বিজেপির সেলসম্যান মেরুদণ্ডহীন শুভেন্দু লোভে হিন্দি শিখছে! ফ্রি’তে শিরদাঁড়া দিতে চায় বাংলা পক্ষ

 

গর্গ চট্টোপাধ্যায় (সাধারণ সম্পাদক, বাংলা পক্ষ)

“যে জন বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী,

সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি।”

বাংলার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এখন নিয়মিত হিন্দি শিখছেন, লেখা, পড়া, এমনকি উচ্চারণ। শিখতেই পারেন। তামিল, চীনা, ফরাসি গোছের উন্নত ভাষাও শিখতে পারেন। কিন্তু মাতৃভাষা ছাড়া যে কোন দ্বিতীয় ভাষা মানুষ শেখে দরকারে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারীর কেন হিন্দি শেখার দরকার পড়ছে, এইটা বাংলা ও বাঙালির বোঝা দরকার। আর সেটা বুঝতে বোঝা দরকার বিজেপি দলটির চরিত্র নিয়ে।

শুভেন্দু অধিকারী এই দলে সদ্য যোগ দিয়েছে। এবং সে বুঝে গেছে এখানে পাত্তা পেতে, নজরে পড়তে হিন্দি বলতে হবে। অনেকটা ধেড়ে বয়সে নতুন ইস্কুলে ছোট ক্লাসে ভর্তি হবার হাল শুভেন্দু অধিকারী তাই সে চটপট ডবল প্রমোশন চায়। এবং হিন্দি বলা বিজেপিতে যে ডবল প্রমোশন পাওয়ার একটা রাস্তা, সেটা সে কদিনেই বুঝে গেছে। কিন্তু এতে সে বড় জোর কোম্পানির এমপ্লয়ী অফ দি মান্থ, একটু ইনসেনটি, একটা মেমেন্টো, এইসব পাবে, বোর্ড অফ ডিরেকটর্সে জায়গা পাবেনা। কোন বাঙালি পাবে না। সে তারা যতই শ্যামাপ্রসাদের দল বলে বেড়াক। বিজেপিকে যারা প্রথাগত দল ভাবে, তারা ভুল করে। এটাকে বাংলার বাইরের একটি বহিরাগত বেনিয়া কোম্পানি হিসেবে বুঝলে বাঙালির কাছে বিজেপির কাজকর্ম স্পষ্ট হবে। শুভেন্দু অধিকারী এটা বুঝে গেছে। তাই হিন্দি শিখছে।

অথচ যখন বিজেপিতে যোগ দেয়নি, তৃণমূল ছাড়বে ছাড়বে করছে, সেই দাদার অনুগামী যুগে বা ২-৩ সপ্তাহে হলদিয়া ছেয়ে ফেলা হয়েছিল বাংলা, বাংলার ভূমিপুত্র, ইত্যাদি শুভেন্দু অধিকারী ফ্লেক্সে। পরিকল্পনা ছিল বাঙালি ভোট ধরতে শুভেন্দু অধিকারীর এই আপিল আলাদা দল হিসেবে, সাথে মিশ্র শহরাঞ্চলে বিজেপির বহিরাগতদের একজোট করা এবং উত্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একজোট করা। কিন্তু বেনিয়া কোম্পানি কর্মচারী চায়, পার্টনার না। তাই শুভেন্দু অধিকারী হিন্দি শিখছে। বাংলা ও বাঙালির অধিকারের জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মত লড়ে যাওয়া বাংলা পক্ষকে গালাগাল করছে। কিন্তু এতেও শুভেন্দু কোনদিন এই দলে ইউজ এবং দরকার হলে থ্রো করা যায়, এমন সামগ্রী ছাড়া কিছু হবেনা। কারণ সে বাঙালি। যতই সে আজ ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও সর্বাধিনায়ক সতীশ সামন্তের ঐতিহ্য নিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে শিখুক ভারত-ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধী ও ইংরেজের দালাল আরএসএসকে তেলাতে।

বিজেপি একটি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী দল। অর্থাৎ গুজরাট-রাজস্থানের পুঁজি গোষ্ঠী এবং হরিয়ানা থেকে বিহার বিস্তীর্ণ হিন্দি-উর্দু বলয়ের বিস্ফারিত জনসংখ্যা, এই দুইয়ের স্বার্থরক্ষা করতে অহিন্দি রাজ্যগুলিকে দখল করে সেগুলিকে গুজরাট-রাজস্থান পুঁজির বাজার ও হিন্দি-উর্দু বলয়ের বিস্ফারিত জনসংখ্যার নতুন আবাদভূমিতে পরিণত করা।

