দিঘায় সমুদ্র ভাঙন রুখতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্যোগ, বার্তা সেচমন্ত্রীর

দিঘার মোহনা(Digha estuary) এলাকায় সমুদ্র ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চলেছে রাজ্য সেচ দফতর(Irrigation Department)। বুধবার দিঘার মোহনা এলাকা পরিদর্শনের পর এমনটাই জানালেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক(Partha Bhoumik)।

এলাকার স্থানীয় বিধায়ক(MLA) তথা মন্ত্রী অখিল গিরি(Akhil Giri) এবং তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের(Kunal Ghosh) থেকে ফোনে দিঘা মোহনা উপকূল এলাকার সমুদ্র ভাঙন সমস্যা ও উপকূলবাসীদের দুর্দশার কথা শোনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সরজমিনে এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। এলাকা পরিদর্শনের পর বুধবার দিঘায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পার্থ ভৌমিক বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলেও দিঘা উপকূল এলাকা ধ্বংস হয়ে যাবে না। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে থেকে যাবে। আমরা সেই টেকনিকটাই ব্যবহার করব।” তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে কংক্রিটের সমুদ্রবাঁধ যে একেবারেই সঠিক উপায় নয়, তা এদিন উপকূল এলাকা পরিদর্শনের সময় বারবার উল্লেখ করেন সেচমন্ত্রী। এ নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, “বিশ্ব ব্যাংক সহ সম্প্রতি উপকূলের ভাঙন নিয়ে যতগুলো সমীক্ষা হয়েছে, তাদের কেউই কংক্রিট সমুদ্র বাঁধের পক্ষে নয়। যে কারণে যশ ঘূর্ণিঝড়ে উড়িষ্যার তেমন কিছু হয়নি। অথচ দিঘার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।”

দিঘা আসার আগেই সেচ দপ্তরের বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সমস্যার সমাধানে বিস্তারিত আলোচনা ও বৈঠক করেন মন্ত্রী। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে তাঁদের অসুবিধার কথা শোনে সেচ দফতর। এই কাজে তাড়াহুড়ো না করে, পুরোপুরি পরিকল্পনা করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এগোতে চাইছে সেচ দফতর এদিন তা স্পষ্টভাবে জানান সেচমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা এই উপকূলকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু কী পদ্ধতিতে তা করা হবে, সে নিয়ে কিছুদিন পরে আমাদের টেকনিক্যাল টিম ফের দিঘা পরিদর্শনে আসবে। তাঁরাই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।” এদিন দিঘা মোহনা এলাকা পরিদর্শনের সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও মৎস্যজীবীরা মন্ত্রীর কাছে দিঘা মোহনার ড্রেজিং সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এর ফলে প্রতিবছর কীভাবে মাছ বোঝাই ট্রলার সমুদ্রের মধ্যে উল্টে যায়, কিভাবে অনেক মৎস্যজীবী নিখোঁজ হন বা মৃত্যু ঘটে, সে বিষয়গুলিও তুলে ধরেন স্থানীয়রা। এমন গুরুতর সমস্যা শোনার পর, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এই এলাকায় ড্রেজিং করা হবে বলে এদিন ঘোষণা করেন সেচমন্ত্রী।

তবে এদিন দিঘা মোহনা পরিদর্শনের পর, নাম না করে রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী তথা বর্তমান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তীব্র সমালোচনা করেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তিনি বলেন, “আগে যিনি সেচমন্ত্রী ছিলেন, আমি তাঁর নাম উচ্চারণ করতে চাইছি না। তিনি সেই সময়ে যে কাজগুলো করেছিলেন, তাতে টেকনিক্যাল বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেননি। যদি দিতেন, তাহলে যশে দিঘাকে অত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। আমার মনে হয় আগের সেচমন্ত্রী হঠাৎ চমক দেওয়ার জন্য এসব করেছিলেন।” সেচ মন্ত্রীর এই পরিদর্শনের সময় বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের দল, স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী অখিল গিরি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি, ও মৎস্যজীবী সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সেচ মন্ত্রীর এই উদ্যোগে, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে প্রশাসন সকলেই বেজায় খুশি। কবে থেকে এই কাজ শুরু হয়, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সকলে।

Previous articleলালন মৃ*ত্যু রহস্যে CBI-এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নয় : CID-কে নির্দেশ হাই কোর্টের
Next articleঅভিষেক ম‍‍্যাচেই নজির গড়লেন অর্জুন, ছুঁয়ে ফেললেন বাবা সচিনকে