লকডাউনে পার্টি: পার্লামেন্টে আস্থাভোটের সামনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভাগ্যে কয়েকদিনের মধ্যে কি ঘটতে চলেছে তা নিশ্চিত করে কেউ জানে না। কোভিড(covid) মহামারিতে জারি থাকা লকডাউনের বিধি ভঙ্গ করে মদের পার্টি অনুষ্ঠানের কলঙ্ক এখনও তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।সেই কেলেঙ্কারির জেরে এ সপ্তাহে জনসন চ্যালেঞ্জের ‍মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন তার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির কর্মকর্তারা। আগামী বুধবারই তিনি আস্থাভোটের মুখোমুখি হচ্ছেন।

কনজারভেটিভ পার্টির (conservative party) অধিকাংশই প্রণেতাই এখন বলছেন, তারা পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে জনসন সরকারের ওপর আস্থা হারিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, তারা জনসনের বিরুদ্ধে আস্থা ভোট করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি জমা দিয়েছেন।রানির সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জনসন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের অনেক এমপি তার বিরুদ্ধে কৌশল আটছেন। বলা হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যেই ক্ষমতায় থাকা নিয়ে লড়াইয়ে নামতে ববে প্রধানমন্ত্রীকে।

আঝ সোমবার পার্লামেন্ট বসার দিনটিতে সবার দৃষ্টি থাকবে গ্রাহাম ব্রাডির দিকে। তিনি দলের ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান। যুক্তরাজ্যে কনজারভেটিভ প্রাইভেট মেম্বারস কমিটি নামে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কমিটি পরিচিত। এটি হল ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সে কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্টারি গ্রুপ। এই গ্রুপের শতকরা ১৫ ভাগ অর্থাৎ, ৫৪ জন এমপি চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আস্থাভোট আহ্বান করে চিঠি লিখেলে বা ইমেইল পাঠালে আস্থা ভোট হয়।
সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ২৫ জনের বেশি আইনপ্রণেতা তাদের চিঠি পাঠানোর কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন। তাছাড়া, পার্টি কর্তারা এবং বিদ্রোহী আইনপ্রণেতারা মনে করছেন, চিঠি প্রয়োজনীয় সংখ্যা ৫৪ এর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। আর কেউ কেউ বলেছেন, চিঠির সংখ্যা এরই মধ্যে ৫৪ পেরিয়ে গিয়েছে।

এই চ্যালেঞ্জ যে শুধু দলের বিদ্রোহী সদস্যদের কাছ থেকে আসছে তা নয় বরং এমপিদের মধ্যে হতাশ একটি গ্রুপ আছে, তারাও অনাস্থা প্রকাশ করে চিঠি দিতে পারে। পার্লামেন্ট যেদিন থেকে মুলতবি হয়েছিল সেই দিনেই প্রকাশ হয় পার্টিগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে সু গ্রে’র তদন্ত রিপোর্ট।এরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানানো এমপির সংখ্যা বেড়েছে।
জনসন ২০২০ সালে লকডাউনের মধ্যে দেশবাসীকে বিধিনিষেধে আটকে রেখে নিজে মদ্যপানের পার্টিতে উপস্থিত থাকা নিয়ে শোরগোলের মুখে ক্ষমা চাওয়ার পরই সামনে আসে আরেক পার্টি কেলেঙ্কারির ঘটনা। ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান থাকার সময়ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ডাউনিং স্ট্রিটের কার্যালয়ে কর্মীরা আরও দুটো মদের পার্টি করেছিলেন। সেসময়ও বদ্ধ জায়গায় জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে তখন চলছিল জাতীয় শোক।

জনসন সেই পার্টিতে উপস্থিত না থাকলেও জাতীয় শোক দিবস এবং জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে এমন পার্টির কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। বার বার ক্ষমা চেয়ে, জরিমানা দিয়েও তিনি রেহাই পাচ্ছেন না। জনসন বলে আসছেন, সরকার নানান চ্যালেঞ্জের মুখে থাকায় এখন তিনি পদত্যাগ করবেন না। দেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে রেখে সরে যাওয়াটা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক হবে না বলেই যুক্তি দেখাচ্ছেন তিনি। আর নেতৃত্ব নিয়ে জনসন শিগগিরই যে আস্থা ভোটের মুখে পড়তে চলেছেন তার ফল কি হবে সেটি তার বেশ ভাল করেই জানা।

কারণ, যদি এখনই ভোট হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে তার পদ থেকে সরানোর ক্ষেত্রে অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা অপেক্ষা করে আছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে কনজারভেটিভ দলের ১৮০ জন এমপি’র সমর্থন প্রয়োজন হবে।কিন্তু ভোট যদি হয় ২৩ জুনের দুটি আসনের উপনির্বাচনের পর এবং নির্বাচনে যদি কনজারভেটিভ পার্টি খারাপ করে, তাহলে জনসন ক্ষমতায় টিকে থাকতে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে যাবেন। তবে তারপরও জনসনের চেয়ে আরও ভাল কোনও নেতা হাতে না থাকায় তিনি বেশিরভাগ টোরি এমপি’র সমর্থন পেতে পারেন। তাই আগামী কয়েকদিন কিংবা কয়েকসপ্তাহে তাদেরকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর তা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রাখা হবে, নাকি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা ঠিক করা।


Previous articleদুর্গাপুজোয় কেকে-র শেষ কনসার্ট হবে উত্তর কলকাতায় 
Next articleWorld Test Championship Final: লর্ডসে বসতে পারে বিশ্ব টেস্ট চ‍্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আসর: সূত্র