রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশ: লক্ষ্মণরেখা দেখালেন রিজিজু, ‘ঐতিহাসিক’ মত তৃণমূলের

কেন্দ্রীয় সরকার পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশ জারি করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ আসার পর ঐতিহাসিক এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে সমস্ত বিরোধী নেতৃত্ব। পাশাপাশি শাসক শিবির এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করলেও এই পদক্ষেপে তারা যে একেবারেই খুশি নয় তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হল।

আদালতের নির্দেশ
রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত আইন স্থগিত নিয়ে কেন্দ্রকে আদালত প্রশ্ন করলে বুধবার কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, তারা রাজ্যগুলোকে বলতে পারে, পুলিশ সুপার বা তার উঁচু পদমর্যাদার আধিকারিকরাই যেন কেবল রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বুধবার সাফ জানিয়ে দেয়, যত দিন না রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনা শেষ করছে কেন্দ্র, তত দিন স্থগিত থাকবে এই আইনের প্রয়োগ। আদালত আরও জানিয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ ধারা 124-A তে নতুন করে কোনও মামলা দায়ের বা গ্রেফতার করা যাবে না। পাশাপাশি এই আইন প্রয়োগ করে যে সব মামলা চলছে তা স্থগিত হয়ে যাবে এবং বন্দিরা জামিনের আবেদন করতে পারবেন। আদালতের এহেন নির্দেশের পর শাসক ও বিরোধীদের তরফে উঠে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

আরও পড়ুন:রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশ ঐতিহাসিক: স্বাগত জানিয়ে আইন বাতিলের দাবি সুজাত ভদ্রর

সুখেন্দু শেখর: শীর্ষ আদালতের তরফে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। বলা যেতে পারে এটা মন্দের ভালো। যদি বাতিল করা হত তবে সবচেয়ে ভাল হত। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রেফতার করতে এটা ব্যবহার করত।

মহুয়া মৈত্র: আমার দীর্ঘদিনের লড়াই আজ স্বীকৃতি পেল। সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে এই রায় প্রদানের জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা রাখি যে কেন্দ্রীয় সরকার যথোপযুক্ত পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে এই আইনের বিলোপ ঘটাবে।

রাহুল গান্ধী: সত্যি কথা বলা দেশভক্তি, দেশদ্রোহিতা নয়। সত্য কথা শোনাটাই রাজধর্ম। সত্যি কথাকে আটকে রাখা হল ঔদ্ধত্য। ভয় পেও না।

সুজাত ভদ্র(মানবাধিকার কর্মী): ব্রিটিশ আমলের ঔপনিবেশিক আইন অবিলম্বে বিলুপ্ত করা উচিত। এই ধারা অনুসারে প্রথম গ্রেফতার করা হয় বালগঙ্গাধর তিলককে। এই আইন অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশ থেকে চিরতরে মুছে যাক রাষ্ট্রদ্রোহ আইন। আইনের বইতে এর যেন কোনও অস্বস্তি না থাকে। আর সেটা যতদিন না হচ্ছে, ততদিন লড়াই চলবে।

কিরেন রিজিজু: আমরা একে অপরকে সম্মান করি, আদালতের উচিত সরকার এবং লোকসভাকে সম্মান করা। সেই সঙ্গে সরকারেরও উচিত আদালতকে সম্মান করা। সংবিধানের পাশাপাশি যে আইনগুলি রয়েছে সেগুলিকেও সম্মান করতে হবে। আমাদের কাজের স্পষ্ট সীমানা আছে এবং কোনও পক্ষেরই লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করা উচিত নয়।

কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়(পরিচালক): রাষ্ট্রের সমালোচনা করলে তাঁকে 124-A ধারার অপব্যবহার করে জেলে পোরার এতদিন যে আইন ছিল তা শুধু অগণতান্ত্রিক নয় অমানবিক। এদিন আদালত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অবশ্যই দৃষ্টান্ত মুলক পদক্ষেপ।

শমীক ভট্টাচার্য: এটি দীর্ঘদিনের আইন। বিজেপি সরকার আনেনি। আমরা মনে করি কিছু ক্ষেত্র কঠিন আইনের প্রয়োজন রয়েছে। এই আইন তোলা দেশের জন্য বিপদজনক। কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে কেউ যদি গদ্য বা পদ্য লেখেন এবং সেই বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রচার করেন তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।




Previous articleরাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশ ঐতিহাসিক: স্বাগত জানিয়ে আইন বাতিলের দাবি সুজাত ভদ্রর
Next articleকরোনা নিয়ে ভয় নেই, তবে পরতে হবে মাস্ক: পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর