জয়িতা মৌলিক, ঢাকা, বাংলাদেশ: “ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় আজ তীব্র যানজট”, “রাজপথের রাজনীতিতে ঢাকায় যানজট”, “রাজধানীতে তীব্র যানজট; ফ্লাইট ধরতে পায়ে হেটে যাচ্ছে মানুষ”- এই সংবাদ শিরোনাম এখন বাংলাদেশের (Bangladesh) সংবাদপত্রে প্রতিদিনই প্রকাশিত। রাস্তায় বেরতো গেলে হাতে সময় নিয়ে বেরতে হয়- একথা আমজনতা জানেন। কিন্তু সেটা কত? ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তার কোনও সীমা নেই। ২০ মিনিটের পথ অফিস টাইম (Office Time) অর্থাৎ সকাল ৮ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পেরোতে সময় লাগতে পারে ১ঘণ্টা ৪০মিনিটও। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার পরিত্রাতা- ‘ওভাই’, ‘পাঠাও’। এই অ্যাপ বাইক পরিষেবাতেই একমাত্র ভরসা করেন বাংলাদেশের মানুষ।
ঢাকার (Dhaka) উত্তরা, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা, কারওয়ান বাজার থেকে কাকলি, হাতিলেক- সব জায়গাতেই একই চিত্র। তীব্র যানজটে আটকে যায় অ্যাম্বুলেন্সও। আলোর সংকেত, সঙ্গে তীব্র হুটার- কিছু দিয়েই লাভ হয় না। কারণ, অন্য গাড়ি সরার জায়গা হয় না।
‘পাঠাও’ পরিষেবা রয়েছে ২০১৭ থেকে। তাদের শুধু বাইক নয়, রয়েছে অ্যাপ ক্যাবও। তবে দিনের ব্যস্ত সময় বাইকের চাহিদাই বেশি। একচেটিয়া প্রায় ৫ বছর কাটানোর পরে, এবার এসেছে ‘ওভাই’ অ্যাপ বাইক পরিষেবাও। দুটি সংস্থাই চলছে রমরমিয়ে। কিন্তু এত যানজটের মধ্যে দিয়েও রমরমিয়ে চলছে এই পরিষেবা! কারণ, এই সব বাইকের চালকরা বেশিরভাগই বড় রাস্তা ধরেন না। যাতায়াত করেন গলি দিয়ে। ফলে, যানজট এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়।
ঢাকায় যানজট ছিল আগেই। কিন্তু লকডাউনের পর গাড়ির বাজারকে চাঙ্গা করতে বেশ ছাড় দেওয়া হয়। ফলে গাড়ি কেনার ধুম পড়ে যায়। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ। একদিকে মেট্রো, অন্য দিকে ওভারব্রিজের নির্মাণ- সব মিলিয়ে রাস্তার অনেকটা অংশ বন্ধ। ফলে সব মিলিয়ে ‘ত্রাহি মধুসূদন’ অবস্থা। সেই ‘মধুসূদন দাদা‘র ভূমিকায় ‘পাঠাও’ বা ‘ওভাই’ পরিষেবা।
তবে, সব মানুষের পক্ষে প্রতিদিন অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে, ক্ষোভ বাড়ছে ট্রাফিক পরিষেবার উপর। ঢাকার মানুষের কথায়, যানজট এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, রাস্তায় বসে বসে কান্না পায়। চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৫ সালের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল ঢাকা শহরে গাড়ির গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২১ কিলোমিটার। আর ২০২২-এর এপ্রিলে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৮ কি.মি.।
যানজট মুক্ত করতে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা চলাচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসন। এমনকী, যান চলাচল সুগম করতে আইনও করা হয়েছে। তবে, বুয়েটের সমীক্ষায় বলছে, প্রধান সড়কে অবৈধ নির্মাণ, জাতীয় সড়কে সঙ্গে গ্রামীণ সড়কের যত্রতত্র যোগাযোগ এই ফলেই গতি কমেছে ঢাকার। এই যানজট নির্বাচনের ইস্যু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।