দু’দিনের রাজ্য সফরে এসে শুরুতেই একগুচ্ছ বিতর্কের জন্ম দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। আজ, বুধবার হুগলির চন্দননগরে রাসবিহারী বসু রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও সংগ্রহশালা পরিদর্শনে যান নাড্ডা। আর সেখানেই যত বিপত্তি।

সর্বভারতীয় সভাপতিকে স্বাগত জানাতে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের তরফে দলীয় পতাকায় মুড়ে ফেলা হয় গোটা এলাকা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে নাড্ডার ছবি দেওয়া ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয় গেরুয়া শিবিরের তরফে। এত পর্যন্ত সব ঠিক ছিল, কিন্তু রাসবিহারী বসু রিসার্চ ইনস্টিটিউটশনের মধ্যেও নাড্ডার ছবি লাগানো হয়। যা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানানো হয় তৃণমূলের তরফে।

ঘাসফুল শিবিরের তরফে একটি ভিডিও প্রকাশ করে তুমুল সমালোচনা করা হয়। যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বীর বিপ্লবী তথা বাংলার মনীষী রাসবিহারী বসুর ছবি ও স্মারকের উপর বিজেপি সভাপতির ছবি লাগিয়ে “ওয়েলকাম” করা হচ্ছে।

এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে জেপি নাড্ডা-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বিজেপিকে “ভারত জ্বালাও পার্টি” বলে বর্ণনা করেন।

OUTRAGEOUS!
Yet again, @BJP4India shows their disrespect towards #Bengal and our legends.
Does @BJP4Bengal really consider @JPNadda to be a taller figure than Rashbehari Bose? SHOCKING how no BJP leader attending the event raised a voice against such an appalling gesture! pic.twitter.com/1GlF17pgLb
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) June 8, 2022
এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে কুণাল বলেন, “গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, বিজেপি এখন ভারত জ্বালাও পার্টিতে পরিণত হয়েছে। দেশের সুরক্ষা, নিরাপত্তা, শান্তি সবকিছুই ভারত জ্বালাও পার্টির হাতে বিপন্ন। তাদের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এখন বাংলায়। কখনও বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে, কখনও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে, কখনও আবার বিকেকানন্দের ভুল নাম নিয়ে বিজেপি বরাবর বাংলার মনীষীদের অপমান করে এসেছে, নাড্ডার এবারের বাংলা সফরেও সেই ধারা অব্যাহত। এবার নাড্ডার উপস্থিতিতে হুগলির চন্দনগরে রাসবিহারী বসুকে অপমান করা হল।
নাড্ডা যখন রিসার্চ সেন্টারে যাচ্ছেন, তখন মহান বিপ্লবীর ছবির উপর নাড্ডা ওয়েলকাম লেখা ছবি লাগানো হয়েছে।

রাসবিহারী বসুর মতো মনীষীর ছবি ও স্মারক ঢেকে দিয়ে কীভাবে নাড্ডার ছবি বসানো যায়? এরা তো কোনদিন নেতাজি, রবীন্দ্রনাথের ছবির উপর,স্মারকের উপর পোস্টার সাঁটিয়ে দেবে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাসবিহারী বসুর
অবদান, ভূমিকা বিজেপির নূন্যতম ধ্যানধারণা পর্যন্ত থাকলে এই কাজ ওরা করতে পারতো না। জেপি নাড্ডা একটি সুস্থ সংস্কৃতিতে ধ্বংস করে গেলেন কলকাতার তথা বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে। সমাজনীতিকে ধ্বংস করলেন। আর বিজেপির কাছে কাছে জেপি নাড্ডা বড়, রাসবিহারী বসু নয়। তা নাহলে মহান বিপ্লবীর ছবির উপর নাড্ডা ওয়েলকাম লেখা ব্যানার ঝুলছে। সস্তা দলবাজি। বাংলার মানুষ এদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। আজ নাড্ডার সঙ্গে যাদের ফ্রেমে ছবি উঠছে, নাড্ডা নিজেই দেখবেন ৬ মাস পর ওরা দলে নেই। আমরা এই ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানাই। এটা বাংলার সংস্কৃতি, আবেগ, দেশের প্রতি অবদানকে অপমান করছে বিজেপি। সেই দলের সভাপতি জেপি নাড্ডাকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।”
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ন্যাশনাল লাইব্রেরিতেও রাজনীতির রং লাগাচ্ছে বিজেপি, অভিযোগ কুণাল ঘোষের। তিনি বলেন, “ন্যাশনাল লাইব্রেরির হেরিটেজ। তাদের নিয়ম-সংবিধান বলছে, কোনও রাজনৈতিক কাজের জন্য ব্যবহার করা যাবে না ন্যাশনাল লাইব্রেরিকে। আর সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। নিয়ম মানবেন না। বুকিং পেল কী করে? কোনও ফাউন্ডেশনের নাম করে বুকিং করেছে। আর পার্টির কর্মসূচি করছে। মুখ লুকিয়ে, মুখোশ পড়ে এই কাজ করছে তারা।”
