আসানসোল প্রত্যয়ীর উদ্যোগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় নন্ প্রসেনিয়াম নাট্যমেলা। ১৩,১৪ ও ১৫-মে আসানসোল হাটতলা প্রাঙ্গনে।

জমজমাট এই নাট্যমেলায় উপচে পড়া দর্শকদের সামনে প্রযোজিত হয় দুটি নাটক। সতীর্থ নাট্যসংস্থার ‘ প্রথম পাঠ ‘ নাটকের মূল বিষয় ছিল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সাক্ষরতা আন্দোলনের ভূমিকা। ভালো অভিনয় করেন আভাস ভট্টাচার্য, বাসন্তী মিশ্র, কুনাল রায় ও কিশোরশিল্পী বিবেকানন্দ চৌধুরী।

দ্বিতীয় নাটক ‘ সোঁদা মাটির আগুন ‘ পরিবেশন করে আসানসোল সুভাষ সমিতি। সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় রচিত এই নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন শ্রীকান্ত রায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল নাটকের মূল বিষয়। অভিনয়ে মন কাড়েন মৌ রায়, সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, কঙ্কন রায় ও বাচ্চু রায়।

উদ্বোধনী সন্ধ্যায় বাঁশি বাজিয়ে সকলকে মুগ্ধ করে শিশুশিল্পী সৌম্যদিত্য। নাটকের গান পরিবেশন করেন উৎপল সিনহা। সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় শিল্পশহরের দুই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গায়ক ও তবলাশিল্পী কণাদ চট্টোপাধ্যায় এবং অভিনেতা রামপ্রসাদ দাশগুপ্তকে।


বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় সন্ধ্যায় বাদপুর আগামী নাট্যগোষ্ঠী অভিনয় করে ‘ কোথায় গেল ‘। দলগত অভিনয় ভালো। এরপরে অভিনীত হয় আসানসোল চর্যাপদের প্রযোজনা ‘ আম স্বত্ব ‘। একঝাঁক শিশু-কিশোর প্রতিভা ও তারুণ্যে ভরপুর এই নাট্যদলটি এখন শিল্পাঞ্চল ছাড়িয়ে সারা বাংলায় একটি বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছে। অনুষ্কা, অনুরাধা, ঐশী, ঐন্দ্রিলা, বিশ্বরূপ, রাজেশ ও অন্যান্যদের নিয়ে দারুণ কাজ করে চলেছেন নাট্যকার অভিনেতা ও নির্দেশক রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী। নাট্যমেলার অন্যতম সেরা প্রযোজনা চর্যাপদের ‘ আম স্বত্ব ‘।
তৃতীয় ও শেষ সন্ধ্যায় ছিল মোট পাঁচটি নাটক। আয়োজক আসানসোল প্রত্যয়ী উপস্থাপন করে দুটি নাটক। প্রথমটি বাদল সরকারের রচনা ‘ উদ্যোগপর্ব ‘। এই নাটকে উল্লেখযোগ্য প্রত্যয়ীর দলগত অভিনয়। অভিনেতা কল্লোল চন্দ সকলের নজর কাড়েন। দ্বিতীয়টি কাশ্মীরের পটভূমিতে রচিত উদয়ন চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘হরিদার পোলাও’ শুরু হয় শিল্পী রাইমা মুখোপাধ্যায়ের নয়নাভিরাম এক টুকরো নৃত্যদৃশ্যের মাধ্যমে। দর্শকবৃন্দ দারুণ আনন্দ পান প্রত্যয়ীর এই প্রযোজনাটি দেখে। অভিনয়ে মন কাড়েন পলি চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত শর্মা, দীপঙ্কর সরকার ও শিশুশিল্পী বৈদিক শর্মা।

আসানসোল ব্রাত্যজন পরিবেশন করেন ‘ যদি সরকার কিছু বলে ‘। সময়োচিত প্রযোজনা।
নৃত্যাভিনয়ের মাধ্যমে ‘ অহম অগ্নি ‘ পরিবেশন করে অমিয় মেমোরিয়াল ক্রিয়েটিভ আর্ট। চমৎকার এই প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন কল্পতরু গুহ। শেষ সন্ধ্যায় উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা ছিল অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার-এর নাটক ‘ ঘরে ফেরার গান ‘। চূড়ান্ত দলগত অভিনয়ে দর্শক দের মুগ্ধ করেন এই নাটকের কলাকুশলীরা। যেমন অনবদ্য এঁদের কোরাস, তেমনি অসামান্য প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিনয়। চূড়ান্ত এঁদের শারীরিক সক্ষমতা, এবং মুহূর্মুহূ নানান বৈচিত্র্যময় নাট্যমুহূর্ত তৈরী করা দেখে বোঝা যায় যে সৃজন বা উদ্ভাবন যা-ই বলা হোক না কেন অনুশীলন কক্ষটিই থিয়েটারের মূল সাধনক্ষেত্র। এবং প্রবীর গুহ। সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত এই বর্ষীয়ান চিরসবুজ নাট্যনির্দেশক মঞ্চের একেবারে পিছনে বসে একা এই নাটকটির আবহ নির্মাণ ক’রে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ ক’রে গেলেন কন্ঠ ও গুটিকয়েক বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে।
নাট্যসাধক প্রবীর গুহ আয়োজক আসানসোল প্রত্যয়ীর তুমুল প্রশংসা ক’রে গেলেন এই ব’লে যে, নাটককে চার দেয়ালের চৌহদ্দি থেকে বের ক’রে রাস্তায় টেনে আনতে হবে। এটাই ভারতীয় নাটকের সনাতন ঐতিহ্য। নাটকের কাছে মানুষ যদি না আসেন তাহলে নাটক নিজেই পৌঁছে যাক মানুষের কাছে। প্রত্যয়ী এই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি থিয়েটারের জন্য করুক আগামী হাজার বছর ধরে।

শেষ সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি মেয়র অভিজিত ঘটক ও শিক্ষক সংগঠনের অন্যতম যোদ্ধা অশোক রুদ্র। সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রত্যয়ীর অন্যতম শীর্ষকর্তা অর্ণব মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন- Entertainment: মুক্তি পেল উজ্জয়িনীর কণ্ঠে ‘তীরন্দাজ শবর’ এর নতুন গান
