‘বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা’, উৎপল সিনহার কলম

প্রতীকী ছবি
উৎপল সিনহা

তমাম উম্র তেরা ইন্তজার হমনে কিয়া
ইস ইন্তজার মে কিস কিসসে প‍্যার হমনে কিয়া।

তলাশ-এ-দোস্ত কো এক উম্র চাহিয়ে এয় দোস্ত
কে এক উম্র তেরা ইন্তজার
হমনে কিয়া।

তেরে খয়াল মে দিল শদমা রহা বরসোঁ
তেরে হুজুর ইসে সোগবার হমনে কিয়া।

ইয়ে তিশনগী হে কে উনসে করিব রহকর ভি
‘হফিজ ‘ ইয়াদ উন্হে বার-বার
হমনে কিয়া।
গীতিকার : হাফিজ হোশিয়ারপুরী
সুরকার ও গায়ক :
গুলাম আলী

সারাটা জীবন তোমার জন‍্য অপেক্ষা করেছি, আর, এই অপেক্ষার অবসরে কতজনকে যে ভালোবেসেছি!
বন্ধুর খোঁজ পেতে লেগে যায় একটা গোটা জীবন, অপেক্ষাও সারাজীবনের।
শুধু তোমার কথা ভেবেই
হৃদকমলে ধুম,
তোমার কথা ভেবেই মেনে নেওয়া বাকি সব তুচ্ছতা।
না পেয়েও পাওয়ার বাসনা এতই গভীর যে আমি শুধুমাত্র তার কথাই ভেবেছি আর ভেবেছি।

এই যে একজনকে পাওয়ার আকাঙ্খায় সারাজীবনের অপেক্ষার মাঝে আরও অনেকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, এর রহস‍্যোদ্ধার খুব সহজ নয়। সম্পর্কের এই রহস‍্যের বহু অভিমুখ, নানান রং, অসংখ্য বিচিত্র পর্দা ও অগণ‍্য দরজা। পাওয়া না পাওয়ার মাঝে যে বিশাল দীর্ঘ শূন্যতা তা পূরণ হয় কী করে?
মিলনে মরা প্রেম বিরহে বেঁচে ওঠে। প্রেম অমর হয় বিচ্ছেদে। চির-বিচ্ছেদজর্জর
মজ্জা।

দেবদাস কী করেছিল মনে আছে তো? পার্বতীকে জীবনে না পাওয়ার মর্মান্তিক বিরহ সইতে না পেরে চন্দ্রমুখীর শরণাপন্ন হয়েছিল। আশ্রয় নিয়েছিল তার কাছে। মানসিক আশ্রয়। কাঙ্ক্ষিতা প্রেমাস্পদকে না পেয়ে এই যে অন্য হৃদয়ের দ্বারস্থ হওয়া এ তো অহরহই ঘটে সংসারে। আধুনিক যুগে যেটাকে বলা হয় ‘ স্টপ গ‍্যাপ ‘ প্রেম। তাব’লে সেটা কি আসল প্রেম? মোটেও নয়। অনেকটা ভালোবাসারই মতো কিন্তু ভালোবাসা নয়। আবার এ কথাও খুবই সত‍্য যে চন্দ্রমুখীদের ছাড়া দেবদাসরা যাবেই বা কোথায়! অথচ এই বিরহে জর্জরিত, রিক্ত ও অবসন্ন প্রেমিকদের বিপন্নতায় আশ্রয়দাত্রীদের কিন্তু কোনো সম্মান নেই সমাজে। তিলমাত্র মর্যাদা নেই জীবনে ও সাহিত্যে। এরাও তো নিজেদের হৃদয়ের কথা বলার জন‍্য ব‍্যাকুল হ’য়ে থাকে কিন্তু দেবদাসেরা নিজেরাই এতটাই বিরহকাতর অবস্থায় চন্দ্রমুখীদের আশ্রয়প্রার্থী হয় যে চন্দ্রমুখীদের মনের কথা মনেই গুমরে মরে। এদের মনের দরজা চিরকাল বন্ধই থেকে যায়।

