প্রেসিডেন্সির বন্ধ গেটের বাইরে TMCP-র সরস্বতী পুজো, মহিলা পুরোহিত, “হাতেখড়ি” দিলেন মদন

এদিন সেই পুজোয় পৌছে যান মদন মিত্র। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেই পুজোয় এসেছিলেন গৌতম দেবও, বিধায়ক বিবেক গুপ্তা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে প্রতীকী অঞ্জলি ও হাতেখড়িতেও হাজির ছিলেন মদন মিত্র।

প্রায় দু’শতকের (প্রথমে কলেজ, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথা ভেঙে এবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে (Presidency University) সাড়ম্বরে হল বাগদেবীর আরাধনা (Saraswati Puja)। দেশের অন্যতম এলিট ক্লাস বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে জায়গা করে নেওয়া “ডিরোজিয়ান পন্থী” ভাবধারায় বিশ্বাসী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্সিতে আগে কোনওদিন বাগদেবীর আরাধনা হয়নি। অতীতের সেই ট্র্যাডিশন ভেঙে এই প্রথম এখানে সরস্বতী পুজো! তাই ডিরোজিওকে সম্মান দিয়েই, তাঁর আদর্শকে মাথায় রেখেই হয় পুজো। পুজোর থিম “ধর্মনিরপেক্ষতা”! এবার প্রজাতন্ত্র দিবসে সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja), তাই ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা আলোকিত করে পুজো মণ্ডপ। জাতীয় পতাকার সামনেই বাগদেবীর মূর্তি।

ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের কথা মাথায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সর্বধর্মের বার্তা মণ্ডপ সজ্জায়। শ্রদ্ধা-সম্মান জানাতে ছিল মনীষীদের ছবি, যাঁরা প্রেসিডেন্সির সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন। ডিরোজিও, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ আরও অনেক মনীষীর ছবি শোভা পাচ্ছে মণ্ডপ জুড়ে।

এদিকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজো ঘিরে বিতর্ক চরমে পৌঁছেছিল। ক্যাম্পাসে পুজো করতে চেয়ে রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, পুজোর অনুমতি চেয়ে একাধিকবার চিঠি, ই-মেল করা হয়েছিল ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণকুমার মাইতিকে। প্রতিবারই চিঠিতে “কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড” বলে পুজোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলরন তিনি। যুক্তি খাড়া করে তিনি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্সি ডিরোজিয়ান পন্থায় বিশ্বাসী, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই সেখানে কোনও পুজোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সরস্বতী পুজোর পক্ষে ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশের মত ছিল। তাই অনুমতি না পেয়ে গেটের বাইরে পুজো করলেন তাঁরা।

এদিন সেই পুজোয় পৌছে যান মদন মিত্র। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেই পুজোয় এসেছিলেন গৌতম দেবও, বিধায়ক বিবেক গুপ্তা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে প্রতীকী অঞ্জলি ও হাতেখড়িতেও হাজির ছিলেন মদন মিত্র।

কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক বললেন, “ছাত্রছাত্রীরা মনে করলে এক মিনিটে জোর করে ভিতরে ঢুকে পুজো করতে পারে। কিন্তু আমরা জোর করতে চাই না। কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তা চেয়ে প্রতীকী হাতেখড়ি। আমরা বিদ্যাসাগরকে অপবিত্র করছি। প্রজাতন্ত্র দিবসে যখন চারদিকে দরজা খুলে দেওয়া হচ্ছে, তখন কাপুরুষের মতো দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।” প্রতীকী অঞ্জলি ও হাতেখড়ির পর্ব শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ গেটের সামনেই বসে পড়েন‌ মদন মিত্র, তৃণাঙ্কুররা। এদিন প্রেসিডেন্সির বাইরে দাঁড়িয়ে মদন মিত্র চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গেলেন, পরের বছর ক্যাম্পাসের ভিতরেই পুজো হবে।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর চমকের এখানেই শেষ নয়, নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করলেন মহিলা পুরোহিত! প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রাজন্যা হালদার ছিলেন পুরোহিতের ভূমিকায়। নারী ক্ষমতায়নের বার্তা দিতেই এমন অভিনব ভাবনা পুজোয় উদ্যোগী পড়ুয়াদের। পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্র পড়ে পুষ্পাঞ্জলি দিলেন ছাত্রছাত্রীরা। তুললেন সেলফিও।

Previous articleবড়পর্দায় হার্দিক-ধোনি ম্যাজিক ! জীবনের বিশেষ দিনে সুখবর দিলেন ভারতের অলরাউন্ডার
Next articleসিঙ্গাপুরে INA স্মারকে শ্রদ্ধার্ঘ্য, সাধারণতন্ত্র দিবসে নেতাজি-রাসবিহারীদের স্মরণ কুণালের