বিক্ষোভ দেখাতেই হস্তক্ষেপ নেতৃত্বের, বিরোধীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি ভোট বুঝিয়ে আনতে হবে

যখনই যে ধর্মের উৎসব আসবে আমরা সবাই আছি একদিকে যেমন আমরা মায়ের আরাধনা করছি তেমনই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি।

দুর্গাপুজো শেষ হলেও রাজ্যে এখনও উৎসবের পরিবেশ। এই আবহেই জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে শাসকদলের বিজয়া সম্মিলনী। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদনীপুরের ভগবানপুর ও চন্ডীপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনীতে দলের  মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, পুজো মানে একটা উৎসব । যখনই যে ধর্মের উৎসব আসবে আমরা সবাই আছি একদিকে যেমন আমরা মায়ের আরাধনা করছি তেমনই এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি।

চন্ডীপুরে কুণাল বলেন, কেন্দ্রের দৌলতে গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিনের দাম বাড়ছে আর যারা বয়স্ক মানুষ শুধুমাত্র সঞ্চয়ের উপর চলেন তাদের সুদ কমছে। মানুষের উপর চাপ বাড়ছে আর এর থেকে চোখ ঘোরাতে বিজেপি ধর্মের রাজনীতি করছে। আর এ রাজ্যে উন্নয়ন হচ্ছে। রাস্তা, জল, আলো, বিদ্যুৎ সবক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, দুয়ারে সরকার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০ টা কর্মসূচি। রাজ্যের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে যে কোনও প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়ে আছে  পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পাশে দাঁড়িয়ে আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে দাঁড়িয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস। যতদিন মমতাদি আছে, মমতাদির সরকার আছে ততদিন মানুষের এই অধিকার গুলি থাকবে।

এদিন কুণাল সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন,  যারা বিজেপি করেন সিপিএম করেন সেই পরিবারে বেশি করে যান। সেই ভোট গুলো এবার তৃণমূলে আনতে হবে পরিষেবা দিয়ে জনসংযোগ দিয়ে। তৃণমূল কংগ্রেস ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নতুন কমিটি হচ্ছে। কয়েকজন এসেছিলেন তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি।  নতুন কমিটি হলে যারা বাদ যান তাদের মধ্যে রাগ হয়, এটা স্বাভাবিক । তার সঙ্গে তৃণমূল গেল গেল তৃণমূল উঠে গেল এসবের কোনও সম্পর্ক নেই। কিছু নতুন মুখ, কিছু নতুন দায়িত্ব আসবেই নতুন কমিটিতে। যারা কথা বলতে চেয়েছেন আমি নিজে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কারণ, আমরা গর্বিত আমরা তৃণমূল কর্মী। আমাদের দায়িত্ব এই সুবিধা অসুবিধার কথা নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস দাঁড়িয়েছিল, দাঁড়িয়ে আছে , দাঁড়িয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন কুণাল।

তিনি এদিন স্পষ্ট বলেন , সুবিধা অসুবিধা ক্ষোভের কথা আমরা দলীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছাবো। কিন্তু দিনের শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমাদের মানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাব।সদস্য সমর্থকদের তিনি আহ্বান করে বলেন, চলুন সবাই মিলে লড়াই করি। বিজেপি- সিপিএম -কংগ্রেসের পরিবারের সব ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে আনতে হবে । পরিষেবা দিয়ে , কাজ দিয়ে, উন্নয়নের হিসাব দিয়ে প্রত্যেকটা ভোট তুলে আনতে হবে। বিজেপির মুখের ওপর ঝামা ঘষে দিয়েছে বাংলার মানুষ। সেটা যাতে পঞ্চায়েতেও হয়, লোকসভাতে হয় সেই চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করলাম।

দিল্লি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেছে আর বলেছে ‘আবকি বার দুশো পার’। তখন মানুষ বোঝেননি আসলে দুশো পার বলেছেন পেট্রোলের দাম বাড়াবেন বলে। কী পাচ্ছে না এ রাজ্যের মানুষ। বিনামূল্যে খাদ্য, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য, বিনামূল্যে শিক্ষা পাচ্ছেন মানুষ।তিনি মনে করিয়ে দেন, তৃণমূল দুর্বল হওয়া মানে আপনার অধিকার আপনার হাত থেকে চলে যাওয়া । এত ভাল কাজ হচ্ছে তার মধ্যে কেউ হয়তো ভুল করেছে। সেটা অন্যায়, সেটা আমরাই থামাবো। আইন আইনের পথে চলবে। অন্যায় করলে শাস্তি হবে।

শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, তৃণমূলের জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আর এখন নিজে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়ে দোল খাচ্ছে আর তৃণমূলের পিঠে ছুরি মারার ধান্দা করছে।  ইডি- সিবিআই ডাকছে আর বলছে অমিত শাহ পা বাড়িয়ে দাও তোমার জুতো পালিশ করব ।বিজেপি যখন ত্রিপুরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছে তখন কোনও দোষ নেই, আর তৃণমূল নব্বই শতাংশ ভোট পেলে কেন পাচ্ছে প্রশ্ন? চ্যালেঞ্জ করে বলছি ১00 শতাংশ ভোট নিয়ে এবার জিতব।

পূর্ব মেদনীপুরের ভগবানপুরে কুণাল বলেন, দুর্গাপুজো হিন্দুদের উৎসব । কিন্তু যখন নতুন জামা গায়ে দিয়ে আমরা অঞ্জুলি দিতে হাজির হই , তখন কিন্তু একবারও ভাবি না সেটা কোন ধর্মের মানুষ তৈরি করেছেন । কারণ, হিন্দু না মুসলিম সে কথা বাংলার মানুষ ভাবেনা।কারণ উৎসব সবার । আর সেই কারণেই এবার এই উৎসবের অর্থনীতির বাজার ৫০ হাজার ৫২ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।

এদিন  বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে কুণাল বলেন, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে  তারা বলতো বাংলায় নাকি দুর্গাপুজো হয় না। আর এখন ইউনেস্কো বলছে বাংলার দুর্গাপুজো বিশ্বের অন্যতম সেরা। বাংলার দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন অনুদান দিয়েছেন তা নিয়েও বিতর্ক অনেক। আসলে এই অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী চান এই উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিটা আরও ছড়িয়ে পড়ুক।

আমাদের তো হলভাড়া করে পুজো করতে হয় না।বিজেপি হলভাড়া করে দুর্গাপুজো করতে গেছে। ওরা আবার বলছে বিজয়া সম্মিলনী। ওদের বিসর্জন তো একুশেই হয়ে গেছে। যতবার ভোট আসবে ততবার বিসর্জনের ব্যবস্থা করব।এই সরকার জিএসটি এমনভাবে করেছে যাতে বড়লোকেরা যেগুলো কেনে সেখানে জিএসটি কম, আর আপনি আমি সাধারণ মানুষ যেগুলো কিনি সেই জিনিসগুলোতে জিএসটি বেশি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুড়ির প্যাকেটেও জিএসটি ।

কেন তৃণমূল সরকারকে ভোট দেবেন সে ব্যাখ্যাও দেন। কন্যাশ্রী থেকে রূপশ্রী , স্বাস্থ্যসাথী থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডার, আপনার পরিবারের কতজন কত ভাবে রাজ্য সরকারের এই উন্নয়ন পরিষেবার সুযোগ পাচ্ছেন একবার ভেবে দেখুন। ছাত্র ছাত্রীরা সাইকেল পাচ্ছে, বিনামূল্যে শিক্ষা পাচ্ছে, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিটা মুহূর্তে পরিবারের কেউ না কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে পাশে পাচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেস যেটা বলে সেটা করে।

বামেদের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন , বাম জামানা ছিল লোডশেডিং এর সরকার।  ১৭ জন আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীকে জীবন্ত খুন করেছে এই সিপিএমের কাপালিকরা। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

 

Previous articleদিল্লি হিংসা: পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হয়েছিল মুসলিম বিরোধীতা, মত ৪ প্রাক্তন বিচারপতির
Next articleআর্থিক তছরুপের অভিযোগ! রানা আয়ুবের বিরুদ্ধে চার্জশিট ইডির, পাল্টা কেন্দ্রকে তুলোধনা সাংবাদিকের