সে যাই হোক না কেন প্রেমাস্পদের জন্য জীবনভর অপেক্ষারত দিশেহারা প্রেমিকেরা একটু শান্তি ও সামান্য আশ্বাসের সন্ধানে এক আকাশ দহনজ্বালা নিয়ে ক্রমাগত ঘুরতে থাকে প্রেমের অন্ধগলিতে। হাত রাখে চন্দ্রমুখীর হাতে অথচ চন্দ্রমুখীর আঙুলে আঙুল জড়িয়ে ধ‍্যান করতে থাকে স্বপ্ননারী পার্বতীর। দীর্ঘ জীবন, কত দুঃখতাপ। দীর্ঘ যাত্রাপথ। কত বাধাবিঘ্ন,
ঝড়ঝঞ্ঝা। অন্তহীন বিরহ।
প্রখর তপনতাপ। তীব্র দহন।
ভয়াবহ একাকীত্ব। প্রাণঘাতী নিঃসঙ্গতা। গ্রহণগ্রস্ত মন হাঁসফাস করতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে। কে পারে অনন্ত বিরহ সহ‍্য করতে? কোথায় সান্ত্বনা চিরবিচ্ছেদের ?

বিরহ বড়ো ভালো লাগে বলা যায় সাময়িক বিরহের প্রসঙ্গে, যেখানে মিলনের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। কিন্তু স্থায়ী বিরহ তো প্রায় বিচ্ছেদেরই নামান্তর।
কার মিলন চায় বিরহী?

ক‍্যায়সে কাটে রজনী সজনি অব, পিয়া বিনা মোসে রহিয়ো না যায়, ঘরি ঘরি পলপল যুগসি বিতত, উনবিন জিয়া অতহি আকুল।
চাইনা বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।
পল ভরকে লিয়ে কোই হমে প‍্যার করলে, ঝুটা হি সহি।

পিয়া বিনা পিয়া বিনা বাঁশিয়া
বাজে না বাজে না বাজে না।

একটা মুহূর্তকে যেখানে একটা যুগ বলে মনে হয় সেখানে গোটা একটা জীবন ‘পিয়া বিনা ‘ কাটানো কীভাবে সম্ভব? একটা জীবন নয় একটুখানি, দীর্ঘ বিষাদসিন্ধু।
হাজার মুখের ভীড়ে খুঁজে বেড়ানো, তুমি কি আমার বন্ধু?
তার চেয়ে ঢের ভালো মাঝে মাঝে প্রেম হওয়া। বিচ্ছেদের অনন্ত অন্ধকার বুকে নিয়ে সারাজীবন দগ্ধ হওয়া কোনো কাজের কথা নয়। সম্ভাবনার সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে গেলে বেঁচে থাকা অর্থহীন। প্রাণের জন‍্য আলো চাই। সম্ভাবনার আলো। হৃদয়ের জন্য চাই হৃদয়। ভালোবাসার খোলা হাওয়া পাশ্চাত্য থেকে কবে আসবে প্রাচ‍্যে? বিরহীকে সারাটা জীবন একাএকা ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে কেন?

বেঁচে থাকার মানে হোক সম্ভাবনাময় অপেক্ষা। বাঁকহীন একমুখী নির্জন সোজা রাস্তা ছেড়ে জীবন এসে দাঁড়াক চরম ব‍্যস্ত চৌরাস্তার মোড়ে। হোক একাধিক প্রেম। হোক অবৈধ। বৈধতার বিষপানের চেয়ে অবৈধ সুধাপাত্র অনেক বেশি কাঙ্খিত। অপেক্ষা প্রেমময় হয়ে উঠুক। মরচে পড়া ধূসর হৃদয়ে বেজে উঠুক নূপুর।
নবধারাজলের নূপুর।

আরও পড়ুন- রাজ্যের ডেঙ্গি সর্তকর্তা, ৭ জেলায় নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ মুখ্যসচিবের

Previous articleডার্বিতে দেখতে গিয়ে মাঠেই প্রাণ হারালেন লাল-হলুদের এক সমর্থক
Next articleBreakfast news : ব্রেকফাস্ট নিউজ