Monday, August 25, 2025

বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধারা মেনে জিরাটের মঠ বাড়িতে ৪১৩ বছরের দুর্গাপুজো

Date:

সুমন করাতি, হুগলি

বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে দুর্গাপুজো (Durga Puja) নিয়ে কত অজানা গল্প। একদিকে যখন থিমের বাহার বারোয়ারি পুজোতে, তেমনই ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে অন্যদিকে সাবেকি বাড়ির পুজো। বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধারা মেনে জিরাটের মঠ বাড়িতে আজও দুর্গাপুজো (Durga Puja) পালন করা হয়। স্থানীয়রা বলেন গঙ্গার পশ্চিম তীরের বলাগড় গুপ্তিপাড়ায় (Guptipara) এক সময় টোল ছিল।সেখানে শিক্ষা লাভের জন্য বাংলার বাইরে থেকেও ছাত্ররা আসতেন। সেই সুবাদেই পুঁথি পত্র লেখালেখি হয়েছে বলাগড় ও জিরাটের বিভিন্ন গ্রামে।সেই প্রাচীন পুঁথি গুলি উদ্ধার করার পর জানা যায় যে বৌদ্ধ সংস্কৃতির (Buddhist culture) একটি ধারা জিরাট তথা বলাগড় অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছিল। সেই ধারা বজায় রেখেই ৪১৩ দুর্গাপুজো পালন করছেন এখানকার মানুষ।

এই পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে প্রাচীন পুঁথির উপর কিছুটা নির্ভর করতে হয়। জানা যায় পাটুলি গ্রামে জিরাটের মঠ বাড়িতে বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কাছে ছিল রাঢ়ীয় অবসতী চট্টোপাধ্যায় বংশীয়দের বাস । তাঁদেরই বংশধর মদনমোহন তর্কালঙ্কার জিরাটে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। ঐতিহাসিকরা বলেন মদনমোহনের বাড়ির কাছে প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ ছিল বলে ।সেইজন্য মদনমোহনের বাড়িকে বলা হত মঠ বাড়ি । মঠটি ধ্বংস হলে ১৩০৭ বঙ্গাব্দে মদনমোহনের বংশধরেরা নতুন করে দালান নির্মাণ করেন। এখানে যে দুর্গা মন্দির রয়েছে, সেখানে দুটি শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি লক্ষ্য করা যায়। দেবী দুর্গা এখানে একটু অন্যভাবে অধিষ্ঠাত্রী হন। মায়ের দুই হাত প্রকটে ,আটটি হাত আড়ালে রেখে গড়া হয় প্রতিমা । এই বাড়ির পুজোয় পিটুলির নরমূর্তি বলি দিয়ে যোগিনী পুজোর বিধি রয়েছে। এই মঠ বাড়ির পেছনের দিকে রয়েছে ধর্মরাজ ঠাকুরের মন্দির ।তার পূজারিরা ব্রাহ্মণ নন, বোধক সম্প্রদায়ের।।পরে তার হিন্দু রূপান্তর ঘটে। মঠ বাড়ির তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের বাড়ির পুজো মহাযানী বৌদ্ধ রীতি এখনও মানা হয় । আমাদের বাড়ির নিজস্ব ৪১৩ বছরে পুজো আগের পুঁথি মেনেই করা হয় । এই বিষয়ে অধ্যাপক গবেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বলাগড়ের তেঁতুলিয়া অঞ্চল থেকে সৈকত ভট্টাচার্য্যর উদ্যোগে তাঁর বাড়ি থেকে বেশ কিছু প্রাচীন পুঁথি উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে দুর্গা পুজো কেন্দ্রিক পুঁথির উল্লেখ আছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন যোগিনী পুজো বিধি হয়তবা বৌদ্ধ সংস্কৃতির ক্ষয়িষ্ণু ধারার হিন্দু রূপান্তর। পুঁথিগুলি অধিকাংশটাই তুলট কাগজের ওপর লেখা । কিছু আছে যেগুলো গাছের ছাল থেকে যে ভূর্জপত্র বা বিশেষ কাগজ তৈরি হত, তার ওপর লেখা। সংগৃহীত পুঁথির ভেতর সিংহভাগই হল পুজোর বিধি । গুপ্তিপাড়া, বেহুলা, খামারগাছী, বলাগড়, বাকুলিয়া,ধোবাপাড়ার মতন প্রত্যন্ত গ্রামে লক ডাউন পর্বে পুরোনো বাড়ি গুলি থেকে ৫০ টির মতন পুঁথি এবং প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো চিঠি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

Related articles

মহিলা সংঘের ভোটে বিপুল জয় তৃণমূলের, অন্য সমিতিতে জিতেই নন্দীগ্রামে ‘তাণ্ডব’ বিজেপির!

নন্দীগ্রামের সমবায় নির্বাচনে একদিকে নাটশাল–১ মহিলা সংঘে বিপুল জয় পেল তৃণমূল, অন্যদিকে বিরুলিয়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বোর্ড...

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...
Exit mobile version