এই কাজটি করতে প্রতিটি অহিন্দি রাজ্যে তাদের দরকার স্থানীয় দালাল, কর্মচারী ও সেলসম্যান, ঠিক যেমন একটা বহিরাগত বেনিয়া কোম্পানির পশ্চিমবঙ্গ অফিসে লাগে। এই সব অফিসে দালাল, কর্মচারী, সেলসম্যান সবাই জানে বসেরা কারা এবং তাদের সামনে হিন্দি বলতে হয়, কাছে ঘেঁষতে গেলে বাংলাকে ছোট করে হিন্দি চর্চা করলে চোখে পড়া যায়, প্রমোশন হয়। যদিও বিজয়বর্গী বা মালভিয়া বা যাদব বা কুমারদের যতটা খাস লোক জিতেন তেওয়ারি বা দীনেশ বজাজ হয়ে ওঠে অচিরে, যে ঘনিষ্ঠ সার্কেলে এন্ট্রি পায়, সেটা এই শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, দেবজিৎ সরকাররা পাবে না। হিন্দিতে উপন্যাস লিখে ফেললেও পাবে না, বাংলা ভাষার উপর থুতু ফেললেও পাবে না। কারণ তাদের বাঙালি ঘরে জন্ম। তাদের কাজ বাঙালি জাতির মত শক্তিশালী স্বাভিমানী অহিন্দি জাতির সামনে বিজেপির হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র ঢেকে হিন্দু হিন্দু বলে অহিন্দি জাতির হিন্দুতের বগি হিসেবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের মালিকানাধীন গুজরাট – রাজস্থান – ইউপি – বিহারের ইঞ্জিনের পিছনে জোড়া। ট্রেন যখন চলে, মনে হয় সবাই একসাথে গন্তব্যে যাচ্ছে কিন্তু ইঞ্জিন হল প্রভু ও বগি হল দাস। বগির গায়ে, মুখে, বুকে “হিন্দি হায় হাম” লিখলেও বগিটা ইঞ্জিন হয়ে যাবেনা। সেটা বিজেপি ত্যাগ করা সব আদি বিজেপির বাঙালি কর্মীরা জানে, অনেক ঠেকে শিখে।

দিনের শেষে শুভেন্দু অধিকারী আমার স্বজাতীয়। বাঙালি ঘরে তার জন্ম। তাই তাকে যখন হিন্দি বলে জাতে উঠতে হয় বিজেপির কল্কে পেতে, আমার লজ্জা লাগে, কষ্ট হয়। শুভেন্দু অধিকারী মেরুদন্ড বিকিয়ে দিয়েছে। হয়তো চাপে। অমিত শাহ জানে শুভেন্দু অধিকারীকে কোন জায়গায় চাপ দিলে দিল্লীকে, বিজেপিকে, বহিরাগতদের বাপ বলতে থাকবে। এটা দেখে বাঙালি হিসেবে আমার লজ্জা লাগে। শুভেন্দু অধিকারীকে তাই শিরদাঁড়া উপহার দিতে চায় বাংলা পক্ষ। বাংলা পক্ষ সোজা শিরদাঁড়ার বাঙালির সংগঠন। এই সংগঠনে শিরদাঁড়ার চাষ করা হয়। অনেক আছে আমাদের স্টকে। আমরা একটি শিরদাঁড়া দান করতে চাই শুভেন্দু অধিকারীকে। লাগলে বলবেন। পয়সা লাগবে না। লাগবে স্বজাতির প্রতি ভালোবাসা।

— জয় বাংলা

আরও পড়ুন- ভরসা নেই দলের! রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আগের দিন থেকে হোটেল-বন্দি বিজেপি বিধায়করা

 

 

 

 

Previous articleভরসা নেই দলের! রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আগের দিন থেকে হোটেল-বন্দি বিজেপি বিধায়করা
Next articleএকুশে জুলাইয়ের মাহাত্ম, দলনেত্রীর সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে নতুন গান প্রকাশ তৃণমূল ছাত্রদের