নতুন সাত জেলার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, উচ্ছ্বাস জেলায় জেলায়

নতুন সাত জেলা, জেলায় জেলায় উচ্ছ্বাস

সাতটি নতুন জেলার নাম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমবার। এই নিয়ে জেলায় জেলায় সাড়া পড়ে গিয়েছে। দুর্ভোগ কমবে, সময় বাঁচবে, তাই মানুষজন বেজায় খুশি।

পুরসভা নিয়ে জেলা, কান্দিবাসী বেজায় খুশি

মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুর থেকে একদিকে জঙ্গিপুর মহকুমার ফারাক্কা, অন্যদিকে কান্দি মহকুমার সালার-সহ বেশ কিছু এলাকা দূরবর্তী হওয়ায় মানুষের অনেক সুবিধা হবে বলে ওই জেলাবিন্যাস বলেই জানা যাচ্ছে। কান্দি মহকুমাকে পৃথক জেলা ঘোষণায় খুশি তৃণমূল শিবির। জঙ্গিপুরকে আগেই প্রশাসনিকভাবে আলাদা করা হয়েছিল। এবার কান্দিকেও আলাদা জেলা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। ফলে উপকৃত হতে চলেছেন কান্দির লক্ষ লক্ষ মানুষ। মুর্শিদাবাদ জেলার আটটি পুরসভা। যার মধ্যে জঙ্গিপুর মহকুমায় দুটি এবং কান্দি মহকুমায় একটি। বাকি পাঁচটি পুরসভা নিয়ে বহরমপুর জেলা। ফলে মাত্র একটি পুরসভা নিয়ে আলাদা জেলা ঘোষণা হওয়ায় খুশি কান্দিবাসী। কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, জেলার প্রাচীন শহর কান্দি। অনেক মনীষী, সাহিত্যিকের জন্মস্থান। সেই কান্দিকে আলাদা জেলা করায় মুখ্যমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জেলাভাগে খুশি মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি সামসুজ্জোহা বিশ্বাসও। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমুল সভাপতি পদে ফের বহাল থেকে গেলেন শাওনি সিংহরায়। এদিন জেলা সভাপতির নাম ফের ঘোষণার পর উচ্ছ্বসিত বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল। বিকেলে জেলা সভাপতিকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান জেলা নেতৃত্ব। শাওনি বলেন, আগের মতোই দলকে সংঘবদ্ধ করে এগিয়ে চলবেন।

ঐতিহ্য, পুরাতত্ত্ব নিয়ে বিষ্ণুপুর জেলা

বাঁকুড়া ভেঙে তৈরি হল বিষ্ণুপুর জেলা। ছ মাসের মধ্যেই এটা কার্যকর হবে। রাজ্যে সাতটি জেলা ঘোষিত হল। ব্যতিক্রম বিষ্ণুপুর জেলা। পুরাতত্ত্বের দিক থেকে, ঐতিহ্য শহর হিসাবে বিষ্ণুপুর সারা পৃথিবীর কাছে সমাদৃত। বাঁকুড়া জেলার ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী জেলায় আসতে গেলে বর্ধমানের কাছাকাছি ইন্দাসের আকুই আসতে হয়। সেখান থেকে বাঁকুড়ার দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। কোতুলপুর থেকেও বাঁকুড়ার দূরত্ব অনেক। তাই বিষ্ণুপুরকে জেলা রূপে পেয়ে বিষ্ণুপুর মহকুমার মানুষ খুব খুশি। তাই বিষ্ণুপুরে আজ উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো।

উত্তর ২৪ পরগনায় নতুন জেলা ইছামতী, বসিরহাট

দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তিন ভাগ হচ্ছে। বনগাঁ মহকুমা হবে ইছামতী জেলা। বসিরহাট মহকুমা নিয়ে বসিরহাট জেলা, যার নামকরণ এখনও করা হয়নি, আর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। সেক্ষেত্রে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে থাকছে বারাসাত, ব্যারাকপুর ও বিধাননগর মহকুমা। প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, কীভাবে এবং কোন কোন জায়গা নিয়ে এই তিনটি জেলা হবে সেই নির্দেশ এখনও নবান্ন থেকে আসেনি। তবে এই ভাগের ফলে সাধারণ মানুষ ও আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হবে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেই মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বসিরহাট মহকুমাকে প্রশাসনিক জেলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও আগেই বসিরহাটকে পৃথক স্বাস্থ্য ও পুলিশ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। বারাসাত ও বনগাঁকে পৃথক পুলিশ জেলা ঘোষণার কাজও শুরু হয়েছিল। এবার প্রশাসনিক জেলার স্বীকৃতি দেওয়া হল। বাম জামানায় ২৪ পরগনা ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৈরি হয়েছিল। এবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে তিনটি জেলায় ভাগ করল সরকার। ফলে দেশের সব থেকে বড় জেলার তকমা হারাল উত্তর ২৪ পরগনা। তবে এই ভাঙন সাধারণ মানুষের জন্য ভালই হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ মহল। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বসিরহাট আলাদা জেলা হিসেবে কাজ করার পরিকাঠামো তৈরি। বনগাঁর পরিকাঠামো কাজ শুরু হয়েছে।

