বড়পর্দায় দ্য একেন

নববর্ষে আবির্ভাব ঘটেছে নতুন গোয়েন্দার। সিরিজ মাতিয়ে একেনবাবু এবার বড়পর্দায়। আর প্রথম দিন থেকেই একেনবাবুর একনিষ্ঠ ফ্যানেরা হলমুখী। তৈরি হচ্ছে নতুন ফ্যান বেস। দর্শক যেমন খুশি তেমনই খুশি
‘দ্য একেন’ অনির্বাণ চক্রবর্তী। কথা বললেন প্রীতিকণা পালরায়

শুরুর কথা শুনতে চাই। প্রথম যখন একেনবাবুর জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন, মনে হয়নি আবার গোয়েন্দা?
অনির্বাণ : না, না, তা মনে হয়নি। যদিও চরিত্রটার জন্য অফার আসার আগে আমি একেনবাবুর সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। পরে পড়েছি। প্রথমে তো সিরিজ করি। পাঁচটা সিজন হয়ে গেছে। প্রথম সিজনে আমি সরাসরি স্ক্রিপ্ট শুনেছিলাম। কিন্তু একবারও মনে হয়নি ‘আবার গোয়েন্দা!’ কারণ একেনবাবু এতটাই আলাদা। আমি নিশ্চিত যেসব দর্শক সিরিজে একেনবাবুকে আগেই দেখেছেন বা সিনেমায় এর মধ্যে দেখে ফেলেছেন তাঁরাও আমার সঙ্গে একমত হবেন।

আরও পড়ুন:প্রথম স্ত্রীর সম্মতি নিয়েই সাত পাঁকে বাধা পড়তে চলেছেন ৬৬ বছরের অরুন লাল
কিন্তু মনে হয় না কি বাঙালি-জীবনে বড্ড বেশি গোয়েন্দাদের ভিড়?
অনির্বাণ : আসলে বাঙালিদের মেধা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, গভীর চিন্তাবোধ এগুলো বিশেষত্ব। তাই হয়তো এখানে গোয়েন্দারা বেশি জনপ্রিয়। তবে এর আরও একটা কারণ আছে বলে আমার মনে হয়। গোয়েন্দা চরিত্র বাংলায় বেশি হলেও বৈচিত্র্যও কিন্তু বেশি। নানা ধরনের গোয়েন্দা গল্পও এখানে আছে। কিছু থ্রিলারধর্মী, কিছু মস্তিষ্কের খোরাক, কিছু ঘরোয়া আবহে। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটী, শবর, মিতিন— সব চরিত্রই কিন্তু স্বতন্ত্র। আর তাই প্রত্যেকের আলাদা আপিল, আলাদা পাঠক বা দর্শক।

একেনবাবু আলাদা কীসে?
অনির্বাণ : একেনবাবু যে চরিত্রের গোয়েন্দা তা কিন্তু সারা পৃথিবীতেই বিরল। সব গোয়েন্দাদেরই বেসিক যে চরিত্রটা থাকে তা হল, তারা সিরিয়াস নেচারের। কিন্তু একেনবাবু একদম উল্টো। আসলে সে পুলিশ দপ্তরের গোয়েন্দা। তাই মস্তিষ্কের ক্ষুরধার দিকটি ছাড়াও সে টেকনিক্যালি ট্রেন্ড। কিন্তু এসব কোনওটাই বাইরে থেকে দেখে কেউ বুঝতে পারবে না। কারণ একদিকে যেমন তার চেহারায় ভরপুর বাঙালিয়ানা তেমনই স্বভাবেও ভীষণ মজার একজন মানুষ। আচরণে ছেলেমানুষি, কথাবার্তায় সারল্য, খাদ্যরসিক, স্বভাব সব মিলিয়ে একেনবাবু ভীষণভাবে সাদামাঠা। অন্য গোয়েন্দাদের মতো মেপে চলে না, ভেবে কথা বলে না, আচরণে, পোশাকে স্মার্টনেস নেই। তাকে গোয়েন্দা বলে কেউ বুঝতেই পারে না প্রথমে। ফলে সাধারণের মধ্যে মিশে সে গোয়েন্দাগিরিটা চালিয়ে যায়।

সরল না সেয়ানা, একেনবাবু কোনটা?
অনির্বাণ : এ জায়গাটা একটু ধোঁয়াশা! নিজের কাজে একেনবাবু ভীষণ সিরিয়াস আবার ব্যক্তিজীবনে খুবই সরল। কিছু সময় আবার সে তার এই সারল্যকে কাজের জন্য ব্যবহারও করে!
অনেকেই লালমোহনবাবুর সঙ্গে একেনের মিল পেয়েছে। আপনার কী মনে হয়?
অনির্বাণ : লালমোহনবাবুর সঙ্গে একেনের মিল নেই। অনেকে পাচ্ছেন তার কারণ খানিকটা চেহারাগত সাদৃশ্য। এরও একটা ইতিহাস আছে যদিও। একেনবাবু চরিত্রটি যাঁর সৃষ্টি, লেখক সুজন দাশগুপ্তর ভাবনায় একেনের চেহারা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। যাঁরা পর্দায় দেখার আগে উপন্যাসে পড়েছেন তাঁরা একেনকে একদম বিপরীত লুক-এ পেয়েছেন। আমার কাস্টিং হওয়ার কথাই নয়। বইয়ের একেন লম্বা, টিঙটিঙে রোগা, একমাথা ঝাঁকড়া চুল। অনেকটা ঘনাদার সঙ্গে মেলে! আমার কাস্টিং রেফার করেছিলেন সাহানা দত্ত। এবার কাস্টিং ফাইনাল হওয়ার পর আমার অনেক রকম লুক করা হল। ফাইনাল যেটা হল সেটা জটায়ুর সঙ্গে অনেকটা মিলে গেল!

