বন্ধের পথে ৪৩ বছরের কেন্দ্রীয় সংস্থা! হঠকারী সিদ্ধান্তে প্রশ্নের মুখে রেলমন্ত্রক

কেন্দ্রের সাফ যুক্তি, শুধুমাত্র সরঞ্জাম কেনাকাটি দেখভালের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি পৃথক সংস্থা রেখে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। সরকার আরও জানায়, সিওএফএমওডব্লু এতদিন যে কাজ করত তা এবার থেকে বিভিন্ন জোনাল রেলে কর্মরত আধিকারিকদের দিয়েই করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক।

ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্টেশন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (IRSDC) বন্ধ করার পর এবার ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর মডার্নাইজেশন অফ ওয়ার্কশপ (CFMOW) বন্ধ করে দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক (Union Ministry of Railways)। মঙ্গলবার রেলমন্ত্রকের তরফে একথাই ঘোষণা করা হয়েছে। রেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার কাজ করে সংস্থাটি। দীর্ঘদিনের পুরনো সংস্থাগুলিকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল কেন্দ্র। সেই পথে হেঁটেই এবার বন্ধের মুখে ৪৩ বছরের পুরনো কেন্দ্রীয় সংস্থাটি।

গত বছর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব স্যানালের (Sanjeev Sanyal) সুপারিশ মেনে দীর্ঘ কয়েক দশকের বেশি পুরনো সংস্থাগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ চার দশক ধরে কাজ করছে সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর মর্ডানাইজেশন অফ ওয়ার্কশপ বা সিওএফএমওডব্লু। ১৯৭৯ সালে রেলওয়ের বিভিন্ন উৎপাদন ইউনিট এবং অন্যান্য কর্মশালার আধুনিকীকরণের (Modernization) জন্য সংস্থাটি স্থাপন করা হয়। সংস্থাটির সূচনালগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত ৭,৬৫০ কোটি টাকা মূল্যের ২৪ হাজার ৭০৭ টিরও বেশি মেশিন সংগ্রহের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের বক্তব্য, এই সংস্থা এতটাই দক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য যে, মূলত সংস্থাটি রেলের কাজ করলেও অন্যান্য মন্ত্রকের প্রয়োজনমতো কোনও সরঞ্জাম কেনার সময়ে তাদের অভিজ্ঞ মতামত নেওয়া হত। দিল্লির আইটিও এলাকায় এই সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। মূলত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Mechanical Engeeniering) বিভাগে কর্মরতরা এই সংস্থায় কাজ করতেন। তবে কেন্দ্রের সাফ যুক্তি, শুধুমাত্র সরঞ্জাম কেনাকাটি দেখভালের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি পৃথক সংস্থা রেখে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। সরকার আরও জানায়, সিওএফএমওডব্লু এতদিন যে কাজ করত তা এবার থেকে বিভিন্ন জোনাল রেলে কর্মরত আধিকারিকদের দিয়েই করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রক। রেল সূত্রে খবর, যে পদ্ধতিতে এতদিন সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর মর্ডানাইজেশন অফ ওয়ার্কশপ সরঞ্জাম কিনত, সেই পদ্ধতির বর্তমান সময়ে আর কোনও প্রয়োজন নেই। তবে বিষয়টি সামনে আসার পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিরোধীদের অভিযোগ, এভাবেই একে একে দেশের সমস্ত কিছুকেই বন্ধ করার খেলায় মেতেছে কেন্দ্র। কেন্দ্র যতই বলুক ওই সংস্থায় কর্মরত কর্মীদের রেলের অন্য কোনও বিভাগে কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হচ্ছে ততক্ষণ কিছুই স্পষ্ট হবে না। এভাবে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।

রেলমন্ত্রকের তরফে আরও জানানো হয়েছে, দ্রুত বকেয়া টেন্ডারগুলি (Tender) সংশ্লিষ্ট জোনাল রেলকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া এবার থেকে চলবে। পাশাপাশি সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর মর্ডানাইজেশন অফ ওয়ার্কশপের কর্মী ও আধিকারিকদের বিভিন্ন জোনাল রেলে বদলি করে দেওয়া হবে এবং তাদের যে কার্যালয় ছিল সেটি অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ২০২৩ সালের শেষের দিকে একইভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর রেলওয়ে ইলেকট্রিফিকেশনও (Central Organisation For Railway Electrification)।

Previous articleজনপ্রিয় সংগীত শিল্পী স্বপন সেনগুপ্তর প্রয়াণে শোক প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleবেনজির! কুণালের সাংসদ তহবিলে সম্পূর্ণ তৈরি কোচবিহারের ‘মমতা সেতু’, আপ্লুত স্থানীয়রা