Wednesday, December 3, 2025

বীরকন্যার স্মৃতি রক্ষায় অনন্য উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকারের: ‘ইউরোপিয়ান ক্লাব’ হচ্ছে ‘প্রীতিলতা স্মৃতি মিউজিয়াম’

Date:

Share post:

জয়িতা মৌলিক, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

বীরকন্যা প্রীতিলতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে অনন্য পদক্ষেপ বাংলাদেশ সরকারের। শহিদ প্রীতিলতার স্মৃতিতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে গড়ে তোলা হবে প্রীতিলতা মেমোরিয়াল। সেই কাজ করবে বাংলাদেশের রেল কর্তৃপক্ষ। তারপর সেই স্মৃতি মিউজিয়াম তুলে দেওয়া হবে আর্কিওলজিক্যাল কমিটির হাতে। রবিবার চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে ইউরোপিয়ান ক্লাবে গিয়ে এই কথা জানালেন বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রী হাছান মামুদ এমপি।

Dog and Indian Prohibited – পরাধীন ভারতে এই একটি বাক্যই যথেষ্ট ছিল বিপ্লবীদের শিরায় শিরায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলি রেলস্টেশনের কাছে এ ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড়তলির এই ক্লাবের চারদিকে প্রহরী বেষ্টিত ছিল। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা ব্যতীত এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এদেশীয়দের ওই ক্লাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ক্লাবের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘ডগ এন্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড’। সন্ধ্যা থেকেই ইংরেজরা এ ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ-গান ও আনন্দ উল্লাস করত। এটা ছিল তাদের দাম্ভিকতার সিম্বল। ক্লাবের চারদিকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। ক্লাবের বাইরে বোর্ডে লেখা “ভারতীয় ও কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ”। ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না।

১৮ এপ্রিল, ১৯৩০ সালে পরিকল্পনা হল পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের। কিন্তু গুড ফ্রাইডের কারণে সেই পরিকল্পনা বানচাল হয়। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিপ্লবী কল্পনা দত্তের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মাস্টারদা সূর্য সেন। কিন্তু ৭ দিন আগে কল্পনা দত্ত ধরা পড়ায় দায়িত্ব পড়ে প্রীতিলতার উপর।

রাত ১০টা ৪৫। মালকোঁচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবি, মাথায় সাদা পাগড়ি, পায়ে রবার সোলের জুতো করে একেবারে পুরুষের ছদ্মবেশে প্রীতিলতা। ক্লাবের তিনদিক থেকে আক্রমণ শুরু হয়। ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে ওঠে। প্রাণ পাখি খাঁচা ছোড়া হয় সাহেবদের। অভিযান শেষ করে সফলভাবে প্রীতিলতা যখন ইউরোপিয়ান ক্লাব ছাড়ছেন তখন ভিতর থেকে গুলি চালানোর শুরু হয়। গুলি লাগে প্রীতিলতার বুকে। ইংরেজদের হাতে তিনি ধরা দেবেন না। সেই কারণে পটাশিয়াম সায়ানাইড গলায় ঢালেন বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা।

পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব এখনও একইভাবে রয়েছে। তবে সেই অপমানজনক বোর্ড অনেক আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন রয়েছে প্রীতিলতার স্মৃতি ফলক। আর রয়েছে ব্রিটিশ আমলের কাঠের মেঝে। চুনের দেওয়াল। আর বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবি। তবে পুরো জায়গাটাই বেশ মলিন। স্বাধীনতা প্রথম মহিলা শহিদের স্মৃতিতে ইউরোপিয়ান ক্লাবটি সংরক্ষণের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। মন্ত্রী হাছান মামুদ জানান, দ্রুত ক্লাব থেকে স্মৃতি সৌধ বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা করবে বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ। তুলে দেওয়া হবে সর্বসাধারণের জন্য। বাঙালি তরুণীর বীরগাঁথা জীবন্ত হয়ে উঠবে ইউরোপিয়ান ক্লাবের দেওয়ালে দেওয়ালে।

আরও পড়ুন- রাজ্যের মুকুটে নয়া পালক! স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে দেশের মধ্যে শীর্ষে বাংলা

 

 

spot_img

Related articles

এসআইআর আতঙ্কে তুফানগঞ্জে আতঙ্কে আত্মঘাতী গৃহবধূ! হাওড়ায় অসুস্থ বিএলও

এসআইআর সংক্রান্ত চাপে একই দিনে দুটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল রাজ্যে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জে আতঙ্কে আত্মঘাতী হলেন এক গৃহবধূ, অন্যদিকে...

স্বাস্থ্যবন্ধু প্রকল্পে তিন সপ্তাহে পরিষেবা পেলেন এক লক্ষের বেশি মানুষ, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় আরও এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করল স্বাস্থ্যবন্ধু প্রকল্প। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই এই প্রকল্পের শিবিরগুলিতে চিকিৎসা...

বাংলার পুলিশের ডিএসপি পদে যোগ রিচা ঘোষের: নাম লেখালেন দীপ্তির পাশে

নিয়োগ পত্র আগেই পেয়েছিলেন। বুধবার পুলিশের উর্দি পরে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন রিচা ঘোষ। না, এটা ক্রিকেটের জার্সিতে উইকেট...

আদালতের রায়ে বহাল ৩২ হাজার প্রাথমিক নিয়োগ, হাইকোর্ট চত্বরে অকাল হোলিতে মাতলেন শিক্ষকরা

দীর্ঘ দু’ বছর ধরে লড়াই, অনিশ্চয়তা আর সামাজিক উপহাস—সবকিছু কাটিয়ে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা।...