শাসক নাকি বিরোধী জোট? খেলা ঘোরাবে কে? একঝলকে রাইসিনা হিলসের সমীকরণ

আগামী ২৫ জুলাই শেষ হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি(Precident) রামনাথ কোবিন্দের(Ramnath Kovind) কার্যকাল। নিয়ম অনুযায়ী বর্মান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচিত হতে হবে নতুন রাষ্ট্রপতি। সেইমতো ১৮ জুলাই ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে কমিশন। ২১ জুলাই হবে নির্বাচন। শাসকদলকে টক্কর দিতে একজোট হয়ে এই নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে বিরোধী শিবির। আর এই উদ্যোগের মধ্যমণি তৃণমূল(TMC) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। অঙ্কের হিসেব বলছে বিরোধীরা যদি একজোট হয় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদে পছন্দের প্রার্থীকে পাঠাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হবে শাসকদল বিজেপি(BJP)। ফলস্বরূপ ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে বিন্দুমাত্র কসুর করছে না বিরোধী শিবির(Opposition)। বুধবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিরোধী দলের বৈঠক থেকে শুরু হয়েছে তার হিসেব নিকেশ।

সরল পাটিগণিতের হিসেব বলছে, দেশের বিরোধী দল যদি একত্রিত হয় সেক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের। অন্যদিকে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে এনডিএ জোটের সমস্ত ভোটের পরও কম পড়বে ১৮০০০ ভোট। এই অবস্থায় বিরোধী জোটে ভাঙন ধরানো বা সর্বসম্মতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করাই লক্ষ্য বিজেপির। আর এই দ্বিতীয় রাস্তা ধরে ইতিমধ্যেই রাজনাথ সিং ফোন করেছেন ৩ শীর্ষ বিরোধী নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব এবং মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে।

দেখে নেওয়া যাক রাষ্ট্রপতি ভোটের সমীকরণ

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সংসদের দুই কক্ষের পাশাপাশি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন বিধায়করাও। সংসদের হিসেবে এনডিএ-র কাছে বর্তমানে রয়েছে ৫১ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দলের কাছে রয়েছে ৪৮ শতাংশ ভোট। ফলে সংসদে বিজেপির চিন্তা না থাকলেও চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে রাজ্যভিত্তিক বিধায়কদের ভোটে। এই নির্বাচনে সাংসদ এবং বিধায়কদের প্রতিটি ভোটের নির্দিষ্ট মূল্য রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ভোট ১০.৮৬ লক্ষ। নির্বাচনে জিততে প্রয়োজন ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ২১৬টি ভোট। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র হাতে এই মুহূর্তে রয়েছে ৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৭০৬টি ভোট। অর্থাৎ NDA জোটের রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে আরও ১৮ হাজার ভোট প্রয়োজন। আর এই বিধায়কদের ভোটই ‘এক্স ফেক্টর’ হতে চলেছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে।

আরও বিস্তারিত বললে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিটি বিধায়কের ভোটের মান নির্ধারিত হয়, রাজ্যের মোট জনসংখ্যাকে বিধায়কের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে, তাকে আরও ১,০০০ দিয়ে ভাগ করার পর যে ফল বের হয়, সেই ফল অনুযায়ী। সেই কারণে, রাজ্য অনুযায়ী বিধায়কদের ভোটের গুরুত্ব পরিবর্তিত হয়। যেমন উত্তরপ্রদেশের একজন বিধায়কের ভোটের মূল্য ২০৮, সেখানে সিকিমের একজন বিধায়কের ভোটের মূল্য ৭। বিধানসভাগুলোয় এই ভোটের মূল্য যোগ করে মোট ভোটের পরিমাণ ৫.৪৩ লক্ষ।

সংসদের দুটি কক্ষের জন্যও একইরকমই ভোটে বরাদ্দ থাকে। সংসদের উভয় কক্ষে মোট ৭৭৬ জন সাংসদ রয়েছেন। তাই প্রতিটি সাংসদের ভোটের মূল্য দাঁড়ায় ৫.৪৩ লক্ষ ভাগ ৭৭৬। যার ফলাফল হয় ৭০০। বিধানসভা এবং সংসদের দুটি কক্ষ মিলিয়ে মোট ভোটের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০.৮৬ লক্ষ। যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই বিজয়ী ঘোষিত হন। আর এই কঠিন অঙ্কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীরা একজোট হলে এবার বেশ বড় ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শাসক শিবির বিজেপির। ফলস্বরূপ নির্বাচনী ঝুঁকি এড়িয়ে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তাই শ্রেয় বলে মনে করছে বিজেপি শিবির। যার জেরে বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বসম্মত কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে আনতে ইচ্ছুক তারা। এবিষয়ে রাজনাথ সিং বুধবার মমতাকে ফোন করলে তিনি জানতে চান, বিজেপি-র তরফে কোনও নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে কিনা। যদিও রাজনাথ জানান, এখনও হয়নি। এরপর মমতা পাল্টা জানান, সরকার আগে প্রার্থী ঠিক করুক, তার পর দেখা যাবে।