৭ মউ সাক্ষর মোদি-হাসিনা বৈঠকে, মহাকাশ-পরমাণু গবেষণায় পরস্পরকে সহায়তা

ভারত(India) সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন বাংলাদেশের(Bangladesh) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা(Sekh Hasina)। হায়দরাবাদ হাউসে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে রেল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিচার ব্যবস্থা-সহ ৭ টি মউ সাক্ষরিত হল। বৈঠকের পর এদিন যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।

এদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশকে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সঙ্গী ও বাণিজ্যিক অংশীদার বলে উল্লেখ করেন মোদি। প্রতিদিন দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হচ্ছে বলে জানান তিনি। সবরকম সহযোগিতার আশ্বাসও দেন। পাশাপাশি যে ৭ মউ সাক্ষর হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাংলাদেশের নদী কুশিয়ারার জলবণ্টন চুক্তি। একইসঙ্গে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ঠিক করেছি, তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং পরমাণু গবেষণার ক্ষেত্রে দু’দেশ পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলব।”

অবশ্য এই বৈঠকের আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে দাঁড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছিলেন হাসিনা। তিনি জানান, “বন্ধুত্বের মাধ্যমে যে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব।” সম্ভাব্য আলোচনার বার্তা দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, গরু পাচার, তিস্তা জলবণ্টন-সহ রোহিঙ্গা সমস্যার মতো একাধিক বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। পাশাপাশি আরও একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যার কথা তুলে ধরে হাসিনা জানান, “দারিদ্রই আমাদের মূল সমস্যা। অর্থনৈতিক ভাবে আমরা ভারতের সঙ্গে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই।”

এদিন মোদি-হাসিনা বৈঠকে যে ৭ চুক্তি সম্পন্ন হয় সেগুলি হল

১. সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক ১৫৩ কিউসেক জল প্রত্যাহার বিষয়ে সমঝোতা। বাংলাদেশের পক্ষে এতে সই করেন জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। ভারতের পক্ষে সই করেন জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা পুনরুজ্জীবন বিভাগের সচিব পঙ্কজ কুমার।
২. বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআইআরের মধ্যে একটি সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ। ভারতের পক্ষে সই করেন সিএসআইআরের মহাপরিচালক ড. এন কালাইসেলভি।
৩. বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের ভোপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রাব্বানি এবং ভারতের পক্ষে বিচারপতি এপি সাহি স্বাক্ষর করেন।
৪. ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার রেলওয়ে বোর্ডের মুখ্য নির্বাহী পরিচালক ভি জি ভুমা সই করেন।
৫. বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয় আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে রেলওয়ে বোর্ডের ইডিটি (ট্রাফিক) দীপক কুমার ঝা সমঝোতায় সই করেন।
৬. প্রসার ভারতীর সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ টেলিভিশন। এমওইউতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন এবং ভারতের প্রসার ভারতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মায়াঙ্ক কুমার আগারওয়াল।
৭. মহাকাশ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা চুক্তিতে সই করে বিটিসিএল এবং এনএসআইএল। সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং ভারতের পক্ষে এনএসআইএল চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রাধাকৃষ্ণাণ।

Previous articleধানবাদে ডাকাত-পুলিশ গুলির লড়াই: মৃত ১, ধৃত ২
Next articleকখন মামলা করবেন শুভেন্দু? বিনয়-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে প্রশ্ন কুণালের