সদরে যেতে একদিন আগে বেরোতে হবে না সুন্দরবন

দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভেঙে নতুন জেলা হচ্ছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের ১৩টি ব্লক নিয়ে এই জেলা গঠিত হতে পারে বলে মত জেলা প্রশাসনের। ব্লকগুলি হল কাকদ্বীপ, সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, মথুরাপুর-১ ও ২, জয়নগর-১ ও ২, কুলতলি, ক্যানিং-১ ও ২, বাসন্তী ও গোসাবা। বর্তমান জনসংখ্যা ৬০ লক্ষেরও বেশি। ইতিমধ্যে সুন্দরবন পুলিশ জেলা গঠিত হয়েছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার মধ্যেও সুন্দরবনের বেশ কিছু ব্লক আছে। অসংখ্য নদী, খাঁড়ি ও সাগর নিয়ে সুন্দরবন। পৃথিবীর বৃহত্তম বাদাবনও। ১০২টি দ্বীপ। তার ৪৮টিতে জনবসতি নেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সদর আলিপুর। প্রশাসনিক কাজে জেলা সদরে আসতে সুন্দরবনবাসীকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্যা লাঘবে পুলিশ জেলাকে তিন ভাগে ভাঙেন। এবার প্রশাসনিক জেলা তৈরির ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত সুন্দরবনের মানুষ। জেলাশাসকের দফতর হবে সুন্দরবনেই। প্রশাসনিক কাজে গতি আসবে। কাকদ্বীপের দেবদুলাল পাঁজা জানালেন,‘ সুন্দরবন জেলার দাবি দীর্ঘদিনের। সবদিক দিয়ে এই নতুন জেলার সুবিধা পাবে সাধারণ মানুষ।’ ক্যানিংয়ের জয়দেব দাস জানালেন,‘ এর চেয়ে ভাল খবর আর হতে পারে না। প্রান্তিক দ্বীপ গোসাবা, পাথরপ্রতিমা থেকে মানুষকে জেলা সদরে যেতে একদিন আগে বের হতে হয়। এই সমস্যা আর থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা যুগান্তকারী।’

রানাঘাট জেলা হতেই মিষ্টিমুখে বিজয়োল্লাস

নদিয়া ভেঙে রানাঘাট জেলা হল। ১ আগস্ট, ঘোষণার দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকল। যদিও আগেই পুলিশ জেলা ভাগ হয়েছিল রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলায়। জেলায় দুই পুলিশ সুপার ছিলেন, জেলাভাগের পরেও তাই থাকবে। তবে জেলাশাসক হবেন দুজন। রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমা নিয়ে হবে রানাঘাট জেলা। কৃষ্ণনগর ও তেহট্ট মহকুমা নিয়ে নদিয়া জেলা। রানাঘাটের পাশে বনগাঁ মহকুমা নিয়ে গঠিত হচ্ছে ইছামতী জেলা। রানাঘাট নতুন জেলা হওয়াতে বদলে যাবে রানাঘাট থানার নামও। সেটা হবে কোতোয়ালি থানা। রানাঘাটে নতুন জেলাশাসকের অফিস হবে। মহকুমা হাসপাতালের নামও বদল হবে। এই জেলা থেকে বাদ পড়ে গেল অনেক ঐতিহ্য। যেমন, মায়াপুর মন্দির, পলাশীর প্রান্তর, নবদ্বীপ, মাজদিয়ার শিবনিবাস,বেথুয়ার অভয়ারণ্য ইত্যাদি। থাকল তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও এইমস হাসপাতাল। রানাঘাট হবে জেলার সদর শহর। রানাঘাট জেলা ঘোষণা হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দে মিষ্টিমুখ করতে দেখা যায় আদালত চত্বরে।

আরও পড়ুন- রংবদল! সবুজের পরিবর্তে এবার সাদা বোতলে মিলবে স্প্রাইট

Previous articleরংবদল! সবুজের পরিবর্তে এবার সাদা বোতলে মিলবে স্প্রাইট
Next articleবিপুল ব্যবধানে হলদিয়া টাটা স্টিলের স্থায়ী কর্মী সংগঠনের ভোটে জয় INTTUC-র