দলীয় কর্মীকে শারীরিক নির্যাতনে অভিযুক্ত লোকনাথকে দলের সমস্ত পদ থেকে সরালো বিজেপি

বিজেপি নেতা লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মুখোশ খুলে দিয়ে এই খবর সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আনে বিশ্ববাংলা সংবাদ। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় রাজ্য বিজেপির অন্দরে

দলের আইটি সেলের এক কর্মীকে সংগঠনের কাজে সিকিম নিয়ে যাওয়ার নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির লিগ্যাল সেলের ইনচার্জ লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ২৯ বছরের মনীশ বিসসা নামে বিজেপি যুব মোর্চার আইটি ইনচার্জকে সিকিম নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেন লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়। এমনকি হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বিসসা। পাশাপাশি, পোস্তা থানাতেও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে লোকনাথ ও তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই সিআরপিএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে।

বিজেপি নেতা লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মুখোশ খুলে দিয়ে এই খবর সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আনে বিশ্ববাংলা সংবাদ। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় রাজ্য বিজেপির অন্দরে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিগ্যাল সেলের ইনচার্জ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় লোকনাথকে।

ঘটনা প্রসঙ্গে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, “ডোন্ট টাচ মাই বডি। এই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন বিজেপিরই এক নেতা। তা নিয়ে অনেক জলঘোলাও হয়। আবার এখানে যে ঘটনা দেখা যাচ্ছে তা তারই পুনরাবৃত্তি। ঘটনাটি শুনলে রাজনীতিবিদ হিসাবে আমার খুব কষ্ট হয়, দুঃখ হয়। এই নোংরা ঘটনার কাদা ঘাটার আমাদের অভ্যাস নেই।” বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, “পার্টির সঙ্গে কথা বলেছে। সে জানিয়েছে আইন আইনের পথে চলবে। তদন্ত হবে। যতদিন পর্যন্ত সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আসে ততদিন পর্যন্ত ওই দায়িত্বে সে থাকবে না। স্বেচ্ছায় সে এটা পার্টিকে জানিয়েছে।” বিজেপি নেতারা যতই বলুন, লোকনাথ নিজে থেকে সরতে চেয়েছেন, কিন্তু ঘটনা হল তাঁকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে লিখিত অভিযোগে লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়ের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী মনীশ বিসসা। গোটা ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “গত ২৫অক্টোবর রাজ্যের লিগ্যাল সেলের ইনচার্জ লোকনাথ চ্যাটার্জি আমাকে একটি কাজে ওনার সাথে সিকিম যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং আমি ওনার সঙ্গে যাই। কিন্তু সিকিম পৌঁছে আমার মনে হল এখানে আমাকে সাংগঠনিক কাজে নয় বরং ওনার ব্যক্তিগত সেবক হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওখানে পৌঁছানোর পর লোকনাথ চ্যাটার্জি আমাকে ওনার এমন কিছু ব্যক্তিগত কাজ করতে বলেন যা কেউ তার বাঁধা শ্রমিককেও বলতে পারেন না। ওনার মাথা টেপা, শরীর মাসাজ করার মত কাজ করানোর চেষ্টা করেন। এই ধরনের আচরণ কোন সংগঠনের কর্মীর সঙ্গে অশোভনীয় তো বটেই একইসঙ্গে অন্যায় ও অমানবিক। শুধু তাই নয় ওনার প্রস্তাব খারিজ করায় উনি আমার মোবাইল ও সমস্ত জরুরী কাগজপত্র কেড়ে নেন এবং শারীরিক মানসিক নির্যাতন করেন। ওনার সঙ্গে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানের বন্দুক আমার মুখে ঢুকিয়ে মারার জন্য নির্দেশ দেন। গোটা ঘটনার কথা কাউকে জানালে আমাকে এবং আমার পরিবারকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়।”

মনীশের আরও অভিযোগ, “সিকিমে জামা-কাপড় খুলিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে আমার ওপর। আমাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড ভেবে নিয়েছিল উনি। শারীরিকভাবে নির্যাতনে বাধা দিলে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। মুখের মধ্যে বন্দুক ঢুকিয়ে দেয় লোকনাথের নিরাপত্তারক্ষীরা। ঈশ্বরের কৃপায় বেঁচে ফিরেছি। ওনার পরিবারের সামনেই সবকিছু হয়েছে। তাঁরাও ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। ওদেরকেও তাহলে মেরে ফেলতো। উনি মানসিক বিকারগ্রস্ত ভয়ানক একটি মানুষ। পারে না এমন কাজ নেই।” পাশাপাশি ৩১ অক্টোবর সিকিম থেকে শিয়ালদা স্টেশনে ফেরার পর কাগজপত্র ফেরত চাইলে ফের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর আরপিএফের সহায়তায় নিজের প্রয়োজনীয় কাগজ ফেরত নেন এবং চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজে যেতে হয় তাঁকে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গিয়েছিল লোকনাথকে। হেরেছিলেন বিপুল ভোটে। যদিও তারপর তিনি বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। আইনজীবী সেলেরও কনভেনার হন। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় স্বভাববতই অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।