এ তো দারুণ ইতিহাস! কিন্তু লেখক আপত্তি জানাননি?
অনির্বাণ : তখন তো আমার সঙ্গে লেখকের আলাপ ছিল না। সুজনবাবুর সঙ্গে যা কথাবার্তা ডিরেক্টর ও ক্রিয়েটিভ টিমই বলেছিল। পরে অবশ্য যখন সুজনবাবু এদেশে এসেছিলেন তখন কথা হয়েছে।
কীরকম?
অনির্বাণ : প্রথমত উনি খুব খুশি একেনবাবুর জনপ্রিয়তায়। উনি প্রবাসী বাঙালি। আমেরিকায় থাকেন। বলেছিলেন, এত মানুষের কাছে যে একেনবাবু পৌঁছে যাবে তা ভাবতেই পারেননি। আরও একটা কথা আমায় বলেছিলেন যেটা একজন অভিনেতা হিসেবে আমায় আনন্দ দিয়েছিল। এটা ওই লুক নিয়ে। বলেছিলেন, ‘তুমি আমার মধ্যে একটা গন্ডগোল তৈরি করলে আমি তো একভাবে একেনকে দেখতাম। এখন লিখতে বসলে তোমার মুখ ভেসে আসে। লেখকের মাথায় এই গন্ডগোলটা পাকিয়ে দিয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি!
ওটিটি আর ছবি, দুটো মাধ্যম আলাদা, এর জন্য কি প্রস্তুতিতে কোনও তফাত হয়েছিল? সেই সঙ্গে ডিরেক্টরও তো আলাদা?
অনির্বাণ : চার বছরে পাঁচটা সিজন করেছি। একেনবাবুর চরিত্র, ধরন, সব আমার মধ্যে বসে গেছে। মাধ্যমের যা তফাত তা তো টেকনিক্যাল। ফিল্মের মাউন্টিংটা বেশি হয় আর সিরিজে রান টাইম বেশি। আমার আলাদা প্রস্তুতি তাই কিছু ছিল না। আর ছবির যিনি ডিরেক্টর জয়দীপ মুখার্জি, তিনি সিজন ফোরটা ডিরেক্ট করেছিলেন। তাই তাঁর সঙ্গে বোঝাপড়াও আগে থেকেই ছিল।
একেনবাবুর সঙ্গী দুজনের চরিত্রে তো নতুন কো-অ্যাক্টর পেলেন ছবিতে। এতে অসুবিধে হয়নি?
অনির্বাণ : দেখুন সুহোত্র ও সোমক দুজনেই দুর্দান্ত অভিনেতা। সুহোত্রর সঙ্গে আমি অন্য সিরিজে কাজও করেছি। দুজনেই এখানে দারুণ অভিনয় করেছে। তবে হ্যাঁ, যাঁরা সিরিজ দেখেছেন তাঁদের মনে একটা ছবি বসে গিয়েছিল যেমন, আমার মনেও তেমনটা ছিল। কিন্তু প্রোডাকশন হাউস কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে এই চেঞ্জটা করতে বাধ্য হয়েছে। আর ছবিতে প্রথম দিন শ্যুটিংয়ের পরই নতুন দুজনের সঙ্গে আমার দারুণ বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল।

সিরিজে র‍্যাঙ্ক করার পর ‘দ্য একেন’ তো বড়পর্দাও মাতাচ্ছে। তবে কি এবার দর্শক শুধু বড়পর্দাতেই একেনকে পাবে?
অনির্বাণ : যেটুকু জানি সিরিজ, সিনেমা দুটোই করার প্ল্যান আছে ভবিষ্যতে।
তার মানে দর্শকের সঙ্গে সঙ্গে একেন প্রযোজকেরও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে?
অনির্বাণ : পুরোটাই দর্শকের ভালবাসা। আর প্রিয় হয়ে ওঠার পর একটা দায়িত্বও এসে যায়। আশা করি সেটা পূরণ করতে পারব আগামী দিনেও।

Previous articleRoy Krishna: প্রয়াত রয় কৃষ্ণার বাবা বাল কৃষ্ণা
Next articleওনার দৃষ্টিভঙ্গি শকুনের মতো: মোদিকে শুভেন্দুর নালিশ প্রসঙ্গে তোপ কুণালের