Saturday, November 15, 2025

দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর অসহিষ্ণুতার পরিবেশে উদ্বিগ্ন অমর্ত্য সেন! ব্যাখ্যা দিলেন নোবেলজয়ী

Date:

”ভারতবর্ষ শুধুমাত্র হিন্দুর ভারতবর্ষ হতে পারে না, ভারতবর্ষ শুধুমাত্র মুসলিমের ভারতবর্ষ হতে পারে না। সবাইকে একসঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে। সেটাই ভারতের ঐতিহ্য ও গরিমার সঙ্গে সাদুর্য্যপূর্ণ হবে’। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে প্রশাসনের সামঞ্জস্য থাকা উচিত। বিচার ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ। ক্ষমতার মোহে পড়ে আইনের অপব্যবহার করেও অনেককে আটক করা হয়।” বক্তা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

বিষয়টির আরও ব্যাখ্যা করে অমর্ত্য সেন বলেন, “ভারতে বারবার বলা হয় সহনশীলতার কথা। আমরা অবশ্যই সহনশীল। এটাই আমাদের সংস্কৃতি। কিন্তু তার পাশাপাশি আর একটা কথা বলা হয় না, সেটা হলো আমাদের একসঙ্গে থেকে বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথা। ভারত প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, ইসলামিক, বাহাই, ফারসি—সব ভাষা-সংস্কৃতি থেকেই গ্রহণ করেছে, সমৃদ্ধ হয়েছে। শুধু হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে একে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না, যায় না।”

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে নোবেলজয়ী বলেন, “শাহজাহানের পুত্র দারা শিকো হিন্দুদের উপনিষদ ফারসিতে অনুবাদ করেছিলেন। যা পৌঁছায় জার্মানিতে। এরপর ম্যাক্স মুলার তা থেকে জার্মান অনুবাদ করলেন, এবং পরবর্তীকালে তা ইংরেজিতে অনুবাদ হলো। যার ফলে ভারতের উপনিষদ ছড়িয়ে পড়ল গোটা বিশ্বের দরবারে। ধর্মবর্ণ, দেশ, রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে এই একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টিকে কখনই অস্বীকার করা সম্ভব নয়।” কিন্তু এখন বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে। যা দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী। সব মিলিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অমর্ত্য সেন।

কিন্তু কেন এই উদ্বেগ সঞ্চার হল তাঁর মধ্যে?

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের কথায়, “এত বড় বিপদে বিচার বিভাগ হয়তো কিছু করতে পারবে।” অমর্ত্য তাঁর বক্তৃতায় আরও বলেছেন, এ দেশে গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব দেখা যাচ্ছে। আমলাদের আইনসভার সদস্যেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। যে কোনও মূল্যে ক্ষমতা দখলের জন্য তাঁরা ভোট-রাজনীতিতে মত্ত। এবং সেটাই উদ্বেগের। তাঁর আরও যুক্তি, “গোটা দেশেই ভাঙনতন্ত্র চলছে। বিভাজনের হুমকিকে ভয়ের কারণ আছে। স্কুলপাঠ্য রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কবীর, দাদূ বা তুলসীদাসের পথ থেকেও আমরা দূরে সরে আসছি। এ দেশের সাহিত্য, স্থাপত্য, চিত্রকলা, গানবাজনা, নাচ সবেতেই এই যুক্ত সাধনা। তাজমহল থেকে রবি শঙ্কর, আলি আকবর খানের সৃষ্টি— একই বিষয়! ভারত শুধু হিন্দুদের নয়! সবাইকে নিয়ে চলাই আমাদের ঐতিহ্য।”

নিজের ভাবাবেগ তুলে ধরে নাম না করে বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নুপুর শর্মাকে কটাক্ষ করে নোবেলজয়ী অমর্ত্য বলেন, ”আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসে করেন, আপনি কীসে ভয় পান? আমি বলব, একটি জাতির ভাঙনে আমি ভয় পাই। হিন্দু সংস্কৃতির দেশ নয়, মুসলিমরাও এই ভারতের অংশ। যার প্রতীক তাজমহল। এখন নবীকে আক্রমণ করা হচ্ছে। এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি! এখন দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে কেবল সহিষ্ণুতার কথা বললেই হবে না। হিন্দু, মুসলমান-সহ সব জাতি, ধর্মকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

আরও পড়ুন- মর্মান্তিক, দিঘায় সমুদ্রে স্নানের সময় বাজ পড়ে মৃত্যু দুই পর্যটকের; আহত তিন

 

 

Related articles

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...

জাদুসম্রাটের বাড়িতে বিয়ের আসর! বিজ্ঞাপন দেখে পাত্র পছন্দ মৌবনীর

জিনা বন্দ্যোপাধ্যায় জনে জনে বার্তা রুটি গেল ক্রমে, বিয়ে করছেন মৌবনী শীতের মরশুমে! মেয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পিসি সরকার, সেখান থেকেই পাত্র...
Exit mobile version