ভুলি নাই: র*ক্ত-গু*লির দাগ আঁকড়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে ৩২ ধানমন্ডি

জয়িতা মৌলিক, ঢাকা, বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আঁকড়ে সেরা শরীরে র*ক্ত আর গু*লির দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে। এখানেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু জীবিত ছিলেন দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। কারণ সেই সময় তাঁরা বিদেশে ছিলেন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে সেই বাড়ি ফিরে পান তাঁরা। তবে, সেখানে বসবাস না করে, একেবারে সেই অভিশপ্ত ভোররাতে মতোই রেখে সেই বাড়ি এখন হয়েছে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’।

এই যাদুঘরের কিউরেটর আসিবুল ইসলাম শহিদ ‘এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ’কে জানান, ১৯৬১ থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সপরিবারে এখানেই থাকতেন। শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার ছবছর পর তাঁর বড় কন্যা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেও তাঁকে এ বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি হাউজ বিল্ডিংয়ের ঋণ শোধ করে বাড়িটি ফিরে পান। এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই সন্তান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সিদ্ধান্তে ১৯৯৪-র ১৪ অগাস্ট থেকে বাড়িটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।”

কী হয়েছিল ১৯৭৫-র ১৫ অগাস্ট ওই বাড়িতে?

অভিশপ্ত ভোর রাতের নৃশংসতার দাগ পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে সব জায়গায়। দেওয়ালে স্পষ্ট গুলির চিহ্ন। অতর্কিত হামলা হয়। ফলে কোনও সুযোগ পাননি কেউ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে গায়ে গুলি লাগে। সেগুলি ছিটকে যায় দেওয়ালেও। সেইসবের সাক্ষী ৩২ নম্বর ধানমন্ডি। সেদিন বঙ্গবন্ধু-সহ যাঁর যাঁর পরনে যে পোশাক ছিল সেই রক্তাক্ত পোশাক সেভাবেই রাখা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছোটপুত্র শেখ রাসেল তখন একেবারেই বালক। কোল্ড ড্রিঙ্ক খেতে ভালোবাসত সে। দুটো কোল্ড ড্রিঙ্ক আনা হয়েছিল। একটা তার জন্য, আরেকটা তার গৃহশিক্ষকের জন্য। গুলিতে একটা বোতল ফেটে যায়। আর একটা একই ভাবে রাখা রয়েছে টেবিলের উপর। পাশে রয়েছে তার সাইকেল। একে একে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, মেজ পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকু, শেখ জামালের স্ত্রী পারভিন জামাল রোজি।

নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের পরে ১৯৮১-র ১০ জুন পর্যন্ত এই বাড়িটি সামরিক দখলে ছিল। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনও সদস্যকেই এ বাড়িতে ঢুকতে দেননি। এমনকী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে ফিরলেও তাঁকে এই বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাড়ির বাইরের সামনের চত্বরে বসে পরিবারের সদস্যদের স্মরণে তিনি প্রার্থনা করেন।

১৯৯৪ সালের ১৪ অগাস্ট ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। দেখভালের জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। ট্রাস্টিই বাড়িটিকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দেয়।

সেই নৃশংস ঘটনার দুঃখ বহন করে চলেছে ধানমন্ডির বাড়িটি; যেন জীবন্ত ইতিহাস। প্রত্যেকটি ঘর, রান্নাঘর সিঁড়ি, বসার ঘর- সবকিছু একইভাবে রেখে দেওয়ায় মনে হচ্ছে, এইমাত্র যেন সবাই এখানে ছিলেন। দেওয়ালে রয়েছে বিশেষ সময়ের নানা ছবি কিছু তৈলচিত্র- যা বহন করে সেই সময়কার করুণ ইতিহাস।

আরও পড়ুন- সামনের সপ্তাহেই জি-২০ সম্মেলন, অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত মহানগরী

 

Previous articleসামনের সপ্তাহেই জি-২০ সম্মেলন, অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত মহানগরী
Next articleনন্দীগ্রামে সারারাত পার্টি অফিসে কাটিয়ে কাকভোরে শহিদবেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন কুণাল-সহ নেতৃত্বের