দ্রৌপদীকে নিয়ে অখিলের মন্তব্যের নিন্দায় তৃণমূল, কুণাল মনে করালেন মোদির “ওওও দিদি” সংলাপও!

তৃণমূল ভবন থেকে সাংবাদিক বৈঠক রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে অখিল গিরির মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।

নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে করা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির মন্তব্যকে মান্যতা দিল না তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। আজ, শনিবার তৃণমূলের তরফে একটি টুইট করে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, “ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি, শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমাদের পরম শ্রদ্ধা। আমাদের দলের বিধায়কের করা দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করি এবং স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে অখিল গিরির মন্তব্যের আমরা তীব্র বিরোধিতা করি। নারীর ক্ষমতায়নের যুগে এ ধরনের দুর্ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।”

একইসঙ্গে এদিন তৃণমূল ভবন থেকে সাংবাদিক বৈঠক রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে অখিল গিরির মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “মাননীয়া রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে অখিল গিরির মন্তব্য তৃণমূল কংগ্রেস অনুমোদন করে না। আমরা নিন্দা করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস মহিলাদের সর্বক্ষেত্রে সম্মান দেয়। দেশের সবচেয়ে বেশি মহিলারা তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন পদে রয়েছেন।”

একইসঙ্গে কুণাল ঘোষ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, “অখিল গিরি যে মন্তব্য করেছেন, তা একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু যখন বাংলার মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে ‘ওওও দিদি…’ রাস্তার বলে চ্যাংড়া ছেলেদের মতো, ইভটিজারদের মতো করে বলেন, শুভেন্দু ধর্মে আঘাত করে ‘বেগম’ বলে, তখন ওদের নারী সম্মান কোথায়? সৌমিত্র খান তার বউ দল বদলেছে বলে প্রেস করে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠানোর হুমকি দেয়, তাদের মুখে আবার নারীর সম্মান? ওদেরই দলের সিনিয়র নেতা তথাগত রায় বলেছে বিজেপি নেতাদের প্রসঙ্গেই বলেন কামিনী-কাঞ্চন দিয়ে নাকি দল চলে। তাই বিজেপির মুখে নারীর সম্মানের কথা মানায় না। বিজেপি নাটক করছে। অখিল গিরি যা বলেছেন অন্যায় করেছেন। কিন্তু শুভেন্দুও তো ওর বাবার বয়সী নেতা অখিল গিরিকে
‘কাকের মতো দেখতে’, ‘হাফ-প্যান্ট মন্ত্রী’ বলে।একজন বর্ষীয়ান মানুষকে প্ররোচনা দিয়েছে। এরা গুরুজনদের সম্মান দিতে পারে না, আবার মহিলাদের সম্মান নিয়ে কথা বলছে।”

দলিত রাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করে আসলে আদিবাসীদেরকে ছোট করেছেন অখিল গিরি। বিজেপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, “২০১৭ সালে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেতা-প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিল, দ্রৌপদী মূর্মুকে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা হোক। তখন কোথায় ছিল বিজেপি। আজকের আপনারা দলের থেকে কথা বলছেন। মেকি দরদ দেখাচ্ছেন।”

কুণালের আরও সংযোজন, “তৃণমূল আদিবাদীদের সবচেয় বেশি সম্মান করেন। আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসীদের মর্যাদা দেন। তাই বিজেপি কী বলছে সেটা বড় কথা নয়, মানুষ কী বলছে সেটা বড় কথা। অখিল গিরি অন্যায় করেছেন। কিন্তু আদিবাসী মানুষ জানেন তাঁদের কীভাবে সম্মান দেন স্বীকৃতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার শহরের দুর্গাপুজোর থিম ছিল ‘জঙ্গলকন্যা’। সেই পুজোর ব্র্যান্ড আম্বাসাদার ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। যিনি আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন।
কার্নিভালের দিন নিজে নেমে এসে তাঁদের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই যাঁরা আদিবাসী দরদী হয়েছেন, তাঁরা শুধু রাজনীতি করছেন। তারা তো আদিবাসীদের ধর্মের স্বীকৃতি দিচ্ছে না। সেটা দেবেও না, তাদের হাত থেকে জঙ্গল কেড়ে নেবে, কখনো শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেবে। দুটো একসঙ্গে হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরোদস্তুর আদিবাসীদের পাশে আছেন।”

উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার নন্দীগ্রামে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা স্থানীয় বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে অখিলের বিরুদ্ধে। নন্দীগ্রামে অখিলের ওই মন্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ সামনে এসেছে। সেখানে অখিল গিরিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। তোমার রাষ্ট্রপতিকে কেমন দেখতে বাবা?” বিতর্কের জেরে অখিল গিরি অবশ্য আজ, শনিবারই দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “একমাস আগে থেকে শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন জায়গায় আমার সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। আমি বয়স্ক মানুষ। আমার মনে ক্রোধ জন্মেছিল। রাষ্ট্রপতি মহোদায়াকে আমি কোনও অসম্মান করিনি। তাঁর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। যে কথা আমার মুখ থেকে বেরিয়েছে, তা ক্রোধের বশে বেরিয়ে এসেছে। আমি অনুতপ্ত।”

Previous articleফের বাগানে সঞ্জয় সেন, হেড অফ ইউথ ডেভেলপমেন্ট হিসাবে নিযুক্ত হলেন তিনি
Next articleপুরুষতান্ত্রিক বিচারব্যবস্থা: আইনি ক্ষেত্রে মহিলাদের আরও সুযোগের পক্ষে সওয়াল চন্দ্রচূড়ের