সম্পত্তিবৃদ্ধি মামলার গেরোয় ফেঁসে গেলেন বিরোধী নেতারাই

নিজেদের পাতা ফাঁদে এবার নিজেরাই জড়িয়ে গেল বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস। সম্পত্তি বৃদ্ধির মামলায় এবার এই দলগুলির নেতা-নেত্রীদের সম্পত্তিও আদালতের নজরে আসতে চলেছে। ২০১৭ সালে করা এই সংক্রান্ত একটি মামলায় এবার বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের সম্পত্তিও এবার আতসকাঁচের তলায়। কয়েকদিন যাবৎ কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়কে হাতিয়ার করে জনমানসে তৃণমূল কংগ্রেসের ১৯ নেতা-নেত্রীর সম্পত্তি নিয়ে ক্রমাগত সম্মানহানি করে চলেছে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস। আদালত ইডিকে এ-বিষয়ে পার্টি করায় বিজেপি-সিপিএম ও কংগ্রেসের নেতারা গলার শিরা ফুলিয়ে আসরে নেমে পড়েছে ঘোলা জলে মাছ ধরতে। সম্প্রতি ২০ জনের একটি নামের তালিকা জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। যেখানে নাম রয়েছে শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল-সহ একাধিক বিরোধী নেতা-নেত্রীর নাম। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর সম্পত্তি বৃদ্ধির মামলার শুনানিতে এ-বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। এর ফলে নিঃসন্দেহে চাপ বাড়তে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বীরত্ব দেখানো বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের।

গত ৮ অগাস্ট রাজ্যের শাসক শিবিরের বর্তমান ও প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিধায়ক মিলিয়ে ১৯ জনের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্রীয় আর্থিক দুর্নীতি দমনকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই সংক্রান্ত আরেকটি জনস্বার্থ মামলায় একই নির্দেশ দেয় আদালত। রাজ্যের বিরোধী শিবিরের ৩০ জন নেতার সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলাতেও ইডি-কে পক্ষভুক্ত করাতে বলা হয়। এবার সেই সম্পত্তি বৃদ্ধির তালিকায় হাইকোর্টের নজরে আনতে রাজ্যের শাসক-বিরোধী শিবিরের আরও ২০ জনের নাম জমা পড়েছে আদালতে।

কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়া নথি অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছরে এইসব নেতা- নেত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ কারও বেড়েছে ২৪৭% কারও-বা ৩৪১% কিংবা আরও বেশি। স্বভাবতই যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে সম্পত্তি বৃদ্ধির আঙুল তুলছিলেন এবার দেখা যাচ্ছে এঁরা একেকজন সম্পত্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কার্যত নজির সৃষ্টি করেছে। শুধু নিজেদেরই নয়, এই সমস্ত নেতার স্ত্রীদেরও সম্পত্তি বৃদ্ধির পরিমাণ রীতিমতো চোখে পড়ার মতো।
সম্পত্তি বৃদ্ধির এই তালিকায় কে নেই? দিলীপ ঘোষ, মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরি, আব্দুল মান্নান, সুজন চক্রবর্তী, সৌমিত্র খাঁ, মনোজকুমার ওঁরাও, নিশীথ প্রামাণিক, মিহির গোস্বামী, অগ্নিমিত্র পাল, শমীক ভট্টাচার্য, তন্ময় ভট্টাচার্য, শীলভদ্র দত্ত, রাহুল সিনহা, অনুপম হাজরা এবং জিতেন্দ্রকুমার তেওয়ারির নাম।

শিশির অধিকারী : ২০০৬ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪২৩৯.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই একই সময়ের মধ্যে শিশিরের স্ত্রীর স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩৭১.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুভেন্দু অধিকারী : ২০০৬ থেকে ২০২১ এর মধ্যে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ২৯৯.৪৮ শতাংশ বেড়েছে।

সৌমিত্র খান : ২০০৯ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে ৩৫২.৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি।

অধীররঞ্জন চৌধুরী : ২০০৯ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে সম্পত্তি বেড়েছে ৬৭৭.৭৪ শতাংশ।

শীলভদ্র দত্ত : ২০১৬ থেকে ২০২১ এই পাঁচ বছরে সম্পত্তি বেড়েছে ২৬৬৯.৭৮ শতাংশ।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দার জন্য বিরোধীরা যে ধরনের কুৎসায় মেতেছিল এবার তারা নিজেরাই সম্পত্তি মামলায় নিজেরাই হাইকোর্টের আতশ কাঁচের নিচে চলে আসায় রাতের ঘুম উড়েছে বিরোধীদের।

আরও পড়ুন:ভালো আছেন রুশদি, ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হল তাঁকে

 

Previous articleভালো আছেন রুশদি, ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হল তাঁকে
Next articleআজ সন্ধ্যায় পরপর তিন সভায় মুখ্যমন্ত্রী