Friday, December 19, 2025

Antara Chowdhuri: উদার মনের মিষ্টি প্রিয়জনকে হারালাম

Date:

Share post:

অন্তরা চৌধুরী, সঙ্গীতশিল্পী

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আমার কাছে ছিলেন সন্ধ্যাপিসি। অসম্ভব মিষ্টি একজন মানুষ। উদার মনের মাটির কাছাকাছি থাকা একজন প্রিয়জন। লতাজির শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার সন্ধ্যাপিসির এই খবর। মা সরস্বতীর আরেক বরপুত্রী চলে গেলেন। খুবই খারাপ খবর। কিংবদন্তিরা একই সঙ্গে চলে যাচ্ছেন আমাদের ছেড়ে।

আমার বাবা সলিল চৌধুরীর সঙ্গে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ছিল একেবারে দাদা-বোনের মতো। দুজনেই দুজনকে অসম্ভব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ক্লাসিক্যাল গান পছন্দ করতেন। সেই কারণে রাগাশ্রয়ী গান বাবা তৈরি করতেন তাঁর জন্য। “নিসাগামাপানিসারেগা”-এর মতো গানও গাইয়েছেন, আবার “আয় বৃষ্টি ঝেঁপে”, “উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা”র মতো অত্যন্ত প্রাণোচ্ছ্বল গানও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে গাইয়েছেন সলিল চৌধুরী। শুনলে গানগুলো যতটাই সহজ মনে হয়, গাইতে গেলে বোঝা যায় কী কঠিন সুরের ওঠানামা রয়েছে তাতে।

খুব বড় মনের মানুষ ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আমার মা সবিতা চৌধুরীর কাছ থেকে শোনা একটা কথা ঘটনা খুব মনে পড়ছে। একবার একটি সংগীতানুষ্ঠানে সবিতা চৌধুরী শিল্পী হিসেবে উপস্থিত। উপস্থিত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও। আয়োজকদের মত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আগে গাইবেন। মা চুপ করে বসে আছেন। এর মধ্যে সন্ধ্যাপিসি এসে দেখে বললেন, “কী রে সবিতা তুই বসে আছিস কেন? তুই আগে গাইবি।” বলে আয়োজকদের বললেন, “আমি সবিতার গান শুনবো। ও আগে গাইবে তারপর আমি মঞ্চে উঠব”।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন টিপ দিতেন বিভিন্ন সময়। আমাকে বলতেন, কী ধরনের রাগ রেওয়াজ করলে গলা ধরে রাখা যাবে। 2013-তে পিসির বাড়ি গিয়েছিলাম। অনেক খাওয়া-দাওয়া গান সব হয়েছিল। বিভিন্ন রাগের বন্দিশ শুনিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, এই রাগটা এখন শিখছি। এটা শিখে নাও। রেওয়াজ করলে গাইতে সুবিধে হবে। অশীতিপর সঙ্গীতশিল্পী। অথচ তখনও শিখছেন। কিংবদন্তিরা এরকমই হন। আমার বাবাও এভাবেই নতুন কিছু শিখতে চাইতেন।

অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন সন্ধ্যাপিসি। করোনার দ্বিতীয় টেউয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন আমার স্বামী। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রায় এক মাস। সেই সময় সন্ধ্যাপিসি বেশি বার বার ফোন করে ওঁর খবর নিয়েছেন, আরোগ্য কামনা করেছেন। তাঁর মতো একজন প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর এভাবে খোঁজখবর নেওয়া সত্যিই বিরল।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মনের দিক থেকে ছিলেন চিরসবুজ। গল্প করতে ভালোবাসতেন। গান গাইতে ভালবাসতেন। আর ছিল রেওয়াজ। এই বয়সেও তিনি রেওয়াজ করতেন। যে ছবিগুলি এখন বারবার দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। তাতে পাশে রয়েছে তাঁর ইলেকট্রিক তানপুরা, তবলা। মনের দিক থেকে অত্যন্ত আধুনিক ছিলেন। নতুন জিনিস শিখে নেওয়ার তীব্র বাসনা ছিল। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর সৃষ্টির মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তবে, আমার কাছে এই শোক আত্মীয় বিয়োগের মতোই।

আরও পড়ুন- সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ তৃণমূল সাংসদদের, শান্তনু তোপ দাগলেন বিজেপির বিরুদ্ধে

 

 

spot_img

Related articles

বেটিং-চক্রে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ! মিমি-অঙ্কুশ-সহ একাধিক তারকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ইডি-র

অবৈধ বেটিং অ্যাপ সংক্রান্ত মামলায় মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraboty) ও অঙ্কুশ হাজরার (Ankush Hazra) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল এনফোর্স...

মহাপ্রভুর অন্তর্ধান রহস্যের উত্তর মিলবে কি! প্রকাশ্যে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-র ট্রেলার

সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় পরিকল্পনা শুরু বছর ছয়েক আগেই, মাঝে বহু বিতর্ক - সমালোচনা, অবশেষে মুক্তি পেল বহু প্রতীক্ষিত সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের...

নির্বাচনের আগে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হিংসা ইউনূস সরকারের: দাবি আওয়ামি লীগ প্রাক্তন মন্ত্রীর

দুমাস পরে দেশে নির্বাচন। তার আগে ভয়ঙ্কর হিংসার আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে গোটা ঘটনাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে...

বর্ষসেরা মহিলা সাংসদের পুরস্কার দোলা সেনকে, দেশ-রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ আপ্লুত তৃণমূল সাংসদের

সেরা মহিলা সাংসদের সম্মান পেলেন তৃণমূলের (TMC) রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন (Dola Sen)। প্রতিটি বিভাগে সংসদের উভয় কক্ষ...