্যক্তি এবার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি
Next articleBreakfast news: ব্রেকফাস্ট নিউজ