জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরায় তৃণমূলের রাজ্য দফতরের উদ্বোধন

ত্রিপুরা তৃণমূল ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মলয় ঘটক ও তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। এছাড়াও ছিলেন ত্রিপুরা তৃণমূলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সুস্মিতা দেব, রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক-সহ নেতৃত্ব

রক্তাক্ত উপনির্বাচন। রাজ্যজুড়ে গেরুয়া সন্ত্রাসের বাতাবরণ। বছর পেরোলেই হাইভোল্টেজ বিধানসভা ভোট। তার আগে ত্রিপুরায় ঘরগোছাতে শুরু করেছে তৃণমূল। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চায় ঘাসফুল শিবির। আজ, সোমবার পুজো-অর্চনা ও জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আগরতলা চিত্তরঞ্জন রোডে ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূলের নতুন সদর কার্যালয়ের উদ্বোধন হল।

ত্রিপুরা তৃণমূল ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যভাবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মলয় ঘটক ও তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। এছাড়াও ছিলেন ত্রিপুরা তৃণমূলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সুস্মিতা দেব, রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক-সহ নেতৃত্ব। রাজ্য সদর দফতরের জাঁকজমক উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।

ত্রিপুরায় ঘাসফুল শিবিরের সংগঠন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি স্থানী ঠিকানার চাহিদা ছিল। যেখানে রাজ্যের সমস্ত জায়গা থেকে আসা কর্মীরা বসতে পারবেন। নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। দলীয় বৈঠক থেকে শুরু করে সাংবাদিক বৈঠক করা যাবে, এমন একটি দলীয় দফতরের খুব প্রয়োজন ছিল। এবার সেই লক্ষ্যপূরণই পূরণ হল।

সম্প্রতি, উপনির্বাচনের প্রচারে ত্রিপুরায় এসে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয়া দলীয় কার্যালয় তৈরির সিদ্ধান্ত জানিয়ে ছিলেন। এবার তার বাস্তবায়ন হল। কারণ, তৃণমূল একইঞ্চিও জমি ছাড়তে চায় না বিজেপিকে।। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাবে তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে প্রতিদিনই দলের সদস্য বাড়ছে। মাঝে মধ্যেই ত্রিপুরা সফরে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এছাড়াও কলকাতা থেকে একাধিক শীর্ষনেতা ত্রিপুরায় যান সংগঠনের কাজে। সাংসদ-মন্ত্রীরাও ত্রিপুরা সফর করেন। কিন্তু স্থায়ী কোনও দফতর না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। সেই সমস্যা মিটল।
নতুন তৃণমূল ভবন পেয়ে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যে আরও উৎসাহিত হবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এদিন ত্রিপুরায় দলীয় কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে তৃণমূল কংগ্রেসের স্টেট ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পার্টি অফিসের উদ্বোধন রাজ্যে দলের একটি নতুন যাত্রার সূচনা করল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন যে, ত্রিপুরা আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। আমরা সেটি অনুসরণ করছি। যতক্ষণ না আমরা রাজ্যে বঙ্গীয় শাসনের মডেল আনতে পারি, আমরা ত্রিপুরার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”

রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক বলেন, “ত্রিপুরায় শুধু তৃণমূল নয়, সাধারণ মানুষও এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিল। গতকাল রাতেও, বিজেপির গুন্ডারা আমাদের পার্টি অফিসের উদ্বোধন বন্ধ করার জন্য বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ত্রিপুরার জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন এবং তাঁরা চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ত্রিপুরাকে অত্যাচারী বিজেপি শাসন থেকে মুক্ত করতে। তাই আমাদের লড়াই ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এবং আমরা আমাদের লক্ষ্যে স্পষ্ট।”

রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় গণতন্ত্র কীভাবে ছিন্নভিন্ন করা হচ্ছে তার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক দেশে, একটি রাজনৈতিক দলের অন্য রাজ্যে তাদের নিজস্ব দলীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে কিছুটা সময় লাগলো। এটি আমাদের প্রচেষ্টার অভাবের কারণে নয় বরং অন্যান্য কারণে হয়েছে। আমরা সব শ্রেণীর মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা পাশে থাকব। এটা তাদের পক্ষে এবং তাদের জন্য লড়াই। আমরা ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বুলেট বা হিংসার মাধ্যমে নয়, গণতন্ত্রের মাধ্যমে লড়ব।

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা মলয় ঘটক বলেন, “এখন থেকে আরও বেশি করে ত্রিপুরার জনগণ তাঁদের অভিযোগ উত্থাপন করার এবং বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রামে সমর্থন চাওয়ার জায়গা পাবে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় একটি পরিবর্তন আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”

আরও পড়ুন- ব্রাত্য-কুণালের কফি হাউসের আড্ডা

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষের কথায়, “সাধারণ মানুষের সমর্থন আমাদেরকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছে। আমাদের এই লড়াই চলবে। কারণ, তৃণমূলের অপর নাম লড়াই, সংগ্রাম।”

উল্লেখ্য, এতদিন পর্যন্ত আগরতলায় একটি হোটেল ভাড়া করে সাংবাদিক বৈঠক করতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। কখনও আবার আগরতলা প্রেসক্লাবে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অন্যদিকে, বনমালীপুরে রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিকের বাড়িতে যে ছোট্ট অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস রয়েছে সেখান থেকে বিভিন্ন সাংগঠনিক বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের প্রদেশ দফতরের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানার খুব প্রয়োজন ছিল। এবার সেই স্বপপুরণ হল ত্রিপুরা তৃণমূলের। উৎসাহিত হলেন কর্মী-সমর্থকরাও।

 

 

 

Previous articleমাত্র ১০ মাস বয়সেই রেলের চাকরি! নেপথ্যে করুণ অধ্যায়
Next articleপ্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি তৃণমূলের