আলিমুদ্দিনের নির্দেশে মোদির মুখ-শুভেন্দুর নাম দিয়ে গণশক্তিতে বিজেপির বিজ্ঞাপন!

দলের মুখপত্র "গণশক্তি"তে ভারতীয় রেলকে সামনে রেখে বাম-বিজেপি আঁতাতের নগ্ন চিত্র। রাজনৈতিক মহলের দাবি, বিজ্ঞাপনের অছিলায় বিপুল অর্থের বিনিময়ে বাম কর্মীদের মধ্যে নিজেদের ভাবধারা প্রচার করছে গেরুয়া শিবির।

রাজ্যজুড়ে যখন রাম-বাম (BJP CPIM Alliance) আঁতাত নিয়ে তুমুল বিতর্ক, ঠিক তখনই ফের সিপিএম-বিজেপির অশুভ বোঝাপড়া প্রকাশ্যে চলে এলো। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিজেপির বিজ্ঞাপন (Advertisement) শুরু করে দিল সিপিএম! দলের মুখপত্র “গণশক্তি”তে (Ganashakti) ভারতীয় রেলকে (Indian Railways) সামনে রেখে বাম-বিজেপি আঁতাতের নগ্ন চিত্র। রাজনৈতিক মহলের দাবি, বিজ্ঞাপনের অছিলায় বিপুল অর্থের বিনিময়ে বাম কর্মীদের মধ্যে নিজেদের ভাবধারা প্রচার করছে গেরুয়া শিবির এবং পুরোটাই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের (Alimuddin Street) মদতে।

আজ সোমবার রাজ্য সিপিএমের মুখপত্র “গণশক্তি”তে ভারতীয় রেলের একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে রানাঘাট-বনগাঁ নতুন ইএমএউ ট্রেনের যাত্রার সূচনার কথা বলা হয়েছে। ওই বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরাট ছবির সঙ্গে রয়েছে তাঁর বার্তা। কেন্দ্রের মোদি সরকারের (Narendra Modi Government) বার্তা “ভারত কীভাবে বদলে যাচ্ছে, কীভাবে সফল হচ্ছে স্বপ্ন, তারই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ভারতীয় রেল”। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞাপনে ফলাও করে নাম ছাপানো হয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর, রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার (Jagannath Sarkar) এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ সারথী চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Sarathi Chattopadhyay)। রেলের বিজ্ঞাপনকে সামনে রেখে রাম-বামেরা মাখামাখি স্পষ্ট।

মুখপাত্র চালাতে গেলে নিশ্চয় অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু বিজ্ঞাপন বা রেভিনিউ জেনারেট (Revenue Generate) করার নামে নিজেদের নীতি-আদর্শকে বিসর্জন দিতে হবে ৩৪ বছর বাংলাকে শাসন করা একটি দলের? মুখ আর মুখশের মধ্যে পার্থক্যটা সেখানেই ধরা পড়েছে। পার্টির মুখপত্র পার্টির প্রচার করবে, কিন্তু শুধুমাত্র টাকার জন্যই কি গণশক্তির পাঠকদের কাছে বিজেপির বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে? প্রশ্ন উঠছে বামেদের অন্দরেও।

বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) সাফাই, “এটা রেলের বিজ্ঞাপন, এখানে রাজনৈতিক রং খোঁজার কোনও কারণ নেই। এমনিতেও রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার আমাদের বিজ্ঞাপন দিতে চায় না। মাঝেমধ্যে এমন দু-একটা বিজ্ঞাপন আসে। এখানে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ ছাড়া বিজ্ঞাপন হয় না। ওদেরও (বিজেপি) মোদির মুখ ছাড়া হয় না। সিপিএম তো কখনও বলেনি যে আমরা রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের বিজ্ঞাপন ছাপব না।”

কিন্তু এভাবে শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়? পালটা, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, “গণশক্তি একটি দলের কাগজ। এটা আর পাঁচটা সংবাদপত্রের মতো নয়। সেখানে নরেন্দ্র মোদির ছবি দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির নেতারা উদ্বোধন করবেন বলে একটা কর্মসূচীর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, তাহলে তো এটাই প্রমাণিত হল যে, টাকার জন্য আমি আমার কমরেডদের কাছে বিজেপিকে প্রোমোট করছি। এটাই কি বিজেপির বিরুদ্ধে সিপিএমের নীতিগত লড়াই!”

উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ‘জাগো বাংলা’ (Jago Bangla) কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কারওরই বিজ্ঞপন গ্রহণ করে না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গত ৭ জানুয়ারি বামেদের সঙ্গে আঁতাঁতের কথা কার্যত স্বীকার করে নেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মেনে নেন, নন্দীগ্রামে বামপন্থীদের একটা অংশের ভোট তিনি পেয়েছেন। আবার ঠিক তার পরদিন সিপিএম নেতা সেই পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাম-রাম আঁতাতকে অস্বীকার করার চেষ্টা করেন, অথচ ওই জেলার সিংহভাগ সমবায় ভোটে বিজেপি-সিপিএম জোট করেছিল। আর এই ঘটনার কয়েক গণশক্তিতে মোদির মুখ আর শুভেন্দুর নাম দিয়ে ফলাও বিজ্ঞাপন কিন্তু অন্য কিছুকেই ইঙ্গিত করছে!

 

 

Previous articleযোগীরাজ্যে প্রকাশ্যে দুষ্কৃ*তী তাণ্ডব! প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়কের নাতিকে পিটিয়ে খু*ন
Next articleপ্রাথমিকে আরও তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করার নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের