“ওনার মস্তিষ্ক ঠিক নেই”, সিঙ্গুর ইস্যুতে মমতাকে সমর্থন করে “মাস্টারমশাই”-কে খোঁচা দিলেন বেচারাম

শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন, "আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। ওরা জোর করে জমি নিতে গিয়েছিল। আমরা ফিরিয়েছি।"

সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠীর চলে গিয়েছে সিপিএমের জন্য। এমনটাই মন্তব্য করেছেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে এখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সিপিএম থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলি মমতার এমন মন্তব্য মানতে নারাজ। বিরোধীদের পাল্টা বক্তব্য সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠী বিদায় নিয়েছে আন্দোলনের ফলে। যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার বিরোধীদের সুরেই সুর মেলালেন এক সময়ে সেই জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সিঙ্গুরের “মাস্টারমশাই” রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। খুব স্বাভাবিকভাবেই একুশের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এবং হেরে যাওয়া প্রার্থী রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের নেতারাও।

গতকাল বুধবার শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন, “আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। ওরা জোর করে জমি নিতে গিয়েছিল। আমরা ফিরিয়েছি।” প্রায় দেড় দশক আগে রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই সিঙ্গুর পর্ব নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার নতুন এক ব্যাখ্যা দেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান কিছুই না করে যেটা ঘটনা তা উল্লেখ করছি। জমি আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নেতৃত্বে কৃষক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং শিল্পমন্ত্রী ছিলেন নিরুপম সেন। অপর পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। তখন এই রকম ঠিক হয়েছিল যে, স্বেচ্ছায় যত জমি কৃষকরা দিয়েছেন তাতে টাটাগোষ্ঠী শিল্প করবেন। এ নিয়ে চুক্তিও হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা পলিটব্যুরোতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু পলিটব্যুরো সেই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা একটা সংশোধিত প্রস্তাব কৃষকদের দেন। সম্ভবত এই ঘটনাটিকে অবলম্বন করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে চেয়েছেন যে, সিপিএম টাটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং টাটা চলে গিয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবটি আসলে টাটার কাছে যায়নি। কারণ, কোনও পক্ষই কোনও প্রস্তাব ঠিক করতে পারেনি। টাটা চলে গিয়েছে সিঙ্গুর আন্দোলনের ফলেই। টাটার কাছে এই প্রস্তাব না যাওয়ায় তারা কী করে বুঝবে সমঝোতা হয়েছে? ফলে তার প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ কোনও প্রশ্নই আসেনি।”

এরপরই সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক যুক্তি দিয়ে বলার সংযোজন করেন, “সুতরাং আমি বলব, টাটা চলে গিয়েছে আন্দোলনের ফলেই যার নেতৃত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলনের ফলেতেই টাটা চলে গিয়েছে।”

রবীন্দ্রনাথের এমন বক্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন সিঙ্গুরের বর্তমান বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একুশের ভোটে সিঙ্গুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী এই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকেই বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন বেচারাম। এবার “মাস্টারমশাই”কে নিশানা করে বেচারাম বলেন, “উনি যখন আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করছিলেন তখন ওনার মস্তিষ্ক ঠিক ছিল। এখন বয়স হয়েছে, তিনি কোথায় আছেন, কী অবস্থানে আছেন তা নিজেই জানেন না। তাঁর কথা মানুষ বিশ্বাস করে না বলেই সিঙ্গুরের মানুষ তাঁকে পরাজিত করেছে। তাঁর কথার কোনও মূল্য নেই।”

এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে বেচারাম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা ঠিক। কারণ বাংলার মানুষও জানে সিপিএম সিঙ্গুরে কারখানা করার অছিলায় রাজনীতি করছিল। তাদের সত্যিই শিল্প গড়ার মানসিকতা থাকলে গোপালকৃষ্ণ গান্ধী রাজ্যপাল থাকাকালীন রাজভবনে যে চুক্তি হয়েছিল তা মেনে কাজ করত। তাতে সিঙ্গুরে কৃষিও থাকত, শিল্পও থাকত। সিপিএম রাজনীতি করতে এসেছিল।”

Previous articleআমাদের জন্যই জমিরক্ষা আইন আনতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র: সিঙ্গুর ইস্যুতে ফের সরব মমতা
Next articleএবার পিসিবির বিবৃতির পাল্টা দিলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর