Sunday, August 24, 2025

নয়া সংসদভবনে অশোকস্তম্ভের সিংহগুলি বিকৃত করা হয়েছে, বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের

Date:

নতুন সংসদ ভবনে (Parliament Building) অশোকস্তম্ভের  (Ashok Stambh) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অতিকায় ব্রোঞ্জ নির্মিত স্তম্ভের সিংহগুলিকে বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ  বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের সাফ কথা, ভারতের জাতীয় প্রতীককে অপমান করেছে মোদি সরকার। অশোকস্তম্ভের সিংহ শান্ত, অথচ রাজকীয় মেজাজের নতুন মূর্তি এত হিংস্র কেন? সরব বিরোধীরা। অভিযোগ,জাতীয় প্রতীককেও বদলানোর চেষ্টা বিজেপির।

তৃণমূলের সুরেই  অভিযোগ তুলেছে অন্য বিরোধী দলগুলিও। নতুন সংসদভবনের মাথায় জাতীয় প্রতীক হিসেবে ব্রোঞ্জের যে নতুন অশোকস্তম্ভ বসানো হয়েছে সেখানে  সিংহের প্রতিকৃতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। শুধুমাত্র তাই নয়, সোমবার নতুন সংসদভবনে  অশোকস্তম্ভের  উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অথচ কোনও বিরোধী দলের নেতা এমনকী কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেও ডাক পাননি।

আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন এই নতুন সংসদভবনেই বসার কথা।একদিকে যেমন অভিযোগ উঠছে লোকসভার স্পিকারের মাধ্যমে উদ্বোধন না করিয়ে সংবিধানের লঙ্ঘন করেছেন প্রধানমন্ত্রী, তেমনই অন্যদিকে জাতীয় প্রতীককে বিকৃত করার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের সম্মিলিত তোপের মুখে বিজেপি পাল্টা বলেছে এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যদিও বিরোধী নেতারা বলছেন, ইতিহাস বিকৃতির যে প্রবণতা মোদি জমানায় দেখা যাচ্ছে তারই সর্বশেষ সংযোজন সংসদভবনের জাতীয় প্রতীক। অভিযোগ, ভারতের চিরাচরিত অশোকস্তম্ভের প্রতীকের চেয়ে অনেকটাই আলাদা মোদির উদ্বোধন করা অশোকস্তম্ভ। বিরোধীদের কটাক্ষ, ইতিহাস বদলাতে গিয়ে এবার জাতীয় প্রতীকও বদলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

সংসদভবনের মাথায় যে জাতীয় প্রতীক বসানো হয়েছে তা ব্রোঞ্জের তৈরি। সাড়ে ছ’মিটার উচ্চতার প্রতীকের ওজন সাড়ে ন’হাজার কেজি। সাধারণভাবে অশোকস্তম্ভে যে সিংহমূর্তিগুলির প্রতিকৃতি থাকে তাদের চেহারায় দেখা যায় শান্ত অথচ রাজকীয় মেজাজ। এই রাজকীয় মেজাজকেই অসাধারণ আঙ্গিকে প্রতিফলিত হতে দেখা যায় সিংহমূর্তির অবয়বে। অথচ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদভবনের চূড়ায় যে প্রতীকের আবরণ উন্মোচন করেছেন সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ এবং হিংস্রভাবে দাঁত বের করা সিংহমূর্তি। চিরাচরিত জাতীয় প্রতীকের পাশে বর্তমান ছবিটি রাখলেই স্পষ্ট হচ্ছে বৈপরিত্য।

এই প্রসঙ্গে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার ট্যুইট করে বলেছেন, নতুন সংসদভবনে অশোকস্তম্ভ যা করা হয়েছে তা আমাদের জাতীয় প্রতীকের অবমাননা। রাজকীয় অশোকস্তম্ভের সিংহটি যেখানে শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী সেখানে মোদি জমানার সিংহের চেহারাটি হল রাগে দাঁত বের করা, অপ্রয়োজনীয় আক্রমণাত্মক এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বিকৃতি লজ্জার। অবিলম্বে এর পরিবর্তন দরকার। লোকসভার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাঁর ট্যুইটে অশোকস্তম্ভ দুটির পাশাপাশি ছবি দিয়ে তুলনা করে তীব্র সমালোচনা করেছেন মোদি সরকারের। তৃণমূলের আর এক নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ কীর্তি আজাদ ট্যুইটারে লিখেছেন, অমর জওয়ান জ্যোতি সরিয়ে দেওয়ার এবার জাতীয় প্রতীকে বদল! নিদারুণ লজ্জার।

কংগ্রেস নেতা মণিকম টেগোর বলেছেন, গত ৭৫ বছর ধরে দেশে জাতীয় প্রতীক একইরকম ছিল। হঠাৎ করে সংঘপন্থীরা নয়া প্রতীক নিয়ে এসেছেন। আসল এবং নকলের পার্থক্য স্পষ্ট। রাষ্ট্রীয় জনতা দল জাতীয় প্রতীক বিকৃতির কড়া সমালোচনায় বলেছে, আসল প্রতীকের চেহারায় শান্ত, সুভদ্র মেজাজ আর অমৃত যুগে তৈরি প্রতীকে হিংস্র, নরখাদক প্রবণতার আভাস। যেকোনও প্রতীক মানুষের অভ্যন্তরীণ চিন্তাভাবনা প্রতিফলিত করে। নয়া প্রতীকেও সরকারের মনোভাবই যে প্রতিফলিত তা বোঝাতে চেয়েছে লালুর দল। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেছেন, সংসদ এবং প্রতীক ভারতের জনগণের। কোনও এক ব্যক্তির নয়। সিপিএম বলেছে, ক্ষমতার সাংবিধানিক পৃথকীকরণ। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার মূলে কুঠারাঘাত মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে। সিপিআইএমএল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জাতীয় প্রতীক বিকৃতির নিন্দা করেছেন। একইভাবে সংসদভবনে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় প্রতীক উন্মোচনের সমালোচনা করেছেন সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়েসিও।

 

 

 

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...
Exit mobile version